সাক্ষাৎকারে কাউসার খান - শেষ পর্ব
স্কিলড মাইগ্রেশনে কোন পেশায় বেশি ভিসা দেয় অস্ট্রেলিয়া?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১৪:৪৮

(কাউসার খান অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট ও সাংবাদিক। দৈনিক প্রথম আলোর সিডনি প্রতিনিধি। অস্ট্রেলিয়ায় ইমিগ্রেশন, দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিদের কার্যক্রম নিয়ে তার লেখালেখির সাথে সুপরিচিত দেশের মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন, দেশটিতে স্টুডেন্টদের ভিসা কেন কমছে, কেন স্টুডেন্টদের ভিসায় যাচাই-বাছাই বেশি হচ্ছে, বিজনেস মাইগ্রেশন কেন প্রায় বন্ধের পথে, কেন ভিজিটর ভিসা কমছে, পড়াশোনা করে কীভাবে দেশটিতে স্থায়ী হওয়া যায়, স্কিলড ইন ডিমান্ড ভিসায় বাংলাদেশ থেকে কাদের পিআর পাওয়ার সুযোগ আছে ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন মাইগ্রেশন কনসার্নের সাথে। কাউসার খানের ইন্টারভিউ নিয়েছেন মাহবুব স্মারক। চার পর্বের ধারাবাহিকের আজ শেষ পর্ব।)
মা. ক.: অস্ট্রেলিয়াতে নোম্যাড ভিসার কথা বলা হচ্ছে, কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের কথা বলা হচ্ছে। সারা পৃথিবীর মতো এ ধরনের ব্যক্তিরাও অস্ট্রেলিয়াতে কাজ করতে পারছে, সুযোগ পাচ্ছে।
কাউসার খান: হ্যাঁ, খুবই সুযোগ পাচ্ছেন, কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের এখন তো প্রচুর সুযোগ। আপনি জানেন, এআই যেভাবে সবকিছুতে জায়গা দখল করছে, তাতে আগামী ছয় মাসের মধ্যে চাকরির বাজারে প্রচুর পরিবর্তন হবে, প্রচুর পরিমাণে চাকরির ধরন পরিবর্তন হয়ে যাবে। জেনারেল স্কিল মাইগ্রেশনটা কিন্তু সময়সাপেক্ষ। আবেদন করার ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে। আমার জানা মতে, এখনো বাংলাদেশ থেকে কোনো কনটেন্ট ক্রিয়েটর আসেনি। তবে সরকার যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং অকুপেশন লিস্টে কনটেন্ট ক্রিয়েটর পেশা হিসেবে আছে, ফলে আজ না হয় কাল তারা আসবেই। ফলে যদি ইংলিশ ভালো জানে, বয়স কম থাকে, তবে নতুন এই সেক্টরে হিউজ অপরচুনিটি। নতুন সেক্টর সব সময়ই খুব সম্ভাবনাময়, কারণ কম্পিটিশন কম থাকে। ফলে একটু যদি দূর্বলও হয় কোনো বিষয়ে, তারপরও ভিসা প্রদানের সুযোগ বেশি থাকবে অন্যান্য সেক্টরে থেকে।
আমি বাংলাদেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের বলব, তারা যেন ইংলিশটা ঠিক করে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে আবেদন করে এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পড়ালেখাটা করে নেয়। ঢাকায় তো কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যারা ভিডিও প্রোডাকশন ও কনটেন্ট ক্রিয়েশনের ওপর কোর্স করায়। আমি একজনকে জানি যে মোবাইল জার্নালিজমের ওপর তাদের ভালো কাজ আছে। ফাইন আর্টেসের সাথে তো খুব একটা বেশি দূরত্ব নেই, খালি প্ল্যাটফর্মটা ডিফারেন্ট। আর অনলাইনে এটার অসংখ্য কোর্স আছে ঘরে বসেই করা যায়। তাছাড়া প্রাথমিক ধারণা নেওয়ার জন্য চ্যাটজিপিটি, ডিপসিক তো আছেই।
