Logo
×

Follow Us

মতামত

সাক্ষাৎকারে কাউসার খান - পর্ব ২

অস্ট্রেলিয়ার কারিগরি কলেজে পড়ার সুযোগ আছে মধ্যবিত্তের সন্তানদের

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১৪:৩৪

অস্ট্রেলিয়ার কারিগরি কলেজে পড়ার সুযোগ আছে মধ্যবিত্তের সন্তানদের

(কাউসার খান অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট ও সাংবাদিক। দৈনিক প্রথম আলোর সিডনি প্রতিনিধি। অস্ট্রেলিয়ায় ইমিগ্রেশন, দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিদের কার্যক্রম নিয়ে তার লেখালেখির সাথে সুপরিচিত দেশের মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন, দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী সরকার, নতুন সরকারের ইমিগ্রেশন পলিসি, সরকারের সাথে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পর্ক, কোন ভিসায় এখন বাংলাদেশিরা বেশি যেতে পারছে, কোন সাবজেক্টে পড়লে স্টুডেন্টরা তাড়াতাড়ি জব ও পিআর পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকছে, তা নিয়ে কথা বলেছেন মাইগ্রেশন কনসার্নের সাথে। কাউসার খানের ইন্টারভিউ নিয়েছেন মাহবুব স্মারক। চার পর্বের ধারাবাহিকের দ্বিতীয় পর্ব।)

মা. ক.: আপনি একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন, মধ্যবিত্তের সন্তানদের অস্ট্রেলিয়ায় আসা বর্তমানে কঠিন, সেটাকে সহজ করা, ভেট স্টুডেন্টদের (ভোকেশনাল ট্রেনিং কলেজ) আরো সহজে কীভাবে আনা যায়– এটা যদি আরো বিশদভাবে বলতেন, তাহলে আমাদের মধ্যবিত্তের সন্তানদের জন্য সুবিধা হতো, যারা অস্ট্রেলিয়ায় যেতে চায়, স্থায়ী হতে চায়, পরিবারকে সহায়তা করতে চায় কিন্তু তাদের টাকা নাই পর্যাপ্ত।

কাউসার খান: আমি নিজে সব সময় এটা নিয়ে কথা বলি। এখানে বাংলাদেশের ধনী পরিবারের সন্তানরা এলে প্রচুর টাকা আসে এ দেশে। এখানকার ইউনিভার্সিটির ভর্তি ফি, টিউশন ফি, থাকা-খাওয়ার খরচ সবই তারা বাংলাদেশ থেকে আনে। আপনি যদি অতীতের দিকে তাকান, ২০০০ সালের দিকে যখন আমাদের মতো বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় স্টুডেন্টরা আসতে শুরু করেছিল, তারা কিন্তু বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকেই এসেছিল, তারা ইন্টারমিডিয়েট পাস করে এসে এখানকার ভোকেশনাল ট্রেনিং কলেজে ভর্তি হয়েছে, ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তি হয়েছে যেটার টিউশন ফি সব মিলিয়ে হয়তো ১০ হাজার ডলার বা ধরেন ৮ লাখ টাকা। ইনিশিয়ালি একজন স্টুডেন্ট ২-৩ হাজার ডলার নিয়ে এখানে আসতে পারেন। যে ফিন্যান্সিয়াল স্পন্সরশিপ বা লিভিং কস্ট দেখাতে হয়, সেটাও তখন নেমে ২০-২৫ লাখ টাকায় হয়ে যাবে। এই স্পন্সরটা আমাদের সময় যে কেউ করতে পারতেন, বাবা-মা ছাড়াও আত্মীয়স্বজন, চেনা-জানা যে কেউই গ্যারান্টর হতে পারতেন। সে সময় যারা আসতেন, তারা নিজেরা পড়ালেখা করতেন, কাজ করতেন। নিজেরও উপকার হতো, পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ারও উপকার হতো। কারণ স্টুডেন্টরা যে কাজটা করে, সেটা কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয়রা করে না। ফলে এ দেশের সমাজের যেমন উপকার হতো, তেমনি বাংলাদেশ থেকে আসা স্টুডেন্টরাও পরিশ্রম করত, কাজ করত, ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হতো। তো, এখন ধনী শ্রেণির পরিবারের সন্তানরা আসবেন, তারা দেশের টাকা এখানে খরচ করবেন, উচ্চ শিক্ষা নেবেন- সবই ভালো, আমি সমর্থন করছি। তবে যে শ্রেণির প্রতিনিধিরা এলে দেশের উপকার হয় বেশি, তাদের আসাটাকেই উৎসাহ দিতে হবে, গুরুত্ব দিতে হবে। একসময় এই মধ্যবিত্ত স্টুডেন্টরাই বেশি আসত।

