Logo
×

Follow Us

মতামত

সাক্ষাৎকারে কাউসার খান - পর্ব ৩

মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সুযোগ প্রচুর

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১৪:৩৮

মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীদের অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার সুযোগ প্রচুর
(কাউসার খান অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট ও সাংবাদিক। দৈনিক প্রথম আলোর সিডনি প্রতিনিধি। অস্ট্রেলিয়ায় ইমিগ্রেশন, দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিদের কার্যক্রম নিয়ে তার লেখালেখির সাথে সুপরিচিত দেশের মানুষ। স্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন, দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী সরকার, নতুন সরকারের ইমিগ্রেশন পলিসি, সরকারের সাথে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পর্ক, কোন ভিসায় এখন বাংলাদেশিরা বেশি যেতে পারছে, কোন সাবজেক্টে পড়লে স্টুডেন্টরা তাড়াতাড়ি জব ও পিআর পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকছে, তা নিয়ে কথা বলেছেন মাইগ্রেশন কনসার্নের সাথে। কাউসার খানের ইন্টারভিউ নিয়েছেন মাহবুব স্মারক। (চার পর্বের ধারাবাহিকের আজ তৃতীয় পর্ব।)

মা. ক.: আমার অভিজ্ঞতার কথা বলি, আমি যখন অস্ট্রেলিয়ায় ছিলাম, তখন সেখানকার কিছু নেপালি স্টুডেন্টের সাথে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমি তখন তাদের কাছে জানতে চাইতাম তাদের সম্পর্কে। তারা বলত, তারা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা, তাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই। ব্যাংক তাদের বিদেশে আসার জন্য লোন দিয়েছে এবং তারা তখন অল্প অল্প কাজ করে সেই লোনের টাকা শোধ করছে। তো, আপনি কি মনে করেন, আমাদের দেশেও লোন দিয়ে স্টুডেন্টদের বিদেশে পাঠানো সম্ভব? মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে বিদেশযাত্রার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এগিয়ে এলে পুরো কাজটি সহজ হয় বলে মনে হয় আপনার?

কাউসার খান: অবশ্যই, এই সিস্টেম তো সব সময়ই ছিল বাংলাদেশে। ২০০০ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক স্টুডেন্টদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে এডুকেশন লোন দিত। অস্ট্রেলিয়া সরকারও বিষয়টি বিবেচনা করত। কারণ সলভেন্সি যেটা দেখাতে হয়, সেটা কিন্তু টাকা নিয়ে আসতে হয় না। শিক্ষার্থীর আর্থিক সামর্থ্য আছে কিনা তার শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার জন্য– এটাই দেখা হয় ফিন্যান্সিয়াল সলভেন্সিতে। এটা একটা আইন, এটা একটা রিকোয়ারমেন্ট। এটা দিয়ে যে অস্ট্রেলিয়া সরকারের খুব বেশি উপকার হয়, তাও না। যেহেতু এটা একটা রিকোয়ারমেন্ট, এটা ফুলফিল করতে হয়। সমস্যা হলো, যখন এটা ঢালাওভাবে পর্যালোচনা করে দেখা গেল যে, এটা সঠিক নয়, তখন অস্ট্রেলিয়া সরকার এই গ্যারান্টি বিষয়ে ভিন্নভাবে ভেবেছে। নেপালে কিন্তু ব্যাংকগুলো বৈধভাবেই স্টুডেন্ট লোন দিচ্ছে। বাংলাদেশেও নিশ্চয়ই দিচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া সরকার যদি এটাকে দালিলিকভাবে গ্রহণ করে, তাহলে সমস্যা থাকে না। তবে বর্তমানে ব্যাংকগুলো এ রকম কোনো লোন দেয় বলে আমার জানা নাই। তবে এ রকম উদ্যোগ ব্যাংকগুলো নিতে পারে।

মা. ক.: জনাব কাউসার, আমাদের ব্যাংকগুলো পার্সোনাল লোন প্রদান করে, তবে বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট লোন প্রদান করে না। বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো এ ধরনের ইনিশিয়েটিভ নিতে পারে, যেহেতু বিশ্বের অন্যান্য ব্যাংক এগুলো করছে। আপনারা কি কোনো আহ্বান জানাতে পারেন কিনা, যে শিক্ষার্থীদের বিদেশযাত্রা সহজ করার জন্য ব্যাংক বা ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউটগুলো এ লোন চালু করতে পারে?