আমি আন্তরিকভাবে বলছি, যে শিক্ষার্থীরা অস্ট্রেলিয়ায় আসতে চান, যত দ্রুত সম্ভব আবেদন করুন। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে জানুন, কারণ এই বিষয়ে এত দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে সবকিছু, সরকার এত সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে, জব সেক্টরে এত দ্রুত চাহিদা বাড়ছে- বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা যত দ্রুত পারেন এটাকে এডাপ্ট করে নেন। এই সম্পর্কে পড়ালেখা করেন, জানেন, বোঝেন এবং এই সুযোগটা নেন। কিছুদিন আগেও আইটি সেক্টরে যারা নেতৃত্ব দিত, সেই মাইক্রোসফটের প্রধানসহ অনেকেরই চাকরি চলে গেছে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের কারণে।
মা. ক.: একটা বিষয় আপনার কাছে জানতে চাই, যখন কোনো দেশে সুযোগ বেশি বেড়ে যায়, তখন কিন্তু সে দেশে জালিয়াতিও বেড়ে যায়। কিছুদিন আগে ইন্ডিয়াতে যেমনটা হয়েছে, বেশ কিছু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচুর স্টুডেন্ট অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছে, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় তারা কাগজপত্র জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। ফলে ভারতের বেশ কিছু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়কে কিন্তু এমবার্গো দেওয়া হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এমনটি হতে পারে কিনা বা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত কিনা বা বাংলাদেশ থেকে এ ধরনের জালিয়াতি হচ্ছে কিনা?
কাউসার খান: জালিয়াতি হচ্ছে মানে, প্রচুর জালিয়াতি হচ্ছে। জালিয়াতি বিষয়টাই মানুষের জন্মগত, সৃষ্টির শুরু থেকেই এই অপরাধ চলে আসছে। তবে পলিসি মেকাররাও জানে এ খাতে জালিয়াতি হয়, তারাও সেটাকে প্রোটেক্ট করার চেষ্টা করে- এভাবেই পৃথিবী এগোচ্ছে। বাংলাদেশে যেটা সবচেয়ে বেশি হচ্ছে, যেটা সবচেয়ে বেশি শঙ্কার বিষয়- দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণির যাদের হাতে কিছু টাকা আছে, তারা ভিসা প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে। এটা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। সত্যি কথা যে, তারা যখন তাদের টাকাটা হারায়, তখন তাদের আর কিছু করার থাকে না। এটা একটা মানুষকে নিঃস্ব করে দেয়। তার স্বপ্ন না শুধু, তার গোটা পরিবারকেই নিঃস্ব করে দেয়। এটা হচ্ছে যে, প্রচুর জাল ভিসা, মনে করেন এগ্রিকালচার ভিসা, ভিজিটর ভিসা দিয়ে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে দেবে, নৌকা দিয়ে পাঠিয়ে দেবে– এসব বলে ১০ লাখ, ১৫ লাখ টাকা নিয়ে যাচ্ছে, কাউকে নেপালে নিয়ে, কাউকে শ্রীলঙ্কা নিয়ে ছেড়ে দেয়। এ রকম প্রচুর সংবাদ আমি প্রতিদিন অনলাইনে, পত্রপত্রিকায় দেখি। অনেকে অস্ট্রেলিয়ায় থেকেই অনলাইনে ভিউ বাড়ানোর জন্য না জেনেই অনেকসময় এসব সহজে ভিসার কথা বলে প্রতারণাকে উৎসাহিত করে। অথচ অস্ট্রেলিয়াতে ইমিগ্রেশন বিষয়ে কথা বলার জন্য শুধু যারা রেজিস্ট্রাড মাইগ্রেশন কনসালটেলন্ট, তারাই বলতে পারে। এরা ছাড়া অন্যদের কিন্তু বিশাল অঙ্কের জরিমানা এমন কি জেলও হতে পারে।
মা. ক.: জালিয়াতি বিষয়টাতো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই যে ধরেন জালিয়াতি যদি বেড়ে যায়, কাগজপত্রে যদি প্রতারণা হয়, তখন তো ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টা আসতে পারে; নাকি?
