গুজবের খবরে দুশ্চিন্তা বাড়ে প্রবাসীদের
সাইফুল ইসলাম তালুকদার, সংযুক্ত আরব আমিরাত
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:৩০

সম্প্রতি বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) বাংলাদেশসহ আরো ৯টি দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রদান বন্ধ রেখেছে। সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই দেশের মানুষের মধ্যে যেমন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তেমনি প্রবাসী বাংলাদেশিরাও পড়েছেন চরম দুশ্চিন্তায়।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই খবরের উৎস কী? আমিরাত সরকারের পক্ষ থেকে কি সত্যিই এমন কোনো সিদ্ধান্ত এসেছে? আমার অনুসন্ধান বলছে না, এমন কোনো ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবরের সত্যতা পাওয়া যায়নি।
আমিরাতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো প্রজ্ঞাপন বা বিবৃতি দেয়নি। এমনকি দেশটির প্রধান দুই ইংরেজি দৈনিক গালফ নিউজ ও খালিজ টাইমস, যারা সাধারণত এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ খবর দ্রুত প্রকাশ করে থাকে, তারাও কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ফলে স্পষ্ট, দেশে যে খবর ছড়িয়েছে, তা সরকারি সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে নয়, বরং একটি ভিত্তিহীন গুজব।
আমিরাতে বর্তমানে কমপক্ষে প্রায় ১২ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। ভিসা বন্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ কোনো সিদ্ধান্ত এলে, তা এখানে বসবাসকারী প্রবাসীদের মাধ্যমে কিংবা স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রথমেই ছড়িয়ে পড়ত। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই ঘটেনি।
এই প্রেক্ষিতে আমি কথা বলেছি আরেক প্রবাসী সাংবাদিক কেরামত উল্লাহ বিপ্লবের সঙ্গে। তিনি বলেন, "আমিরাত সরকার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমরা নিজেরাও প্রতিদিন স্থানীয় প্রশাসন ও সংবাদমাধ্যম পর্যবেক্ষণ করি। এই খবরটি কোথা থেকে এলো, তা আমাদের বোধগম্য নয়।"
তিনি আরো যোগ করেন, "এই ধরনের মিথ্যা খবর প্রবাসীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তোলে। পরিবারে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, চাকরি বা রিক্রুটমেন্ট প্রক্রিয়ায় ধস নামে।"
তাই প্রশ্ন থেকে যায় এত বড় গুজব কারা ছড়াল? কী উদ্দেশ্যে? যাচাই না করেই কেন দেশের প্রায় সব গণমাধ্যম একই খবর পরিবেশন করল?
আজকের ডিজিটাল যুগে একটি ভুল তথ্য মুহূর্তেই লাখো মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু সেই তথ্যের প্রভাব কত ভয়াবহ হতে পারে, তা অনেকেই অনুধাবন করেন না। বিশেষ করে প্রবাসীদের মতো সংবেদনশীল একটি শ্রেণির ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। কারণ সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাস করেন কমপক্ষে দশ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশি। এমন মিথ্যা সংবাদে প্রভাব পড়ে এই সব প্রবাসী বাংলাদেশি দৈনন্দিন কাজ-কর্মে, মনোযোগে, মন-মানসিকতায়।
আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ জানিয়েছেন, নতুন করে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয়নি সংযুক্ত আরব আমিরাত। আমিরাতে সরকারি ওয়েবসাইটেও ভিসা সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। আমরা অফিসিয়ালি দূতাবাস থেকে অথবা দুবাই বাংলাদেশ কনস্যুলেট থেকে ইউএই সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো যোগাযোগ পাইনি। আমরা এখন পর্যন্ত বুঝতে পারছি, এটি একটি ভিসা সেন্টারের দুরভিসন্ধিমূলক হতে পারে।
বিষয়টি খতিয়ে দেখে ২২ সেপ্টেম্বর এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, একটি অস্তিত্ববিহীন ভিসা সেন্টারের মাধ্যমেই ভুয়া ভিসা নিষেধাজ্ঞার খবর ছড়িয়েছে। ভিসা সেন্টারটির ঠিকানা লন্ডন হলেও তার অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি দূতাবাস।
সাংবাদিকদের দায়িত্ব তথ্য যাচাই করে, নিশ্চিত হয়ে সংবাদ পরিবেশন করা। সেটাই নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয়। তাই অনুরোধ থাকবে, ভবিষ্যতে এমন সংবেদনশীল বিষয়ে গণমাধ্যম যেন আরো সতর্ক থাকে।