সাক্ষাৎকারে কাউসার খান - পর্ব ১
অস্ট্রেলিয়ার নতুন সরকার ভিষণ বাংলাদেশবান্ধব, অভিবাসন সহজ হবার আশা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১৪:৩২

(কাউসার খান অস্ট্রেলিয়ার সিডনির ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট ও সাংবাদিক। দৈনিক প্রথম আলোর সিডনি প্রতিনিধি। অস্ট্রেলিয়ায় ইমিগ্রেশন, দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিদের কার্যক্রম নিয়ে তার লেখালেখির সাথে সুপরিচিত দেশের মানুষ। অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশন, দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী সরকার, নতুন সরকারের ইমিগ্রেশন পলিসি, সরকারের সাথে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্পর্ক, কোন ভিসায় এখন বাংলাদেশিরা বেশি যেতে পারছে, কোন সাবজেক্টে পড়লে স্টুডেন্টরা তাড়াতাড়ি জব ও পিআর পাওয়ার সুযোগ বেশি থাকছে, তা নিয়ে কথা বলেছেন মাইগ্রেশন কনসার্নের সাথে। কাউসার খানের ইন্টারভিউ নিয়েছেন মাহবুব স্মারক। চার পর্বের ধারাবাহিকের প্রথম পর্ব।)
মাইগ্রেশন কনসার্ন: মাইগ্রেশন কনসার্নের নিয়মিত আয়োজন টক টু মাইগ্রেশন অনুষ্ঠানে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। আমাদের আজকের অতিথি সিডনি থেকে সাথে যুক্ত হয়েছেন ইমিগ্রেশন কনসালটেন্ট কাউসার খান। আপনাকে স্বাগত আমাদের অনুষ্ঠানে। আপনি ভালো আছেন নিশ্চয়ই।
কাউসার খান: হ্যাঁ, ভালো আছি। ধন্যবাদ আমাকে অনুষ্ঠানে ডাকার জন্য।
মা. ক.: আমরা প্রথমেই যে বিষয় নিয়ে আলোচনাটা করতে চাই, যেটি নিয়ে সবারই আগ্রহ তৈরি হয়েছে– অস্ট্রেলিয়ায় একটা সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সাধারণ নির্বাচনে আগের দলই ক্ষমতায় এসেছে, সরকার গঠন করেছে। তো এই নতুন সরকারের সময় অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসন পরিস্থিতি কী রকম হতে যাচ্ছে?
কাউসার খান: এটা ঠিক, খুবই টানাপোড়েন ছিল নির্বাচনের আগ পর্যন্ত যে, কি হয়, কে ক্ষমতায় আসে। ছয় মাস আগেও মনে হচ্ছিল যে লিবারেল পার্টি আসবে। কিন্তু খুবই দ্রুত ও ধামাকাভাবে লেবার পার্টি চলে আসছে এবং এর ফলে যা হয়েছে, অভিবাসন প্রশ্নে তাদের যে অবস্থান ছিল, পরিস্থিতি সেখানেই ফেরত এসেছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিবর্তন হয়েছে, তবে ভালো দিক হলো, আগে যিনি ছিলেন তিনিই এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। ফলে আশা করছি, কোনো ধরনের পরিবর্তন আসবে না।
মা. ক.: তাহলে নতুন সরকার প্রবাসীদের জন্য ভালোই হবে বলে মনে করা হচ্ছে?
কাউসার খান: যেহেতু একটা বিশাল জয়, ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এসেছে এই দল, ফলে তারা এখন অভিবাসন বিষয়টা যেহেতু তাদের নির্বাচনের ইশতেহারে ছিল অভিবাসনকে আরো সহজীকরণ করা, সেদিকে কিন্তু তারা এখন অনেক শক্তিশালীভাবে এগোবে। এটাই মনে হচ্ছে এবং আমরা আশাবাদী, আমরা চাই এটাই যেন হয়।
মা. ক.: এই যে 'শক্তিশালী' শব্দটা আপনি ব্যবহার করলেন, এটা নিয়েই আমরা জানতে চাই। এটা কি ভালোর দিকে এগোবে, নাকি খারাপের দিকে এগোবে? আপনি জানেন, এখন যিনি ইমিগ্রেশন মন্ত্রী টনি বার্ক, তিনি আবারো জয়ী হয়েছেন বাঙালি এলাকা থেকে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরা তার কাছে কি আবদার করতে পারে?