কাউসার খান: টোটাল ব্যান হয়তো পড়ে না, কারণ পলিসি মেকাররা তো জানেই শতভাগ নির্ভূল প্রক্রিয়া সারাবিশ্বেই হয়ে ওঠেনি। আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে কিছু জালিয়াতি হয়, যেটা তারা আবার ধরে ফেলতে পারে। ২০০০-২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশিদের যেভাবে আহ্বান করে নিয়ে আসা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়, পরবর্তী সময়ে কিন্তু কিছু ভুয়া কলেজ, কাগজপত্রে জালিয়াতি এ সমস্ত বিষয় সামনে আসার ফলে তারা কিন্তু আস্তে আস্তে কঠোর হতে লাগল। আবার এখানে এসেও অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয় নাই বা পড়াশোনা করতে এসে প্রোটেকশন ভিসায় অ্যাপ্লাই করে দিয়েছে। প্রোটেকশন ভিসায় অ্যাপ্লাই করলে কিন্তু খুবই জটিল পরিস্থিতি তৈরি হয়। একসময় কিন্তু বাংলাদেশ থেকে এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে ১০০ স্টুডেন্ট আসতে পারত। এরা এসে পড়ালেখা করে চলে যাওয়ার কথা, কিন্তু এই ১০০ই থেকে গেছে। হয়তো তারা বলেছে, বাংলাদেশে তারা ফিরে যেতে পারবে না, প্রোটেকশন বা অ্যাসাইলাম ভিসায় অ্যাপ্লাই করেছে। এসব কিছুরই একটা প্রভাব আছে। এখানে সবাইকে সৎভাবে যেতে হবে। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে এজেন্ট বা এখানকার রিপ্রেজেন্টেটিভ- সবাইকেই সৎ পন্থায় চলতে হবে। আমার দীর্ঘদিনের অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, অস্ট্রেলিয়ায় অনেস্টি ইজ দ্য বেস্ট পলিসি– এই নীতিতে চলে অনেক বিপদ আপদ থেকে দূরে থাকা যায়। যেখানে নো এন্ট্রি, সেখানে সব সময় নো এন্ট্রি। রাত ৩টা বাজে, এখন কেউ নেই, কেউ দেখছে না বলে আমি এন্ট্রি নিয়ে নিলাম– এটা একদমই করা যাবে না। অস্ট্রেলিয়ায় একবার যদি কেউ প্রতারণার অভিযোগে ধরা পড়ে, আজীবনের জন্য তাকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। আমি দেখেছি, ছোটখাটো ভুলত্রুটি তারা ঠিকঠাক করতে হেল্প করে কিন্তু জালিয়াতি করলে, প্রতারণা করলে সেটা তারা মাফ করে না।
মা. ক.: আমরা এরই মধ্যে স্টুডেন্টদের নিয়ে নানা কথা বলেছি। নতুন সরকার এসেছে, এখন কি স্টুডেন্টদের যাওয়াটা একটু সহজ হবে? ছোট করে যদি একটু বলেন।
কাউসার খান: দেখেন, সবকিছুরই একটা ক্যাপাসিটি থাকে। অস্ট্রেলিয়ার সরকারের যতটা ক্যাপাসিটি ছিল বিদেশ থেকে স্টুডেন্ট নেওয়ার, এরই মধ্যে সে পরিমাণ নেওয়া হয়ে গেছে। তার ওপর যারা স্টুডেন্ট হিসেবে গিয়েছে, তারা পড়াশোনা শেষ করে আবার অন্য কোর্সে ভর্তি হচ্ছে, অন্য ডিপ্লোমা করছে। ফলে স্টুডেন্ট কিন্তু কমছে না। এই কারণে সরকার কঠোর হচ্ছে, ওভার স্টে বন্ধ করতে কাজ করছে। অনেক স্টুডেন্ট আছে, পড়ালেখা না কে খালি কাজ করছে, বছর শেষে ভর্তি রিনিউ করছে। এসব ক্ষেত্রে সরকার কাজ করছে। তবে আমি আশা করি, নতুন সরকার নিশ্চয়ই নতুন স্টুডেন্ট নেওয়ার ক্ষেত্রে উদ্যোগ নেবে।
মা. ক.: এবার স্কিল মাইগ্রেশন নিয়ে কথা বলতে চাই। অস্ট্রেলিয়ার সরকার যে তালিকা করেছে পেশাজীবীদের ভিসা প্রদানে, সেখানে দুটি পেশা নিয়ে আপনার কাছে জানতে চাইব। একটা হচ্ছে কন্ট্রাক্ট এডমিনিস্ট্রেটর, যে ভিসায় বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ অনেক বেশি। এই পদে আসলে কারা বাংলাদেশ থেকে অ্যাপ্লাই করতে পারে, কারা এই পদের যোগ্য? এ পেশায় ভিসা পাওয়া আসলে কতখানি কঠিন বা সহজ, যদি বলতেন।