মা. ক.: এখন কোন দেশের শিক্ষার্থীরা বেশি যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়?

তবে এখন, আমি যদি নাম ধরে বলতে চাই, নেপালের প্রচুর স্টুডেন্ট আসছে এই মধ্যবিত্ত শ্রেণি থেকে। বাংলাদেশ থেকে তেমন একটা আসছে না বা তাদের ভিসা হচ্ছে না। এখন দেখা যাক, যারা রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত আছেন, তারা কী করেন। যারা টনি বার্ক বা প্রধানমন্ত্রীর কাছাকাছি, তারা যদি এই ভোকেশনাল ট্রেনিং কলেজগুলোতে বাংলাদেশের স্টুডেন্ট বেশি আনতে পারেন- এটাই অনেক বেশি উপকার হবে।

মা. ক.: সেই সুযোগ কি এখন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের নেই? মাঝখানে আমরা শুনেছিলাম যে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট, ভেট এগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া?

কাউসার খান: না, বন্ধ তো করতে পারবে না। তবে যারা এই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার দায়িত্বে আছেন, তাদের এই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার যে স্ট্যান্ডার্ড বা গাইডলাইন অনুসরণ করা উচিত, সেই স্ট্যান্ডার্ড ফলো করে নাই বা যেভাবে কলেজগুলোতে পড়াশোনা করানো উচিত বা সার্টিফিকেট দেয়া উচিত, সেখানেও কিছু ব্যত্যয় ঘটেছে। এসব দূর্নীতি বা অন্যায় কাজ সরকার বন্ধ করে দেবে এবং পড়াশোনার ক্ষেত্রে যে মান বজায় রাখা উচিত, তা বজায় রাখবে। অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা শুধু কাজই করে, পড়ালেখা করে না, নিয়মিত পাস করে না, কলেজগুলোও সুযোগ দিয়ে থাকে। সরকার কিন্তু এখন অনেক কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে এবং কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করছে। কেউ হয়তো বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে কলেজ খুলে সেটার অন্যায় সুযোগ নিয়েছে। তো, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং সেটা ভালো। সঠিক নিয়ম-কানুন মেনে কলেজ চালালে ভালো স্টুডেন্ট আসবে এবং ভালো শিক্ষা নিয়ে দক্ষ হবে।

মা. ক.: তার মানে বাংলাদেশিদের সে ক্ষেত্রে সুযোগ আছে মনে করছেন?

কাউসার খান: অবশ্যই সুযোগ আছে। আমি তো বলি, যারা আসবেন, তারা যেন যাচাই-বাছাই করে ভালো কলেজ দেখে আসেন। সরকারও ইন্টার্নালি কলেজগুলোকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ দিতে পারে। আমার পরামর্শ, কলেজ লেভেলে স্টুডেন্টরা আরো বেশি আসুক। তারা এখানে এসে গ্র্যাজুয়েশন করুক। কমিউনিটি লেভেলে এখানকার স্থানীয়রা রাজনীতিবিদদের সাথে কথা বলুক।

চলবে...

Logo