কাউসার খান: আমরা তো চাই। আপনি জানেন, আমি কোনো স্টুডেন্ট ইমিগ্রেশনের সাথে জড়িত না। তবে আমি সত্যিই মনে করি, এটা একটা খুবই ভালো সেক্টর। এ সেক্টরে ব্যাংকগুলো আসতে পারে। ২০০০ সালে আমি প্র্যাকটিক্যালি নিজেই দেখেছি– ৮০% অভিবাসনপ্রত্যাশী মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এই স্টুডেন্ট মাইগ্রেশনে এসেছে এই দেশে এবং অর্থনীতিতে অনেক বড় কন্ট্রিবিউশন এদের। এদের মধ্যে অনেক সফল বাংলাদেশি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আমরা দেখি যারা ওই সময় স্টুডেন্ট মাইগ্রেশনে এসেছিলেন। আপনি হয়তো রবিন খোদা'র নাম শুনেছেন, অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের একজন। সে ১৮ বছর বয়সে বাংলাদেশ থেকে এসে আজ এত বড় জায়গায় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিজনেস তার। ফলে আমি তো চাইবই যত বেশি সংখ্যক স্টুডেন্ট বাংলাদেশ থেকে আসুক। যে যেখানে আছে, সে জায়গা থেকে সরকারের সাথে কাজ করলে এটা সম্ভব। এখন যেহেতু লেবার পার্টি সরকারে আছে এবং লেবার পার্টির সাথে বাংলাদেশিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, ফলে এই সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত, ব্যক্তিগতভাবে এবং সংগঠনের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশ সরকারেরও বিষয়টি জোরালোভাবে দেখা উচিত। এ দেশের প্রধানমন্ত্রী, অভিবাসন মন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট যারা প্রত্যেকের কমপক্ষে দুইশ বাংলাদেশির সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে আমার জানামতে। সুতরাং এবার বাংলাদেশের জন্য সূবর্ণ সুযোগ, সরকারও কার্যক্রম মাত্র শুরু করেছে। এখন থেকে যদি লেগে থাকা যায়, তাহলে কিন্তু ভালো কিছু হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমি নিজেও এ বিষয়ে খুব এক্সাইটেড, কারণ এখন থেকে যদি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া যায় তবে আপনি জানেন যে সরকারি নীতিনির্ধারণের কাজগুলো সময়সাপেক্ষ। ফলে এখনই এসব দাবি সরকারের কাছে পৌঁছে দেওয়া দরকার।

মা. ক.: কোন কোন সুস্পষ্ট দাবি নিয়ে সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেন দরবার করতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

কাউসার খান: আমার তো মনে হয়, বেশি দাবি করে লাভ নাই। আমি মনে করি, মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন শিক্ষার্থী যেন ৫-৭ লাখ টাকায় ডিপ্লোমা শেষ করতে পারে, কেউ যদি এটা এনশিউর করতে পারে, তবে এটাই কিন্তু যথেষ্ট। আমি জানি, এখানের কোন ইউনিভার্সিটির সাথে ঢাকার কোন ইউনিভার্সিটির এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম চালু আছে। এগুলো যত বেশি হবে, শিক্ষার্থীরা তত বেশি বিষয়গুলো জানবে। বাংলাদেশের টপ কয়েকটি ইউনিভার্সিটির ভিসি কিন্তু আছেন অস্ট্রেলিয়ান বাংলাদেশি। ফলে তারা এ চুক্তিগুলো সম্পর্কে ভালো করে জানেন। এ ধরনের পলিসি সম্পর্কে তারা ভালোভাবে অবহিত। এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে দুই বছর পড়বে বাংলাদেশে ও দুই বছর অস্ট্রেলিয়ায়। এটা কিন্তু গতবারের লেবার সরকারের স্বাক্ষরিত চুক্তিতেই ছিল। তাই আমি বলি, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম বেশি করে চালু করা দরকার। এতে নামমাত্র টিউশন ফি ও কাজের সুযোগ সৃষ্টি শিক্ষার্থীকে একটা ব্রেক থ্রো দেবে। এটাই গুরুত্বপূর্ণ। এ সুযোগ যদি হাজার হাজার শিক্ষার্থী পেয়ে যায়, তাহলে তো পরোক্ষভাবে বাংলাদেশেরই লাভ হচ্ছে। তারা এখানে প্রতিষ্ঠিত হলে বাংলাদেশের জন্যই কাজ করবে। এখানকার বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়াররা এখন স্থানীয় ইঞ্জিনিয়ারদের ইকুইভেলেন্ট। বাংলাদেশি ডাক্তাররাও প্রায় সমান মর্যাদা পাচ্ছেন, শুধু একটি বিশেষ ডিগ্রি নিতে হচ্ছে। বর্তমানে এটা নিয়েও কাজ হচ্ছে যে ডাক্তাররা এই ডিগ্রি অর্জন ছাড়াই শুধু ট্রেনিং নিয়েই পেশাগত কাজ শুরু করে দিতে পারে। আইটি প্রফেশনালসরা কাজ করছেন, উদ্যোক্তা, বিজনেসম্যানরা দারুণ দারুণ কাজ করছেন। পত্রপত্রিকায় অনেক বাংলাদেশির স্টোরি আসছে। আমি খুবই পজিটিভ এবং আমি খুবই এক্সাইটেড যে, আগামী তিন বছর লেবার সরকার আছে। এই সরকারে অনেক বাংলাদেশিও জড়িত আছেন। বাংলাদেশ সরকারের সহজ এক্সেস রয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকারের সাথে সমঝোতা করার আমি মনে করি।

