রিক্রুটিং নেটওয়ার্কের ফাঁদ: বিদেশে পৌঁছেই শুরু হয় অন্ধকার অধ্যায়
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:৩৯
বিদেশে কাজের স্বপ্নে প্রতিদিন হাজারো মানুষ দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সির কাছে ছুটে যান। কিন্তু সেই স্বপ্নের পেছনে লুকিয়ে থাকে ভয়ংকর প্রতারণার জাল। সময় সংবাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে অন্তত তিনটি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার চিত্র, যারা চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রবাসীদের নিঃস্ব করে দিচ্ছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফাইজুল-সোনিয়া দম্পতি ফেসবুকে সৌদি আরবে চাকরির বিজ্ঞাপন দেখে যোগাযোগ করেন ‘ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি এজেন্সির সঙ্গে। মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকায় ক্লিনারের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। পরিবারের সঞ্চয় ও ধারকর্জ মিলিয়ে টাকা জোগাড় করে ফাইজুল সৌদি পৌঁছান। কিন্তু সেখানে পৌঁছেই শুরু হয় অন্ধকার অধ্যায়, ফাইজুলের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। পরে এজেন্সি আরো টাকা দাবি করে।
ভুক্তভোগী সোনিয়া আক্তার জানান, হোয়াটসঅ্যাপে স্বামীর ছবি পাঠিয়ে চার লাখ টাকা দাবি করা হয়। তিনি স্ক্রিনশট সংরক্ষণ করেছেন। এমনকি এজেন্সির মালিক মো. মোশাহেদ তাকে হুমকি দেন। সময় সংবাদের হাতে পাওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, মোশাহেদ ভিলেনের মতো হাসতে হাসতে বলেন, “দিস ইজ ২০২৫।”
ফাইজুল ছাড়াও আরো অন্তত পাঁচজন একইভাবে প্রতারিত হয়েছেন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই প্রতারণার পেছনে তিন প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশ রয়েছে- ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল, ধানসিঁড়ি ওভারসিজ এবং এসএম এন্টারপ্রাইজ। চুক্তি হয় এক প্রতিষ্ঠানের নামে, টাকা নেওয়া হয় অন্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে, আর ভিসা দেওয়া হয় আরেক প্রতিষ্ঠানের নামে। এভাবে তৈরি হয় নিখুঁত প্রতারণার জাল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল বিএমইটি অনুমোদিত নয়, শুধু বায়রার সদস্য। তবুও তারা সহযোগী প্রতিষ্ঠান ধানসিঁড়ি ওভারসিজের মাধ্যমে শ্রমিক পাঠাচ্ছে। ফেসবুক বিজ্ঞাপন, মেসেঞ্জারে যোগাযোগ, সরাসরি চুক্তি ও টাকা লেনদেনের মাধ্যমে প্রতারণা চালানো হচ্ছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা) জানিয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তারা মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে। মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ভুক্তভোগীরা সরাসরি অভিযোগ করলে সরকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।
আইন অনুযায়ী, শুধু বিএমইটি থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত এজেন্সিই বিদেশে কর্মী পাঠাতে পারে। বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইন, ২০১৩-এর ধারা ৩১ ও ৩৩ অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া কর্মী প্রেরণ, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি বা ভুয়া চুক্তি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আইন প্রয়োগের দুর্বলতা এবং ফেসবুকভিত্তিক প্রচারণার কারণে নতুন নতুন প্রতারণার ঘটনা ঘটছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে।
logo-1-1740906910.png)