Logo
×

Follow Us

মতামত

সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে কেন আবার সিন্ডিকেট হবে?

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৯

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে কেন আবার সিন্ডিকেট হবে?
(মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, বায়রার সাবেক যুগ্ম মহাসচিব। জনশক্তি রফতানির সাথে যুক্ত ব্যবসায়ী। এখাতে স্বচ্ছতা, প্রবাসী ও প্রবাসগামী কর্মীদের জীবন মান উন্নয়ন, দক্ষতা বৃদ্ধিসহ জনশক্তি খাত নিয়ে তিনি সরব থাকেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তিন দিনের মালয়েশিয়া সফর, এখাতের উন্নয়নসহ নানা বিষয় নিয়ে মতামত দিয়েছেন। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মাহবুব স্মারক।) 

মাইগ্রেসন কনসার্ন: ফখরুল ইসলাম আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি। প্রথমেই যেটা জানতে চাই আপনারা সাত দিন আগেও বায়রার সাবেক সাত সদস্য প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। ঠিক কী আশঙ্কায় আবারো আপনারা স্মারকলিপি দিলেন? স্মারকলিপিতে আপনারা আশঙ্কা করেছেন, পুরনো সিন্ডিকেট থেকে যাচ্ছে, কেন আপনাদের এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে? 

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: ধন্যবাদ আপনাকে। আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এবং মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টার কাছে আমরা স্মারকলিপি দিয়েছি গত সপ্তাহে। এর আগেও কিন্তু আমরা একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়েছিলাম। আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, সিন্ডিকেটের যে অপতৎপরতা আগে যেসব ব্যক্তিবর্গ, গোষ্ঠী সিন্ডিকেট করেছে ঠিক একই ব্যক্তি গোষ্ঠীর সিন্ডিকেট এর অপতৎপরতা আমরা বিভিন্নভাবে দেখতে পাচ্ছি। আমরা এটাও শুনতে পাচ্ছি, নতুন করে সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আগে পাঁচ কোটি টাকা লাগত, এখন সাত কোটি টাকা দাবি করা হচ্ছে। অনেকে বিভিন্নভাবে সিন্ডিকেটে ইন করার জন্য টাকা কালেকশন করা হচ্ছে। তো এই আশঙ্কা থেকে এবং সম্প্রতি আমরা দেখেছি আমাদের মাননীয় প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টাও একটা বক্তব্যে বলেছেন যে সিন্ডিকেট এর কারণে এই মাইগ্রেশন খরচ বাড়ছে এইটা না বরং বিভিন্ন দেশে মাইগ্রেশন খরচ বেশি। তার এই মন্তব্যের কারণে একটা আশঙ্কা আমাদের মধ্যে তৈরি হয়েছে, উনি সিন্ডিকেটকেই সাপোর্ট করছেন কিনা। আমরা বিশ্বাস করি যে, যেই সিন্ডিকেট সাবেক সরকারের আমলে হয়েছিল এবং যে সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্তির কোনো ক্রাইটেরিয়া ছিল না, কোনো স্বচ্ছতা ছিল না। বরং টাকার বিনিময়ে লাইসেন্স অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। সেই একই সিন্ডিকেট আবার অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও হতে পারে এটা আমরা ভাবতেই পারি না।

মাইগ্রেসন কনসার্ন: প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়া সফর শুরু করেছেন। এখন আপনাদের দাবিগুলো কী কী? 

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: আমরা যে স্মারকলিপি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে দিয়েছি, সেখানে সিন্ডিকেট না করে কীভাবে এটার একটা সল্যুশন করা যায়, কীভাবে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা যায় এবং আমরা বলেছি যে মালয়েশিয়া যে আরো ১৪টা কান্ট্রি থেকে শ্রমিক নিয়ে আসে তারা যেভাবে শ্রমিক পাঠায় মালয়েশিয়াতে আমাদেরও ঠিক একই ফর্মুলাতে শ্রমিক পাঠানো উচিত। এখানে কোনো ডিসক্রিমিনেশন করা উচিত না। 

মাইগ্রেসন কনসার্ন: বাকি ১৪টি দেশ কীভাবে কর্মী নিচ্ছে মালয়েশিয়ায়? 