মা. ক.: সে ক্ষেত্রে আপনি বলতে চাইছেন, শুধু স্টুডেন্ট না, বিভিন্ন পেশাজীবী, যারা বাংলাদেশে কাজ করছেন, তারাও তো যেতে পারেন। তারা সেখানে কাজ করার সুযোগ পেলে প্রচুর রেমিট্যান্সের বিষয় আছে। তার মানে দক্ষ পেশাজীবীদেরও তো যাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে?

কাউসার খান: সেটা খুবই এক্সপ্লোর করা দরকার। বাংলাদেশ সরকার চাইলে তো একজনকে নিয়োগই দিতে পারে, যে কিনা শুধু এই দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবে। হাইকমিশনে কাউকে অ্যাসাইন করতে পারে যে এই বর্তমান প্রেক্ষাপটে কী কী সুবিধা, কী কী সুযোগ নেয়া যেতে পারে। বর্তমানে যিনি আছেন বাংলাদেশ হাইকমিশনের দায়িত্বে, তিনি তো নতুন এসেছেন। এর আগে যিনি ছিলেন দায়িত্বে, তিনি প্রচুর কাজ করেছেন। এই বিষয়টা জানতে হয়, ভালোভাবে বুঝতে হয়। এ জন্যই এক্সপার্ট লোক কাউকে যেন দায়িত্ব দেওয়া হয়, যে কিনা অস্ট্রেলিয়ায় কী কী সুবিধা আছে, যেগুলো চাইলে বাংলাদেশ এভেইল করতে পারে্। প্রথম কথা হচ্ছে, এসব সুযোগকে উপস্থাপন করতে হবে সরকারের কাছে, তারপরই না সরকার সেগুলো বিবেচনা করবে। এখন সুযোগগুলো খুঁজে বের করার জন্য চাই এ বিষয়ে এক্সপার্ট কাউকে। যে কিনা পারফেক্ট নেগোসিয়েশন করতে পারে সরকারের সাথে সরকারের। মানে, যা চাইলে পেতে পারি, সেই বিষয়গুলো খুঁজে বের করা, সেগুলোকে চাওয়া এবং পাওয়ার জন্য সর্বতো চেষ্টা করা। অস্ট্রেলিয়া সরকারকে বোঝাতে হবে, যেটা অন্য দেশ দিচ্ছে, সেটা বাংলাদেশ আরো ভালোভাবে দিতে পারবে। এটা পারফেক্টলি করতে পারলে অস্ট্রেলিয়া সরকারেরও উপকার হবে, বাংলাদেশ সরকারেরও উপকার। একইসাথে মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থী অল্প খরচে পড়তে পারবে, কিছু কিছু করে উপার্জন করবে, নিজের খরচ চালিয়ে অল্প বিস্তর দেশে পাঠাবে। এটা তো আর স্বল্প সময়ের বিষয় না, এটা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। সারা পৃথিবীতেই এটা চলছে। যেখানে আলো আছে, সেখান থেকে আলো নিয়ে যেখানে অন্ধকার, সেটা আলোকিত করতে হবে।

চলবে...

Logo