Logo
×

Follow Us

বাংলাদেশ

ভিসার লোভে যুদ্ধের ফাঁদে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৫৭

ভিসার লোভে যুদ্ধের ফাঁদে

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেহেদী হাসানের মতো আরো অনেক বাংলাদেশির গল্প সামনে এসেছে, যারা কাজের জন্য বিদেশে গিয়েছিলেন, শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের মধ্যে পড়েছেন। কেউ কখনো যুদ্ধের কথাই ভাবেননি, আবার অনেকে নিজের ইচ্ছায় যোগ দিয়েছিলেন। তবে পরে তারা বুঝেছেন যুদ্ধ কতটা ভয়ংকর হতে পারে।

মেহেদী হাসান কাজের ভিসা নিয়ে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তার দৈনন্দিন কাজের অংশ হয়ে গেছে যুদ্ধক্ষেত্রে ভিডিও বানানো। ক্যাম্প বা যুদ্ধের সামনের সারি থেকে ধারণ করা ভিডিওগুলোতে যুদ্ধকে ‘বীরত্বপূর্ণ’ দেখানোর প্রচেষ্টা দেখা যায়। তার ফেসবুক পেজে ১ লাখ ১৭ হাজারেরও বেশি অনুসারী রয়েছে।

প্রায় এক বছর আগে রাজশাহী থেকে বন্ধু ইয়াসিনকে নিয়ে রাশিয়ায় গিয়েছিলেন মেহেদী। সেখানে তারা যোগ দেন রুশ সামরিক বাহিনীতে। কিন্তু গত মার্চে মিসাইল হামলায় ইয়াসিনের মৃত্যু হয় আর মেহেদীও মাইন বিস্ফোরণে আহত হন। এরপরও তিনি যুদ্ধক্ষেত্রে পুরনো ভিডিওগুলো নতুনভাবে সাজিয়ে পোস্ট করছেন।

ভিডিওগুলো আধুনিক সোশ্যাল মিডিয়ার কন্টেন্টের মতো ছোট ছোট ক্লিপ, পেছনে মানানসই গান এবং সাহস, বন্ধুত্ব বা যুদ্ধের উদ্দেশ্য তুলে ধরার ক্যাপশন। কিছু ভিডিওতে দেখা যায় বাঙ্কারের ভেতরের জীবন, ধ্বংসস্তূপ, ক্ষতিগ্রস্ত সরঞ্জাম এবং ফিল্ড হাসপাতালের কঠিন বাস্তবতা।

অনলাইনে মেহেদীর ভিডিও নিয়ে জনমত দ্বিধাবিভক্ত। কেউ মুগ্ধ হয়ে তার সাহসের প্রশংসা করেন, আবার অনেকে এটিকে জীবন বাজি রাখার হঠকারিতা হিসেবে দেখেন। অনেক সময় ভিডিওগুলো থেকে স্পনসরশিপ ও অর্থ উপার্জনও হয়। তবে ভ্লগারদের মধ্যে নিজস্ব বিরোধও দেখা যায়; কে কতটা ঝুঁকি নিয়েছে বা সত্যিই যুদ্ধের সামনের সারিতে ছিল, এ নিয়ে তর্ক থাকে।

এছাড়া অর্ণবের মতো অন্যরা যুদ্ধের মধ্যে পড়েছেন, যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উপস্থিত নন। রাশিয়ায় চাকরি বা পড়াশোনার উদ্দেশে গিয়ে তারা অবৈধভাবে সৈনিক হিসেবে যোগ দিচ্ছেন। অর্ণবের পরিবার জানায়, তাকে মাসে প্রায় ৩ লাখ টাকার সমপরিমাণ বেতন দেওয়ার প্রস্তাব ছিল এবং পুরো এক বছরে প্রায় ১ কোটি টাকা পাওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। তবে চুক্তি ভেঙে পালানোর চেষ্টা করলে তাকে জেলে নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের শ্রম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তথ্য দিতে পারছে না। রাশিয়ার দূতাবাসও জানিয়েছে, বাংলাদেশি নাগরিকদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই এবং প্রতিটি কর্মসংস্থান ভিসা নির্দিষ্ট কোম্পানির জন্যই জারি হয়। যারা ভুল বুঝে বা অবৈধভাবে যোগ দিচ্ছেন, তাদের আইনি সুরক্ষা বা দায়ভার এখনো স্পষ্ট নয়।

এই পরিস্থিতি বাংলাদেশি তরুণদের জন্য জটিল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। বিদেশে চাকরি বা উচ্চশিক্ষার লোভে রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়া তাদের জীবনের নিরাপত্তা, আইনি অধিকার এবং ভবিষ্যৎকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।

Logo