বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে ভাষাশিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা চালু করেছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। এই উদ্যোগের ফলে বিদেশগামী শিক্ষার্থী ও প্রশিক্ষণার্থীরা ১ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন।
ঋণের মেয়াদ দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত নির্ধারিত হয়েছে। সুদের হার ১১ শতাংশ, যা সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে। এই ঋণ মূলত জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও রাশিয়ায় ভাষাশিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশ নিতে আগ্রহীদের জন্য প্রযোজ্য। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের যে কোনো শাখা থেকে এই ঋণ নেওয়া যাবে।
ব্যাংকটি সম্প্রতি এই সুবিধা চালু করেছে। এর স্লোগান নির্ধারণ করা হয়েছে 'দক্ষতার মূল্য বিশ্বজুড়ে, ভাষা জানলে সুযোগ বাড়ে’। বর্তমান শ্রমবাজারে উচ্চ আয়ের চাকরি পেতে দক্ষতা অর্জন অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। দেশে প্রতি বছর সাড়ে চার লাখের বেশি গ্র্যাজুয়েট শ্রমবাজারে প্রবেশ করছেন, যাদের অনেকে বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। কিন্তু যথাযথ প্রশিক্ষণ ও ভাষাজ্ঞান না থাকায় তারা শ্রমিক পর্যায়ের কাজেই সীমাবদ্ধ থাকেন।
বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাসরুর জানান, প্রতি বছর প্রায় ১২ লাখ মানুষ বিদেশে যান, যাদের ৯০-৯৫ শতাংশই মাধ্যমিক পাস। তার মতে, নিম্ন দক্ষতার শ্রমিক রপ্তানিতে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া উচিত। বিদেশি ভাষা ও প্রশিক্ষণ থাকলে ভালো মানের চাকরি পাওয়া সম্ভব। কিন্তু অনেকেই অর্থের অভাবে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন না। তাই প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এই ঋণ তাদের জন্য বড় সুযোগ।
এই ঋণ পেতে কিছু যোগ্যতা পূরণ করতে হবে। আবেদনকারীকে স্থানীয় বাসিন্দা হতে হবে। বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ইস্যু করা অফার লেটার থাকতে হবে। গন্তব্য দেশে গ্রহণযোগ্য ভাষাশিক্ষার সনদ থাকতে হবে যেমন জাপানের জন্য এন-৪, দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য টপিক লেভেল-৩। আবেদনকারীর বয়স ৪০ বছরের মধ্যে হতে হবে। ঋণ সুবিধা শুধু সর্বোচ্চ দুই বছর মেয়াদি কোর্সের জন্য প্রযোজ্য।
আবেদনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের মধ্যে রয়েছে সদ্য তোলা তিন কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, অফার লেটার, পাসপোর্ট ও সর্বশেষ একাডেমিক সার্টিফিকেটের ফটোকপি, ভাষাশিক্ষার সনদ। এছাড়া ঋণ পরিশোধে সক্ষম একজন জামিনদারের নাম, ঠিকানা ও প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে। পরিবারের সদস্য বা আত্মীয় জামিনদার হতে পারবেন।
এক থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে কোনো জামানত লাগবে না। শুধু একজন জামিনদারের ব্যক্তিগত গ্যারান্টি ও তার সচল ব্যাংক হিসাবের চেকের তিনটি পাতা জমা দিতে হবে।
তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে ঋণসীমার দ্বিগুণ বাজারমূল্যের স্থাবর সম্পত্তির মূল দলিলসহ জামানত দিতে হবে। সঙ্গে একজন জামিনদারের গ্যারান্টি ও চেকের তিনটি পাতা লাগবে।
পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড মর্টগেজ ও অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তারনামা দলিল করতে হবে, যা ঋণসীমার দ্বিগুণ বাজারমূল্যের স্থাবর সম্পত্তির ভিত্তিতে হবে।
প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক জানিয়েছে, ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়ায় কোনো এজেন্ট নেই। আবেদন করতে হবে সরাসরি ব্যাংকের শাখায় অথবা অনলাইনে। যে কোনো তথ্য বা সহায়তার জন্য হেল্পলাইন নম্বর ১৬২৩৮ চালু রয়েছে।
logo-1-1740906910.png)