কাউসার খান: ৪৮২ সাব ক্লাস স্কিলড ইন ডিমান্ড যে ভিসাটা, এটা আসলে খুবই নির্বাচিত মানুষদের জন্য। এটার জন্য এক বছরের ন্যূনতম এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হবে, আইইএলটিএস এ ন্যূনতম ৫ স্কোর থাকতে হবে এবং এখানে একজন স্পন্সর থাকতে হবে, যিনি আপনাকে জব অফার করবে। কথা হচ্ছে, ইংলিশ জানা বা জব এক্সপেরিয়েন্স এমন কোনো ইস্যু না, ইস্যু হচ্ছে স্পন্সর পাওয়া। কেউ যদি স্পন্সর পেয়ে যায়, তাহলে ভিসাটা কিন্তু দ্রুত হচ্ছে। এমনকি ১০ দিনের মধ্যে ভিসা হওয়ারও রেকর্ড আছে। কিছুদিন বেশি সময় লাগছিল কিন্তু নির্বাচনের পর মনে হচ্ছে কাজগুলো খুব দ্রুত হচ্ছে। আর কেউ যদি দুই বছর এই ভিসাতে কাজ করেন তাহলে কিন্তু পরে পার্মানেন্ট রেসিডেন্সিতে অ্যাপ্লাই করতে পারেন। দুই বছর না, কেউ কেউ ছয় মাস পরেই অ্যাপ্লাই করতে পারে যদি কারো স্কিল অ্যাসেসমেন্ট থাকে, আইইএলটিএসে ৬ স্কোর থাকে এবং তিন বছরের পূর্ববর্তী জব এক্সপেরিয়েন্স থাকে। মূল ইস্যুটা হচ্ছে স্পন্সর পাওয়া। এখানে কে এমন আছে যে আপনাকে জব অফার দেবে? ধরেন আপনি একজন কন্ট্রাক্ট এডমিনিস্ট্রেটর। এটা আসলে সহজ মানে যে কেউ যে কোনো সাবজেক্টে পড়াশোনা করলেই এই পেশার সাথে মিলে যাবে। কেউ যদি এই পেশায় জব সিকিউর করতে পারে অস্ট্রেলিয়ায়, তাহলে কিন্তু তার জন্য এখানে আসাটা সহজ হয়ে যায়। যদিও এটা কিন্তু একটু এক্সপেন্সিভ, ভিসা ফি বেশি। কিন্তু এ পেশায় দ্রুত পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি পাওয়া যায়। সরকার কিন্তু প্রচুর ভিসা দিয়েছে এবং আমার জানামতে প্রচুর বাংলাদেশি এসেছে এ ভিসায়।
আমি কুক এবং শেফকে কেন না করি, কারণ এ পেশার জন্য বাংলাদেশিদের স্কিল অ্যাসেসমেন্ট দরকার পড়ে। এটার যে অথরিটি অস্ট্রেলিয়ায়, তাদের ট্রেড রিকগনিশন অথরিটি বা টিআরএ বলে। তাদের এখানে স্কিল অ্যাসেসমেন্ট করা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। মানে ভিসা আবেদন করার আগেই এ প্রক্রিয়াতেই প্রচুর পয়সা লাগে। আমি যেমন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ, তাই মধ্যবিত্ত পরিবারের কথা মাথায় রেখেই কথা বলি। তাই এই এডভান্স লেভেলে পয়সা খরচ করে যদি কোনো কারণে ভিসা না হয়, তাহলে তো একটা জটিল ইস্যু হবে। এ জন্য আমি চাই, কন্ট্রাক্ট এডমিনিস্ট্রেটর বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর। তারা কিন্তু অস্ট্রেলিয়ায় যে কোম্পানিগুলো আছে, তাদের সাথে সরাসরি কথা বলতে পারে, সরাসরি ইন্টারভিউ দিতে পারে। আগে এটা কিন্তু ইউরোপীয়দের জন্য মনে করা হতো, এখন তো ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে এই পেশায় আসছে প্রচুর। যেহেতু বাংলাদেশিরা অনেক আপস্কিল হয়েছে ইংলিশ স্পোকেনে, ফলে এখন আর তেমন জটিলতা নেই।
মা. ক.: এ বিষয়ে একটা বিষয় জানতে চাই, এই যে কন্ট্রাক্ট এডমিনিস্ট্রেশনের কথা বললেন, এটা কোন সাবজেক্টে পড়াশোনা করা পেশাজীবী বেশি কাজ করতে পারে। এটার ব্যাপারে কি কোনো ধারণা দিতে পারেন?
