মোহম্মদ আবুল বাশার, বিশেষ সাক্ষাৎকার - প্রথম পর্ব
প্রবাসীদের কাছ থেকে ঋণ আদায়ের হার আশাব্যঞ্জক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৫, ১৭:৫০

(অগ্রণী ব্যাংক পিএলসি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, যা প্রবাসী আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০২৪ সালে ব্যাংকটি রেমিট্যান্স আহরণে দেশের ৬০টি ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৮১ কোটি ডলার, যা টাকার অঙ্কে ২১ হাজার কোটি টাকারও বেশি। ব্যাংকটির অর্জন ও রেমিট্যান্স নিয়ে এবং এর কার্যক্রম সম্পর্কে মাইগ্রেশন কনসার্ন কথা বলেছে ব্যাংকটির ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহম্মদ আবুল বাশার। আজ এ সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব)
মাইগ্রেশন কনসার্ন: অগ্রণী ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ে বিশেষ করে চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স আনায়নকারী ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংক হিসেবে সাফল্য অর্জন করেছে। কী ধরনের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে অগ্রণী ব্যাংকের এই অর্জন বলে মনে করেন আপনি?
মোহম্মদ আবুল বাশার: ধন্যবাদ। অগ্রণী ব্যাংক সাম্প্রতিক সময়ই নয়, বিগত কয়েক বছর ধরেই সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রেমিট্যান্স আহরণে শীর্ষে এবং দেশের সবক'টি ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণকারী হিসেবে আছে। এর মূল কারণ হলো আমাদের প্রবাসী ভাইদের অগ্রণী ব্যাংকের ওপর আস্থা ও ভালোবাসা। এর পেছনে যে কারণ, সেটা হলো সার্ভিস। আপনারা জানেন, প্রথম থেকেই সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকের সার্ভিস আমাদের কাস্টমারদের কাছে সমাদৃত। এটাই গুরুত্বপূর্ণ কারণ এখানে। আপনারা জানেন, আমাদের প্রবাসী ভাইরা যারা বিদেশে আছেন, তারা বেশির ভাগই শ্রমিকের ছেলে, কৃষকের ছেলে। মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে এরা বিদেশে গেছেন, পরিশ্রম করছেন। এরা কিন্তু সব সময় চাকচিক্যময় ব্যাংকিং বুঝতে চায় না, তারা চায় সেবা। যে ভালো সেবা দিচ্ছে, তার ওপরই আস্থা থাকে। আর সরকারি ব্যাংক বলতে তারা অগ্রণী ব্যাংককেই বোঝে, অন্তত রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে। এ আস্থা আমাদের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম করে অর্জন করেছে।
মা.ক.: একটা প্রণোদনা নীতি রয়েছে সরকারের, রেমিট্যান্স আনায়নের ক্ষেত্রে। এ প্রণোদনা নীতি সার্বিকভাবে রেমিট্যান্স আনায়নের ক্ষেত্রে কতখানি প্রভাব রাখছে বলে আপনি মনে করেন?