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: দেখুন, নেপালের মতো দেশেও একটা পদ্ধতিতে কর্মী পাঠাচ্ছেন, যেখানে কোনো সিন্ডিকেশন নাই। তাহলে বাংলাদেশে কেন সিন্ডিকেট হবে? আমরা বলেছি যে, বাংলাদেশের সাথে যে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে একটা এমওইউ করা হয়েছিল সেই এমওইউতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের রিক্রুটমেন্টের বিষয়ে মালয়েশিয়ান সরকার সিলেকশন করবে। আসলে সেখানে মালয়েশিয়ান সরকার কখনো সিলেকশন করে নাই বরং সিন্ডিকেট চক্র টাকার বিনিময়ে সিলেকশনটা করেছিল। 

মাইগ্রেসন কনসার্ন: তাহলে সিন্ডিকেশনের সমাধান কেমন করে হবে? বা হতে পারে?

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: আমরা বলেছি, মালয়েশিয়া কর্মী নেওয়ার সব প্রক্রিয়া হতে হবে স্বচ্ছভাবে। সব বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সরকারের নির্ধারিত যে খরচ থাকবে যৌক্তিক নির্ধারিত খরচের মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে হবে। এটা বোয়েসেলের মাধ্যমে এটা করা যায় এবং প্রয়োজনে একটা ওয়ান স্টপ সার্ভিস করেও করা যায়। একটা অ্যাপের মাধ্যমে আমাদের মালয়েশিয়াগামী কর্মীদেরকে রেজিস্ট্রেশন করা যায় পরে সেই রেজিস্ট্রেশন থেকে আমরা কর্মী নিতে পারি।বিএমইটির মাধ্যমে সেটা হতে পারে। সেখানে যে সরকারের যৌক্তিক নির্ধারিত খরচটা সেটা ব্যাংকের মাধ্যমে কর্মী পরিশোধ করবে। তাহলে কোন রিক্রুটিং এজেন্সি ইচ্ছা করলেও অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ থাকবে না। সিন্ডিকেট চক্রটি গতবার বাংলাদেশ থেকে যত কর্মী গিয়েছে প্রত্যেক কর্মী থেকে দেড় লক্ষ টাকা করে অতিরিক্ত চাঁদা নিয়েছিল। সেই চাঁদা নেওয়ার কোনো সুযোগ যেন না থাকে। 

মাইগ্রেসন কনসার্ন: কিন্তু মালয়েশিয়ান সরকার যদি একান্তই সিন্ডিকেট চায়, লিমিটেড লাইসেন্স হোক তারা চায়, সে ক্ষেত্রে কী হবে?

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: সে ক্ষেত্রে একটা ক্রাইটেরিয়া থাকতে হবে। যেমন জাপানে কর্মী পাঠানোর জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট লাইসেন্সে একটা ক্রাইটেরিয়া আছে। সেই ক্রাইটেরিয়া ভিত্তিতে তারা আবেদন করতে পারবে। আবেদনের ভিত্তিতে যদি গভর্নমেন্টের ক্রাইটেরিয়া ফুলফিল হয়, তাহলে সেখানে সেই এজেন্সি জাপানের শ্রমিক পাঠানোর জন্য সেন্ডিং অর্গানাইজেশন হিসেবে সেই পরিগণিত হবে। ঠিক বাংলাদেশেও যদি এ রকম লিমিটেশনের প্রয়োজন হয়, তাহলে এটার স্বচ্ছ প্রক্রিয়া লাগবে একটা ক্রাইটেরিয়া লাগবে। ডেফিনেটলি আমাদের সরকারকেই এটার দায়িত্ব নিতে হবে লাইসেন্সের ক্রাইটেরিয়াটা ঠিক করার জন্য। সে অথবা মালয়েশিয়ান এমপ্লয়ের এটা ঠিক করবে। মালয়েশিয়ান সরকার কিন্তু আমাদের লাইসেন্স কোনটা ভালো কোনটা খারাপ তারা কিন্তু জানে না। তারা ঠিক করার কোনো সুযোগ নেই এবং কোনোভাবেই সেটা সম্ভব হয় না। সে জন্য আমরা বলেছি, একটা স্পষ্ট ক্রাইটেরিয়া থাকতে হবে, যদি লাইসেন্স লিমিটেশন চায় অথবা এমনও হতে পারে যে একটা বোয়েসেলের মাধ্যমে ওয়ান স্টফ সার্ভিসের মাধ্যমে কাজটা হতে পারে। একটা গেটওয়ে দিয়ে সে ক্ষেত্রে সকল এজেন্সি তাদের ডিমান্ড তারা নিয়ে আসবে, বোয়েসেলে একটা ফি দিয়ে আমরা সেখানে তাদের মতো করি তারা যেন করতে পারে সেটাও একটা মেকানিজম হতে পারে এটাও আমরা বলেছি।

মাইগ্রেসন কনসার্ন: সাধারণ মানুষের জানতে চাওয়া কবে কলিং ভিসা চালু হবে মালয়েশিয়ায়? এ নিয়ে আপনার কোনো ধারণা আছে? প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরের পর কী এটা চালু হতে পারে?  

