ইউরোপজুড়ে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (স্টেম) খাতে দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি বড় ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ২০২৪ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ইউরোপে প্রায় দুই মিলিয়ন স্টেম পেশাজীবীর ঘাটতি রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৫৪ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দক্ষতার অভাবকে সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছে।
সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যাথম্যাটিকস- এই চার বিষয়ের আদ্যোক্ষর মিলিয়ে সংক্ষেপে বলা হচ্ছে স্টেম এডুকেশন। স্টেম শুধু প্রযুক্তিগত দক্ষতা নয়, বরং সৃজনশীলতা, বহুমাত্রিক চিন্তা ও শিল্পকলার সমন্বয়কে গুরুত্ব দেয়। ফিনল্যান্ডের আল্টো মিডিয়া ল্যাব উদাহরণ দিচ্ছে প্রযুক্তি ও শিল্পচর্চা মিলিয়ে শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে আরো সফল হতে পারে।
সবুজ প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও ইমার্সিভ মিডিয়ার মতো খাতগুলো দ্রুত নতুন চাকরি তৈরি করছে। ফলে এমন স্নাতক প্রয়োজন, যারা শিল্প খাতের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের দক্ষতা রূপান্তর করতে সক্ষম। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একা এই গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে না—এখানে নিয়োগদাতা ও নীতিনির্ধারকদেরও সমান ভূমিকা রাখতে হবে।
ওইসিডির ২০২৫ সালের স্কিলস-ফার্স্ট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিল্প খাত এখন কাগজপত্র নয়, বাস্তব দক্ষতা ও বহু-বিষয়ক জ্ঞানকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প ও নীতিনির্ধারকদের যৌথভাবে কাজ করতে হবে, যাতে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি হয়।
২০২৫ সালে ইউরোপীয় কমিশন ‘স্টেম এডুকেশন স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান’ প্রকাশ করেছে এবং একটি উচ্চপর্যায়ের ‘ইউরোপীয় স্টেম এক্সিকিউটিভ প্যানেল’ গঠন করেছে। এতে শিল্প-শিক্ষা প্রতিক্রিয়া, দক্ষতা পূর্বাভাস ও পাঠ্যসূচি আধুনিকায়নের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটি ‘ইউনিয়ন অফ স্কিলস’ ও ‘ইউরোপিয়ান স্কিলস এজেন্ডা’র সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেখানে প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষা, ভোকেশনাল ট্রেনিং ও লাইফলং লার্নিংয়ে বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ চাকরির বিজ্ঞপ্তির বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এআই-সম্পর্কিত চাকরির চাহিদা ২১ শতাংশ বেড়েছে। একই সময়ে এসব চাকরিতে বিশ্ববিদ্যালয় ডিগ্রির শর্ত ১৫ শতাংশ কমেছে। অর্থাৎ বাস্তব দক্ষতা এখন ডিগ্রির ওপর প্রাধান্য পাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এআই-দক্ষ কর্মীরা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীদের চেয়ে বেশি আয় করছেন।
স্টেম-পাইপলাইনকে শক্তিশালী করতে অন্তর্ভুক্তিকে সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। শিল্পের সঙ্গে অংশীদারত্ব শিক্ষার্থীদের পেশাগত নেটওয়ার্ক বাড়ায় এবং পিছিয়ে থাকা গোষ্ঠীর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করে।
ইউরোপে দুই মিলিয়ন স্টেম দক্ষ জনশক্তির ঘাটতি পূরণ করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়, শিল্প ও নীতিনির্ধারকদের গভীর সহযোগিতা অপরিহার্য। বাজারের চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা, সৃজনশীলতা ও শিল্পকলার মেলবন্ধনই ইউরোপের সবুজ ও ডিজিটাল রূপান্তরকে এগিয়ে নেবে।
logo-1-1740906910.png)