মোহম্মদ আবুল বাশার: প্রণোদনা নীতি অবশ্যই একটা প্রভাব রাখছে। এতে সে একটা বাড়তি টাকা পাচ্ছে। দেখা গেল, একজন প্রবাসী ভাই মালয়েশিয়া থেকে এক হাজার রিংগিত পাঠাল। এখন হয়তো এক্সচেঞ্জ রেট অ্যারাউন্ড ৩০ টাকা। তার স্বজন এ হিসাবে ৩০ হাজার টাকা পাচ্ছে। এই বাড়তি রেমিট্যান্সের ফলে প্রায় আরো এক হাজার টাকা বাড়তি পাচ্ছে। ফলে এই যে তার স্বজনকে ব্যাংকে আসতে হলো, তার যাতায়াত খরচ, খাওয়া-দাওয়ার খরচ; সবই এই বাড়তি টাকায় হয়ে গেল। তার মূল টাকায় হাত পড়ল না। সরকারের এই ভর্তুকির টাকাটা অবশ্যই একটা মূল কারণ। তবে এই মুহূর্তে রেমিট্যান্সের বড় প্রবাহটা দেখা যাচ্ছে, এর মূল কারণ হুন্ডি বন্ধ। হুন্ডি নাই এখন, হুন্ডির পরিমাণ একেবারে কমে গেছে। কেন হুন্ডি কমে গেল? কারণ টাকা পাচার বন্ধ হয়েছে। এই পাচারকৃত টাকাই কিন্তু আপনার হুন্ডির কারণ হতো। সে এখানকার টাকা দিয়ে ওই দেশের কারেন্সি তার দরকার ছিল। সে ওই দেশে হয়তো একটা সম্পত্তি ক্রয় করতে চাইত। এখন তো আর পাচারকৃত টাকা নাই, এখন আর এই ডিমান্ডটা নাই। এ জন্য হুন্ডি কমে গেছে, রেমিট্যান্স বাড়ছে বৈধ পথে। এর পেছনে মূল বিষয় হলো গুড গভর্ন্যান্স। এই যে এখন যে আমাদের গভর্নর স্যার, আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ– এই যে সার্বিক সুশাসন, এই সুশাসনের কারণেই অর্থ পাচার বন্ধ। যার প্রভাব সরাসরি পড়েছে রেমিট্যান্সের ওপর। আরেকটি কারণে রেমিট্যান্স বাড়ছে বর্তমানে, সেটা হলো আসন্ন কোরবানির ঈদ। সবাই এ সময় টাকা পাঠায় বাড়িতে। কিছুদিন আগে গেল ঈদুল ফিতর। তখন দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে। বছরের অন্যান্য সময় টাকা পাঠাক না পাঠাক, এই দুইটা সময় প্রবাসীরা টাকা পাঠাচ্ছে।
মা.ক.: ঈদ উপলক্ষ ছাড়াও সারা বছর যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসছে, তাতে কি গ্রাহকদের আস্থার প্রতিফলন আপনি দেখতে পান?
মোহম্মদ আবুল বাশার: আপনি এ দুটি মাস দেখলেন; বাস্তবে কি, চলতি মাসে বিগত মাসের চেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছে। এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকছে বিগত বেশ কিছু সময় ধরে। আপনি টাকা পাচার বন্ধ করতে পারলে রেমিট্যান্স আসবেই। না আসার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। আরেকটা বিষয় হলো, আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের কঠোর তদারকির মধ্যে রাখছে। কোথাও কোনো সমস্যা হলে তারা সাথে সাথে আমাদের কাছে জানতে চাইছে, আমরাও আমাদের সার্ভিস পয়েন্টগুলোর সাথে যোগাযোগ রাখছি। আমাদের প্রবাসী ভাইরা তাৎক্ষণিক সার্ভিস পেয়ে খুশি। ফলে কে্ন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সুষ্ঠু তদারকির প্রভাব পড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহে।
মা.ক.: রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ব্যাংকের বিশেষ কোনো সেবা বা সার্ভিস আছে কিনা আমাদের প্রবাসীর ভাইদের জন্য?
মোহম্মদ আবুল বাশার: হ্যাঁ, প্রবাসী ভাইদের জন্য আমাদের বেশ কিছু সার্ভিস আছে। যেমন, অগ্রণী বিদেশ যাওয়া ঋণ, যার মাধ্যমে আমরা ৫০ হাজার থেকে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত একজন অভিবাসীকে ঋণ বাবদ দিতে পারি এবং সেটা প্রচলিত সুদ হারেই দিয়ে থাকি। ১৫ থেকে ১৮ মাস মেয়াদি এই ঋণ শুধু প্রবাসী ভাইদের জন্যই আমরা দিয়ে থাকি। প্রবাসী ভাইটি জানে, অগ্রণী ব্যাংক একটা ঋণ দিচ্ছে, তারা সেটা নিচ্ছে এবং বিদেশ গিয়ে তারা সে টাকাটা পরিশোধ করে দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে ঋণগুলো আমরা দিয়েছি, তার আদায়ের হার খুবই ভালো। বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা টাকা আদায় করতে পারি না, অথচ এই প্রবাসী ভাইদের টাকা আদায়ে আমাদের কোনো সমস্যা নাই।
(চলবে…)