বিদেশে নারী অভিবাসী কর্মীদের সংখ্যা গত চার বছরে ধারাবাহিকভাবে কমছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ ও সংস্থাগুলো বলছে, গন্তব্য দেশে অনিরাপদ কাজের পরিবেশ, নির্যাতন এবং সুরক্ষার অভাবই এই পতনের মূল কারণ। দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।
অভিবাসনবিষয়ক বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, অনেক নারী কর্মী শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মুখে পড়েন। কিছু ক্ষেত্রে পাচার ও যৌনশোষণের শিকার হন। আবার অনেকে মৃত্যুবরণ করে দেশে ফেরেন, তবে তাদের মৃত্যুর কারণ নিয়ে সঠিক তদন্ত হয় না। বাংলাদেশি নারী কর্মীদের বড় অংশ যান সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, জর্ডান ও লেবাননে।
বুয়েটের (BMET) সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, বিদেশে কাজে যাওয়ার জন্য নারী কর্মীদের আগ্রহ কমছে। ওভিবাসী কর্মী উন্নয়ন প্রোগ্রামের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফিরতি নারী কর্মীদের ৯৪ শতাংশই নিয়মিত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন। ৪৭ শতাংশ যৌন হয়রানির কথা বলেন। ৯৭ শতাংশ চিকিৎসাসেবা পাননি। এছাড়া ৮০ শতাংশ পর্যাপ্ত খাবার পাননি এবং ৮২ শতাংশকে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত দীর্ঘসময় কাজ করতে হয়েছে।
ওয়েজ আর্নার্স ওয়েলফেয়ার বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ৪১২ নারী কর্মীর মরদেহ দেশে এসেছে। এর মধ্যে ৮৪ জনের মৃত্যু আত্মহত্যা হিসেবে নথিভুক্ত। কিছু ঘটনায় দীর্ঘ নির্যাতনের পর নারীদের ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হলেও মৃত্যু সনদে নির্যাতনের উল্লেখ থাকে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ নারী দক্ষতা ও ভাষাজ্ঞান ছাড়াই গৃহকর্মীর কাজে বিদেশে যান। ফলে তারা নিয়োগকর্তার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে পড়েন, যা নির্যাতনের ঝুঁকি বাড়ায়।
তাদের পরামর্শ, নারী কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর আগে কেয়ারগিভিং, নার্সিং বা অন্যান্য দক্ষতার প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তাতে নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ ও ভালো বেতন সুবিধার কাজে প্রবেশের সুযোগ বাড়বে। পাশাপাশি উন্নত রেসিডেনশিয়াল প্রশিক্ষণ, গন্তব্য দেশের শ্রম আইন ও সংস্কৃতি বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন বাধ্যতামূলক করা উচিত।
গন্তব্য দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোর সক্রিয়তা বাড়ানো, দ্রুত সহায়তার জন্য হটলাইন চালু রাখা এবং নারী কর্মীদের যৌনশোষণে জড়িত চক্রকে আইনের আওতায় আনার ওপরও জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে গন্তব্য দেশগুলোকে নির্যাতনের অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আরো সক্রিয় হতে হবে বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
logo-1-1740906910.png)