অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিয়ে যেভাবে হয় প্রতারণা…

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৫৮

সংবাদের অডিও শুনতে ক্লিক করুন
দেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার স্বপ্ন অনেকের আকাশচুম্বী। বিপুল অংকের টাকার বিনিময়ে হলেও তাদের দরকার ভিসা। তাই অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পাইয়ে দেয়ার নামে চলে প্রলোভন, প্রতারণা। ইন্টারনেটে নানা সাইটে এসবের বিজ্ঞাপনও দেখা যায়। কিন্তু জানেন কী, অস্ট্রেলিয়ার ভিসা নিয়ে কীভাবে প্রতারণা হয়? কোন ভিসা পাইয়ে দেয়ার নামে সবচেয়ে বেশি হয় ঠগবাজি?
অস্ট্রেলিয়ার ভিসা পাইয়ে দেয়ার নামে সবচেয়ে বেশি ঠগবাজি হয় এগ্রিকালচার ভিসার নামে। যাকে কৃষি ভিসাও ডাকা হয়। যদিও এই নামে কোনো সুনির্দিষ্ট ভিসা নেই অস্ট্রেলিয়ায়। তবে পাম স্কিম বা স্কিলড বা ওয়ার্কিং হলিডে ভিসায় গিয়ে দেশটিতে কৃষি কাজের সাথে যুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু দালালের প্রলোভনে পড়ে সেই ভিসা নিতে লাখ লাখ টাকা খরচ করে গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। কিছু অসাধু ট্রাভেল এজেন্সি এগ্রিকালচার নাম দিয়ে এই ভিসা পাইয়ে দিতে সহজ-সরল গ্রামের মানুষকে ঠকাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার এগ্রিকালচার ভিসার শর্ত কী?
অস্ট্রেলিয়ায় সামার মানে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এই সময়ে ফল-ফসল তোলার জন্য কৃষিকাজে কর্মী লাগে। তখন কিছু কিছু দেশের নাগরিকদের সেই ভিসা দেয়া হয়। তার মধ্যে আছে দেশটির আশপাশের নাউরু, ফিজি, ভানুয়াতু ও পলিনেশিয়ান কিছু দ্বীপ দেশ। তাও আবার বছরের ছয় মাসের জন্য এই ভিসা দেয়া হয় কেবল এসব দেশের মানুষকে। সাথে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার নাগরিকরা আবেদন করার সুযোগ পান। উন্নত এসব দেশের নাগরিকদের অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে লাগে কেবল অন অ্যারাইভাল ভিসা। এসব দেশের নাগরিকরা চাইলে এই ভিসায় কৃষিকাজ করতে পারেন অস্ট্রেলিয়ায়।
যেভাবে হয় প্রতারণা:
এই ভিসার অ্যাপ্লিকেশনের সময় দেশে দালালরা প্রায় অনলাইনে ফর্মপূরণের সময় ব্যক্তির নাম, পাসপোর্ট নম্বর ঠিকঠাক পূরণ করলেও দেশের নামে বাংলাদেশ ভিন্ন অন্য দেশের নাম বসিয়ে দেয়। প্রতারকরা সেসব দেশের নামই বসায় যাদের থাকে অস্ট্রেলিয়ার অন অয়ারাইভাল ভিসা। যেমন কানাডা, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ইত্যাদি। ফলে অন অ্যারাইভাল ভিসা ধরিয়ে দেয়া হয় ভিসাপ্রত্যাশীকে। ভিসাটি আসল হলেও তার কার্যকারিতা নাই। কারণ এমন ভিসায় বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিয়ে কোনোভাবেই অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকা যায় না। কেবল বাংলাদেশ নয়, এমন ভিসায় এশিয়ার কোনো দেশের নাগরিকেরই অস্ট্রেলিয়ায় ঢোকার সুযোগ নেই।
অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট কাউসার খান মাইগ্রেশন কনসার্নকে জানান, এটা একটা টেকনিক্যাল প্রতারণা করা হচ্ছে। এই অ্যাপ্লিকেশনের নাম, পাসপোর্ট নাম, সব ঠিক থাকে; শুধু দেশের জায়গায় অন্য দেশ বসানো হয়। কিন্তু তা সিস্টেম বুঝতে পারে না। এই ভিসার নামে যে কেউ মেডিকেলও করায়ে ফেলতে পারে। এটা নিয়েও প্রতারণা হচ্ছে। দালালরা বলে কোনো টাকা লাগবে না, ভিসা হলে টাকা; ইত্যাদি প্রতারণা। মানুষের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা করে নিচ্ছে। কিন্তু আসলে এই ভিসাটা আসলে বাংলাদেশের জন্যই না। এই ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ নাই।
অভিযোগ আছে, এসব ভুয়া ভিসা হাতে ধরিয়ে দিয়ে মানব পাচারের খপ্পরে ফেলা হয় সাধারণ মানুষকে। অস্ট্রেলিয়ায় পৌঁছে দেয়ার নাম করে তাদের নিয়ে যাওয়া হয় ইন্দোনেশিয়ায়। সেখান থেকে নৌকা বা বোটে করে দালালরা অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু দুর্গম এ যাত্রায় প্রাণ হারায় অনেকে। অনিরাপদ এমন পথে অস্ট্রেলিয়ায় না যেতে ও দালালদের বিষয়ে গেল বছর হুঁশিয়ার করেছিল অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস।
কাউসার খান মনে করেন, ইংরেজির দক্ষতার পরীক্ষা, যেমন আইইএলটিএস, পিটিই পরীক্ষা ছাড়া যারাই অস্ট্রেলিয়ার ভিসার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দেবে, তখনই বুঝতে হবে প্রতারণা করা হচ্ছে। কারণ অস্ট্রেলিয়ায় আসতে গেলে ইংরেজির দক্ষতার পরীক্ষা আপনাকে দিতেই হবে। ভিসা পেতে গেলে এই পরীক্ষা আপনাকে দিতেই হবে।
কাউসার খান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ যদি ইংরেজি একটু করে জানত, তাহলে বৈধভাবেই অস্ট্রেলিয়ায় আসতে পারত। কারণ সেই সুযোগ ছিল।
ইমিগ্রেশন বিশেষজ্ঞরা আরো জানান, যেনতেন উপায়ে অস্ট্রেলিয়ার ভিসার চেষ্টা করা, ইন্দোনেশিয়ায় গিয়ে নৌকা করে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা জীবনের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এমন চেষ্টায় কেউ কেউ প্রাণ হারিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ায় বর্ডারে গার্ডদের হাতে ধরা পড়ে অনেককে যেতে হয়েছে জেলে আবার কারো কারো যেতে হয়েছে সুদূর কোনো দ্বীপে নির্জন নির্বাসনে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন নিউজ ডেস্ক