ধীরে ধীরে অভিবাসনের দক্ষ বাজারে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৫

বাংলাদেশ থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের হার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, তবে রেমিট্যান্স প্রবাহে উল্টো চিত্র দেখা গেছে। কর্মী পাঠানোর পরিমাণ কমে এলেও দেশে রেমিট্যান্স পাঠানোর হার বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ।
কর্মী পাঠানোর হার ২৭ শতাংশ কমেছে
বিজনেস প্রসেসিং ও মানবসম্পদ গবেষণা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ১০ লাখের কিছু বেশি বাংলাদেশি বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য গেছেন। এই সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ২৭ দশমিক ৪ শতাংশ কম। বিশেষজ্ঞদের মতে, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগ বন্ধ হওয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে চাহিদা কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ।
সবচেয়ে বেশি কর্মী গেছেন সৌদি আরবে, প্রায় ৬ লাখ ৩০ হাজারের বেশি, যা মোট কর্মীর ৬২ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মালয়েশিয়া। যদিও ২০২৩ সালে যেখানে ৩.৫ লাখের বেশি কর্মী গিয়েছিলেন, সেখানে ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৯৩ হাজারে।
অদক্ষ শ্রমিকই সংখ্যাগরিষ্ঠ
রাফিউল ইসলাম নামে এক অভিবাসন বিশ্লেষক জানান, "বাংলাদেশ থেকে পাঠানো অধিকাংশ কর্মীই অদক্ষ বা আধা-দক্ষ, যাদের মূলত নির্মাণ, পরিষেবা ও গৃহকর্মের মতো খাতে নিয়োগ দেওয়া হয়।"
২০২৪ সালের কর্মীদের মধ্যে
- অদক্ষ: ৫৪.২৩%
- আধা-দক্ষ: ১৭.৫৬%
- দক্ষ: ২৩.৬২%
- পেশাজীবী (ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইটি): ৪.৫৯%
নারী কর্মীর সংখ্যা ও প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ বেড়েছে
২০২৪ সালে ৫৪ হাজার ৬৯৬ জন নারী বিদেশে গেছেন, যা মোট অভিবাসনের ৬ শতাংশ। এই নারীরা মূলত সৌদি আরব, জর্ডান ও ওমানে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এছাড়া টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারগুলোতে নারীদের মধ্যে কম্পিউটার, অটোক্যাড ও গ্রাফিক্স ডিজাইনের মতো প্রযুক্তিনির্ভর কোর্সে আগ্রহ বাড়ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
রেমিট্যান্স বেড়েছে ২২ শতাংশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন প্রায় ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২২ শতাংশ বেশি। শুধু অক্টোবর মাসেই রেমিট্যান্স এসেছে ২.৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৮৩ শতাংশ বেশি।
বিশ্লেষকদের মতে, সরকার ঘোষিত ইনসেনটিভ ও হুন্ডির বিরুদ্ধে কড়াকড়ির ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর প্রবণতা বেড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রেমিট্যান্স বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদে টেকসই বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দক্ষতা উন্নয়ন, ভাষা শিক্ষা ও পেশাগত প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
"বিশ্ববাজার এখন দক্ষ ও পেশাদার কর্মীর দিকে ঝুঁকছে। আমাদের কৌশলগত প্রস্তুতি না থাকলে এই সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে," বলেন অভিবাসন গবেষক ড. তামান্না হক।
এমসি ডেস্ক