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: আমরা আশা করছি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার সফরের পরে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারটা উন্মুক্ত হবে। আমরা সেই প্রত্যাশা করছি এবং আমাদের কর্মীরা আমরা দীর্ঘদিন সেই প্রত্যাশা করছি। তো সেই জায়গাটাতে আমরা মনে করি পারস্পরিক একটা সমঝোতার মাধ্যমে দুই দেশের সমঝোতার মাধ্যমে শ্রম বাজারটা অন্যান্য ১৪টি দেশের মতো স্বচ্ছতার ভিত্তিতে কোনো প্রকার অতিরিক্ত অভিবাসন ছাড়া, কোন প্রকার কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি না হয়ে এবং সিন্ডিকেট বিহীনভাবে সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী যাবে আমরা প্রত্যাশা করছি। আশা করছি মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নিশ্চয়ই এই বিষয়টা সেভাবে দৃষ্টি দেবেন এবং এটা ইনশাআল্লাহ ওপেন হবে।

মাইগ্রেসন কনসার্ন: আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী গেছে, তাতে আসলে কী সমস্যা ছিল?

মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম: আসলে অতীতে কোনো ক্রাইটেরিয়া ছিল না। কোনো স্বচ্ছতা ছিল না। যারা কর্মী পাঠানোর জন্য লাইসেন্সধারী ছিল, সেগুলো কোনো স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করা হয়নি। একটা সিন্ডিকেট এটা করেছিল। সিন্ডিকেট চক্রটি তাদের সুবিধার মতো টাকা নিয়ে এটা করেছিল। আমরা মনে করি, আগের সরকার যে কাজটা করেছে ডেফিনেটলি এই সরকার এটা কোনোভাবেই করতে পারে না। যে সিন্ডিকেট এর সাথে আগের সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা, বিভিন্নভাবে পলিটিক্যাল নেতারা জড়িত ছিল এবং সেখানে অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। বিভিন্ন দেশীয় আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। আমি মনে করি, এবার যদি এই সরকার এটা এলাও করে তাহলে ভীষণভাবে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। এটার সাথে সারাদেশ কোনো না কোনোভাবে জড়িত। আমরা মাননীয় প্রধান উপদেষ্টাকে বিনয়ের সাথে অনুরোধ করব, মালয়েশিয়ায় তার সফর সেটা ডেফিনেটলি আমরা আশা করি সাকসেসফুল হবে এবং যেহেতু মালয়েশিয়ার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উনার খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সে ক্ষেত্রে উনি যদি এই বিষয়টা অত্যন্ত আন্তরিকতা দিয়ে দেখেন, তাহলে ডেফিনেটলি নেপাল যেভাবে কর্মী পাঠায় আমরা সেখানে কেন কর্মী পাঠাতে পারব না। আমাদের রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিকে কন্ট্রোল করার ভিন্ন মেকানিজম আছে। আমাদের গভর্নমেন্ট কন্ট্রোল করতে পারে, যাতে তারা অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ না নেয় এবং সুনির্দিষ্টভাবে অ্যাপের মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে পারে। সে জন্য আমি মনে করি, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা যদি এই উদ্যোগটা নেন, তাহলে অতীতের যে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অতিরিক্ত অভিবাসন খরচ হয়েছিল; এই সেক্টরে একটা অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছিল এবং কিছু ব্যক্তি এবং গোষ্ঠীর কাছে এই সেক্টর জিম্মি ছিল। আমরা মনে করি, এই সরকার কোনোভাবেই সেই সুযোগটা পুনরায় দেবে না এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আমরা মনে করি, এটায় একটা স্বচ্ছতা ফিরে আসবে এবং কম খরচে আমাদের সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সি যাতে কর্মী পাঠাতে পারে, সেই ব্যবস্থা উনি করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।

চলবে…

Logo