Logo
×

Follow Us

প্রবাসীর ডায়রি

তোফায়েল আহমেদ

মসলার কারণে হেনস্থা, খালি লাগেজে গেলাম মস্কো

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৩৫

মসলার কারণে হেনস্থা, খালি লাগেজে গেলাম মস্কো

সেবার দেশ থেকে রাশিয়া যাচ্ছি। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ফ্লাইট। পরিবারের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ, বিদায় নেওয়ার পালা শেষ। তাড়াহুড়ো করে সিকিউরিটি চেকিংয়ের জন্য চলে যেতে হলো।

দু’স্তরের নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে আমি তখন ইমিগ্রেশন অফিসারের সামনে। পাসপোর্টের ছবির সাথে আমার চেহারার মিল খুঁজতে বারবার তাকাচ্ছেন মিটমিট; চোখে-মুখে সন্দেহের জাল। নাম, বাবার নাম, কেন রাশিয়া যাচ্ছি? কী করতে যাচ্ছি? সবকিছু জিজ্ঞেস করেও তার স্বস্তি নেই। রাশিয়াতে আমি সত্যিই কোনো ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি কিনা- এবার তিনি সেটার প্রমাণ দেখতে চাইলেন। আমি তাকে রুশ মিনিস্ট্রির ইনভাইটেশন লেটারটা বের করে দেখালাম। রুশ ভাষার লেটার তিনি কিছুই বুঝলেন না। কাজেই বাড়ল অসন্তুষ্টি। অনেকক্ষণ ভেবে-চিন্তে প্রশ্ন করলেন, বাড়ি রাজশাহী অথচ ঢাকা টপকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে কেন যাচ্ছি। আমি অত্যন্ত সততার সাথে জবাব দিলাম, ঢাকা থেকে ফ্লাইট নিলে আমার ৬০ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হতো। এবার আমার কথায় হেসে দিলেন অফিসার। পাসপোর্টটা এগিয়ে দিয়ে বললেন, "আপনার কথা খুব পরিষ্কার। আচ্ছা যান, হ্যাপি জার্নি।"

এখন হাতে থাকা কেবিন ব্যাগ আর ঘাড়ে থাকা ব্যাকপ্যাক স্ক্যান করার পালা। আমি যথারীতি মেশিনের মধ্যে নিজের ব্যাগগুলো দিয়ে হ্যাপি জার্নির অপেক্ষায়। এমন সময় দুজন মহিলা পুলিশ এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, "ওই লাল ব্যাগটা আপনার?" জি, আমার। "একটু আসেন আমাদের সাথে",  বুঝলাম জার্নিটা 'হ্যাপি' হচ্ছে না। 

আমাকে একটা রুমে বসানো হয়েছে। সঙ্গে ওই দুজন মহিলা পুলিশ এবং আরো একজন। ওই তৃতীয় জন সম্ভবত পুলিশের কোনো বড় কর্তা। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার হ্যান্ডব্যাগে আমরা কিছু প্যাকেট জাতীয় জিনিস দেখতে পাচ্ছি, ওগুলো কী?

আমি অত্যন্ত সততার সাথে জবাব দিলাম, ওগুলো মসলা।

কত কেজি মসলা?

আবারো অত্যন্ত সততার সাথে জবাব দিলাম, আট কেজি মসলা।  

আট কেজি মসলা আপনি কেবিন ব্যাগে নিয়েছেন! কেন?

আমি চুপ! কী করে বোঝাই রুশ দেশে তারা খালি সেদ্ধ খায়, এ মসলা আমার হেঁসেলের আগামী আট মাসের স্টক। কর্তা বাবু চেয়ার ছেড়ে উঠে রুমের বাইরে কোথায় যেন গেলেন। একটু পর সঙ্গে করে আরেকজন পুলিশকে নিয়ে এসে আমাকে দেখিয়ে বললেন, এই যে এই ছেলের ব্যাগে ৮ কেজি মসলা। নতুন যিনি এলেন, তিনিও পিট পিট করে কয়েকবার দেখলেন। তারপর আবার কোথায় যেন গেলেন।

আমি বুঝলাম ডালে মসলা নেই, তবে কালো কিছু আছে। কী হচ্ছে, কী হতে চলেছে কিছুই জানি না। এদিকে রাত ৯টায় ফ্লাইট, হাতে সময় খুব বেশি নেই। হঠাৎ চাচা চৌধুরীর মতো মাথা খেলে গেল, পরিচিত একজন পুলিশ অফিসারকে ফোন দিয়ে পুরো বিষয়টা জানালাম। উনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন- "চিন্তা করো না, আমি দেখছি"।

সত্যি সত্যিই চিন্তার অবসান ঘটল। ওই কর্তা বাবু রুমে আবার ফেরত আসলেন। জিজ্ঞেস করলেন, আপনি তোফায়েল আহমেদ?

-জি।

-আপনি আমাকে কিছুই না বলে স্যারকে ফোন করতে গেছেন কেন? আপনার বাসার কেউ আছে বিমানবন্দর এলাকায়? থাকলে একটু ডাকুন।

-কেন?

-দেখুন, আপনি কেবিন ব্যাগে যে এত মসলা নিয়েছেন এটা তো অপরাধ। আমরা সচরাচর কোনো যাত্রীর ব্যাগে অল্প কিছু মসলা পেলে সেগুলো ফেলে দিই। আপনার এত মসলার কী করা উচিত, সেটাই আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলাম। এর মধ্যেই আপনি আবার শুধু শুধু স্যারকে ফোন করে বসেছেন।

-এখন কী করতে হবে? মসলা কেবিন ব্যাগে নেওয়া যাবে না এটা তো আমার জানা ছিল না।

-এখন আপনি আপনার বাসার কাউকে ডেকে মসলাগুলো ফেরত দিয়ে আসেন। আমি আপনাকে বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

আমি আবার এয়ারপোর্ট থেকে বের হলাম। বাবাকে ফোন করে ডেকে সব মসলা ফেরত দিয়ে একটা ফাঁকা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে রাশিয়া রওনা হলাম এবং আমিই একমাত্র মানুষ যে কোনো প্রকার মশলা ছাড়াই মস্কো পৌঁছেছি একটা সম্পূর্ণ ফাঁকা ব্যাগ নিয়ে…

বিঃদ্রঃ কেউ মরে বিল ছেঁচে, কেউ খায় কই! আমি মস্কো পৌঁছানোর কিছুদিন পরেই একটি আট বছরের শিশু ইমিগ্রেশন, পাসপোর্ট এবং বোর্ডিং পাস ছাড়াই বিমানে উঠে যায়। ঘটনাটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের।

Logo