কাউসার খান: আপনি তো জানেন, অস্ট্রেলিয়ায় এসবের সরাসরি কোনো ইম্প্যাক্ট থাকে না। তবে আবদারের কথা যেটা বললেন, টনি বার্ক সিডনির বাংলাদেশ অধ্যুষিত লাকেম্বা, অস্ট্রেলিয়ার সংসদীয় অঞ্চল ওয়াটসনের প্রাণকেন্দ্র এই লাকেম্বা– এখানে টনি বার্ক ব্যক্তিগতভাবে অসংখ্য বাঙালির সাথে যুক্ত আছেন। তাই এ অঞ্চলের বাঙালিরা তো আবদার করবেই। তবে প্রবাসীদের খুব একটা যে চাওয়া, সেটা নেই আসলে। কিছুদিন আগেও একটা কমিউনিটি গ্রুপ টনি বার্কের কাছে গিয়েছিল। তারা দেখা করে কিছু আবদার করেছে।
মা. ক.: সেই আবদারে কী বিষয় ছিল?
কাউসার খান: তার মধ্যে আছে এখানকার ভোকেশনাল ট্রেনিং কলেজ; যেটাতে আপনি জানেন যে পড়াশোনার খরচ কম, যেন বাংলাদেশি স্টুডেন্টরা সহজে আসতে পারে, মধ্যবিত্তের সন্তানরা যেন সহজে আসতে পারে। এটা আমিও মনে করি, মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা যদি অস্ট্রেলিয়ায় আসতে পারে, এখানকার পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি নিতে পারে, তাহলে খুব ভালো হয়। তো, এ জাতীয় আবদার সব সাংসদের কাছেই সব এলাকার জনগণ করে থাকে। তবে বাংলাদেশিদের জন্য যেটা ভালো খবর, এখনকার যিনি প্রধানমন্ত্রী, এন্থনি এলবানি; তিনিও কিন্তু টনি বার্কের পাশের আসন থেকে বিজয়ী হয়েছেন এবং সেই আসনেও কিন্তু প্রচুর বাংলাদেশি আছেন, যারা প্রভাব খাটাতে পারেন, আবদার করতে পারেন। এছাড়া অভিবাসন মন্ত্রী ম্যাটও কিন্তু সিডনির পূর্বাঞ্চলে থেকে নির্বাচিত সাংসদ এবং তার আসনেও প্রচুর বাংলাদেশির সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে। ফলে আমি বলব, বাংলাদেশ খুব বেশি না পেলেও যেটা চাওয়ার, সেটা কিন্তু চাইতে পারবে; মানে চাওয়ার সেই জায়গাটা তাদের আছে, সুযোগ আছে।
মা. ক.: যেহেতু সরকারের একটা ধারাবাহিকতা থাকছে, ফলে ইমিগ্রেশন পলিসিতে কি খুব একটা পরিবর্তন আসবে?
কাউসার খান: সার্বিক অর্থে পুরো অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের যে নীতি ছিল এবং যেটার কারণে লেবার পার্টি, বিরোধী দল; পিটার ডার্টন খুব বিখ্যাত মানুষ আপনি জানেন, তিনি মিনিস্টার ছিলেন, এবার তিনি বলেছিলেন যে, ২৫ শতাংশ অভিবাসন তিনি বন্ধ করে দেবেন। এছাড়া অনেক কঠিন কথা তিনি বলেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি পরাজিত হয়েছেন, তার দল লিবারেল পার্টি আর সরকার গঠন করতে পারেনি। এর পাশাপাশি পিটার ডার্টন কিন্তু নিজ আসনেই হেরে গেছেন।
মা. ক.: তাহলে এটা কীসের ইঙ্গিত দেয়? অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কথা বলে তো ট্রাম্প নির্বাচনে জিতেছেন আমেরিকায়...
কাউসার খান: এটা ইঙ্গিত দেয়, অভিবাসন বিষয়ে যারা কঠোর হবে, তারা কিন্তু কাজ করতে পারবে না অস্ট্রেলিয়ায়। লেবার পার্টি ক্ষমতায় এসেছে, প্রধানমন্ত্রী আলবানিজি নিজেই একজন অভিবাসী। তিনি সরকারি বাড়িতে থেকে দরিদ্র অবস্থা থেকে বড় হয়েছেন। ফলে সমাজের শ্রমজীবী মানুষ, অভিবাসী মানুষের কষ্ট কিন্তু তিনি জানেন। সবকিছু মিলিয়ে আমি বলব, অভিবাসী যে নীতিটা, সেটা অভিবাসীবান্ধব হবে। আর যদি এ নীতি অভিবাসীবান্ধব হয়, সে ক্ষেত্রে তো বাংলাদেশ ইনক্লুসিভ হয়েই যায়। ফলে আমি আশাবাদী, সবকিছু আগের মতোই থাকবে, সব কিছু পজিটিভ হবে, সহজ হবে।
চলবে...