Logo
×

Follow Us

প্রবাসীর ডায়রি

তোফায়েল আহমেদ

মস্কোর মসজিদে ইফতার!

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৯:০৯

মস্কোর মসজিদে ইফতার!

রাশিয়ায় ভোররাতে আর মাত্র ২ মিনিট, আর মাত্র ১ মিনিট, সেহেরির সময় শেষ ইত্যাদি বলে শখানেক মাইক একসাথে গর্জন করে না। তবু এখানকার ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা ঠিকই সময়মতো সেহেরি সেরে ফেলেন। রোজা রাখেন, নামাজ পড়েন, ইফতারও করেন। 

আমি সচরাচর কোনো ইফতার পার্টিতে যাই না। মসজিদেও যাই না ইফতার করতে। কিন্তু আজ ব্যতিক্রম! রাশান মুসলিমদের ইফতার আয়োজন কেমন হয় সেটা দেখার কৌতূহল নিয়ে পৌঁছে গেলাম মস্কোর সেন্ট্রাল মসজিদে। 

বাংলাদেশে হাসপাতাল কম, মসজিদ বেশি। আর মসজিদে মুসল্লির চেয়েও মিসকিনের ঢল আরো বেশি। রাশিয়াতেও তাই। মস্কোকে বলা হয় বিলিয়নিয়ারদের শহর। তবুও এই শহরে যে কত ভিক্ষুক, কত মিসকিন আছে, সেটা মসজিদে না গেলে জানা যেত না। 

মেট্রো "প্রোস্পেক্ট মিরা" থেকে বের হয়ে মসজিদের দিকে হাঁটছি। শুক্রবার, জুমা উপলক্ষে মানুষের ভিড় বেশি। নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার। শুনলাম, ইরান আর তুরস্ক থেকে ধর্মীয় নেতারা এসেছেন। রাস্তায় আপাতত গাড়ি চলাচল বন্ধ। চারদিকে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী। কিন্তু এসবের মধ্যে যে বিষয়টা আমাকে আপ্লুত করল, সেটা হলো ফুটপাতে অসংখ্য মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন নানান রকমের খাবার আর পানীয় বোতল নিয়ে। যে যার সাধ্য মতো যতটুকু সম্ভব খাবার সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন। এই পথে যারাই হাঁটছেন, সবার হাতেই তুলে দিচ্ছেন খাবার। কেউ খেজুর দিচ্ছেন, কেউ কেক দিচ্ছেন, কেউ চকলেট কিংবা বিস্কুট দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ নিজের বাসা থেকে সুপ আর সালাদ বানিয়ে এনেছেন। 

কে মুসলিম, কে অমুসলিম, কে ধনী, কে গরিব- এসব বিবেচনার অবকাশ বা আগ্রহ কারো নেই। ইফতারের সময় ঘনিয়ে আসছে, আপনি মসজিদের দিকে হাঁটছেন, আপনার হাতে খাবারের থলে থাকবেই থাকবে! 

মসজিদে পৌঁছে দেখি এলাহী কারবার! সারি সারি গ্লাস সাজানো রয়েছে। গ্লাসের মধ্যে খেজুর ভেজানো জল। পাশেই রাখা হরেক রকম খাবার। তবে এর সবই কোনো না কোনো মুসল্লি আসার সময় সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন, মসজিদ কর্তৃপক্ষের মূল আয়োজন নামাজের পর। 

মাগরিব শেষে বের হতেই দেখি গেটের সামনে বিরাট লাইন। সবাই লাইনে দাঁড়িয়েছেন খাবার নেওয়ার জন্য। মসজিদের পক্ষ থেকে এখন দ্বিতীয় দফায় ভারী খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। 

আমিও লাইনে দাঁড়ালাম। শুরুতেই হাতে দেওয়া হলো কিছু টিস্যু আর চামচ। এরপর আরেকটু এগোতেই দেওয়া হলো প্লব (বিরিয়ানির মতো কিন্তু বিরিয়ানি নয়), রুটি, সালাদ। এরপর কিছু ফল, সুপ, পানি আর দুধ, সাথে খেজুর। 

খাবারের পরিমাণ এত বেশি যে একজন মানুষের পক্ষে খেয়ে শেষ করা সম্ভব নয়। তবু কেউ অপচয় করছেন না, নষ্ট করছেন না; হয় সঙ্গে করে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছেন নইলে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি ভিক্ষুক তো আছেই!

খাবারের বাহার দেখে নয়, রাশানদের সবাই মিলে ভাগ করে খাওয়ার সামাজিক রীতি দেখেই আমি মুগ্ধ হয়েছি। 

এই রীতি সামাজিকই বটে, ধর্মীয় নয়। ধর্মকে পুঁজি করে ইফতার বাণিজ্য এখানে চলে না! 

বিঃদ্রঃ বাংলাদেশে আমি এ রকম অনেক অঞ্চলে গেছি, যেখানে কোনো হাসপাতাল নেই, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নেই। কিন্তু আমি এ রকম কোনো এলাকা দেখিনি যেখানে কোনো মসজিদ নেই। মসজিদ যদি হতো অনাহারীর আহার কেন্দ্র, তাহলে অন্তত বাংলাদেশে কেউ ক্ষুধার জ্বালায় মরত না! অথচ দেশে চেয়ে চেয়ে পয়সা তোলা হয় এসি লাগিয়ে, শোভা বাড়িয়ে সোয়াব কামানোর আশায়।

পুনশ্চ: লেখাটি পড়ে একজন শ্রদ্ধেয় বড় ভাই ফোন করেছিলেন। তিনি বর্তমানে রাশিয়ার একজন নাগরিক। তিনি জানালেন, মসজিদের বাইরের ভিক্ষুকগুলোর কেউ রাশিয়ান নন। তারা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে এখন মস্কোতে উদ্বাস্তু।

Logo