কাউসার খান: শোনেন, কন্ট্রাক্ট এডমিনিস্ট্রেটর সম্পর্কে কেউ যদি জানতে চায়, গুগলে একটু সার্চ করলেই জানতে পারবে এই পেশার কাজ কী। মানে বেশির ভাগ প্রফেশনেই এই ধরনের কাজ হয়। একটা ডেভেলপমেন্ট সাইট, একটা মুদির দোকান- যে কোনো কাজে ম্যানেজারিয়াল কাজটা বা সুপারভিশন করাটাই এর কাজ। একটা মুদির দোকানে কার কার কাছ থেকে কি চুক্তিতে মালপত্র নেবে, একজন বিল্ডার্সের সাইটে কার কাছ থেকে মালপত্র নেবে, ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্টের ক্রেতার সাথে কি চুক্তি করতে হবে– এর সবই কন্ট্রাক্ট এডমিনিস্ট্রেটর করবে। ফলে এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট সাবজেক্ট নয় বরং যে কোনো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কোনো সাবজেক্টে পড়লেই এ বিষয়ে কাজ করতে পারবে। অস্ট্রেলিয়ায় যাদের টার্নওভার বেশি তারাই এই জব অফার করতে পারবে। বাংলাদেশে যে কোনো চাকরিতে ম্যানেজারিয়াল কার্যক্রমের সাথে এক বছর জড়িত থাকলেই এই কাজের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবে।
একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে– ইংলিশ ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় আসা যায় না। কেউ যদি টাকা-পয়সা চায়, তাহলেই বুঝতে হবে যে এখানে একটা প্রতারণার ব্যাপার-সেপার আছে।
মা. ক.: সে ক্ষেত্রে স্পন্সর কীভাবে পাবে, কীভাবে পান লোকজন?
কাউসার খান: এখনতো যোগাযোগ অনেক সহজ হয়ে গেছে। যে কোনো সময় যে কাউকেই ফোনে রিচ করা যায়। অস্ট্রেলিয়ায় পরিচিতদের মাধ্যমে জব অফার নেওয়া যায়। আবার লিংকডইনসহ অনেক জায়গায় চাকরির খবর থাকে। সেখান থেকে চাকরি খূঁজে সরাসরি যোগাযোগ করা যেতে পারে। যে কোনো সময় ইন্টারিউতে বসা যেতে পারে। একবার ইন্টারভিউতে বসলে বাকিটা তার ক্যারিশমা। ইংরেজি কম জানলে চ্যাটজিপিটি আছে, সাথে সাথে অনুবাদ করে ইংরেজিতে যে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায়। প্রার্থী যদি সিরিয়াস হয়, তাকে আটকানোর সুযোগ নাই। আপনি ইংরেজিতে কম বলতে পারেন হয়তো, কিন্তু আপনার কনফিডেন্স থাকতে হবে যে, কাজটি আপনি ভালো পারবেন। এটা বোঝাতে পারলেই আপনি জব অফার পাবেন নিশ্চয়ই।
মা. ক.: কাউসার ভাই অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। আপনার মাধ্যমে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পারলাম অস্ট্রেলিয়ার মাইগ্রেশন বিষয়ে।
কাউসার খান: আপনাদেরও ধন্যবাদ।