Logo
×

Follow Us

মতামত

মাফি ইসলাম, মতামত, শেষ পর্ব

জার্মানিতে সুবর্ণ সুযোগ অপরচুনিটি কার্ডে, প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৪৩

জার্মানিতে সুবর্ণ সুযোগ অপরচুনিটি কার্ডে, প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি

মাফি ইসলাম; একজন মিডিয়া গবেষক, সাংবাদিক এবং বর্তমানে জার্মানির ডার্মস্টাড ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপলায়েড সায়েন্সেসের ডক্টরাল সেন্টার ফর সাসটেইনেবিলিটির অধীনে পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত। মাফি ২০২৪ সালে জার্মানির ডার্মস্টাড ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপলায়েড সায়েন্সেস থেকে মিডিয়া, প্রযুক্তি ও সমাজ বিষয়ে এবং ২০২১ সালে সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অব গোথেনবার্গ থেকে রাজনৈতিক যোগাযোগ বিষয়ে দুটি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। গণমাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের একাত্তর টেলিভিশনে, যেখানে তিনি পাঁচ বছর সংবাদ উপস্থাপক ও রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে ইউরোপে যাওয়ার পর তিনি পড়াশোনা ও গবেষণার পাশাপাশি নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ইতালি, পর্তুগাল, ফ্রান্স, স্পেন এবং চেক প্রজাতন্ত্রসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। মাইগ্রেশন কনসার্নের সাথে তিনি কথা বলেছেন জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জার্মানি যাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা, দেশটিতে থাকার সুযোগ-সুবিধা, দেশটিতে ইমিগ্রেশনের সম্ভাবনা, অপরচুনিটি কার্ডসহ নানা বিষয় নিয়ে। মাইগ্রেশন কনসার্নের পক্ষ থেকে তার সাথে কথা বলেছেন মাহবুব স্মারক। তিন পর্বের ধারাবাহিকের আজ শেষ পর্ব। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন: আমরা জানেছি, ইউরোপের উন্নত দেশ জার্মানিতে কর্মী সংকট। তারা বিদেশ থেকে কর্মী খুঁজছে। বছর দশেক পরে দেশটির কর্মী সংকট আরো তীব্র হবে। সেই কারণে জার্মানি নতুন ভিসা অপরচুনিটি কার্ড চালু করেছে। এই নিয়ে বাংলাদেশের পেশাজীবীদের কেমন সুযোগ আছে জার্মানিতে?

মাফি ইসলাম: দারুণ সুযোগ আছে। এটা একটা জব সার্চিং ভিসা। ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, আমেরিকার গ্রিন কার্ড। জার্মানিতে তেমনি অপরচুনিটি কার্ড। এই ভিসা বা কার্ড পেতে আপনার দুটি পদ্ধতি আছে। একটি এক বছরের জন‍্য আপনি অ্যাপ্লাই করতে পারেন। অথবা আপনি ছয় মাসের জন‍্য অ্যাপ্লাই করে আবার ছয় মাসের জন‍্য ভিসা অ্যাপ্লাই করতে পারেন। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন: কী কী কাগজপত্র লাগে আবেদন করতে?

মাফি ইসলাম: দেখেন, এই কার্ডের জন‍্য আপনার মিনিমাম ৬ পয়েন্ট লাগে। আপনার যদি ফরেন ডিগ্রি থাকে, তাহলে পাবেন ৪ পয়েন্ট, বাংলাদেশের কোন রিকগনাইজড্ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যা জার্মান এডুকেশন বোর্ড বা মিনিস্ট্রি রিকগনাইজ করে, তাহলে তারা এই সার্টিফিকেটকে কনসিডার করবে। আপনার যদি ব্যাচেলার ডিগ্রি থাকে, তাহলে আপনি ৪ পয়েন্ট পেয়ে যাবেন। তো ৬ পয়েন্টের মধ‍্যে ৪ পয়েন্ট পেয়ে গেলেন। এরপর যদি আপনার ডয়েচ ভাষা জানা থাকে, তাহলে আপনি আরো ২ পয়েন্ট পেয়ে যাবেন। এখানেই কিন্তু আপনার ৬ পয়েন্ট হয়ে গেল। তাহলে মিনিমাম পয়েন্ট আপনি পেয়ে গেলেন। তারপর আপনার স্পাউজ যদি থাকে, তারও যদি ডিগ্রি থাকে, তারও যদি ডয়েচ জানা থাকে, তাহলে তার জন‍্যও আপনি পয়েন্ট পাবেন। ফলে দেখলেন, মিনিমাম কাট অফ পয়েন্ট পাওয়া খুবই সহজ। একটা সাইট আছে এনাটম, যারা সার্টিফিকেট রিকগনাইজ করে, সেখানে ঢুকে আপনার সার্টিফিকেটগুলো যাচাই করতে পারবেন যে আপনি কত পয়েন্ট পাচ্ছেন। আপনার যদি আইইএলটিএস করা থাকে, তাহলে পয়েন্ট যদি থাকে ৬.৫ বা ৭ এখানেও আপনি ২ পয়েন্ট পাবেন বা যদি ডয়েচ যদি বি-২ থাকে। পাশাপাশি যদি আপনার দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে আপনি আরো ২ পয়েন্ট পাবেন। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন: তার মানে আপনি বলছেন সুযোগ আছে বাংলাদেশের অনেক পেশাজীবীর?

মাফি ইসলাম: প্রচুর সুযোগ আছে। দরকার শুধু যোগ্যতা ও দক্ষতা বাড়ানো আর এক্সপ্লোর করার। বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক এলিজিবল গ্র্যাজুয়েট যারা চাকরি খুঁজছে, তারা ইজিলি এই অপরচুনিটি কার্ডের জন‍্য অ্যাপ্লাই করতে পারে। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন: তো সে ক্ষেত্রে জার্মানিতে কী পরিমাণ যাচ্ছে বাংলাদেশিরা? তারা কী পারছে সুযোগটা নিতে?

মাফি ইসলাম: কী পরিমাণ যাচ্ছে, সেটা বোঝা মুশকিল। কারণ জার্মানিতে কেবল শুরু হলো অপরচুনিটি কার্ডের কার্যক্রম। আমার কাছে এসবের তথ‍্য নাই। তবে আমি শুনেছি যে, কেউ কেউ চেষ্টা করছেন। একটা কথা বলি, যেটা জানতে পারছি যে আবেদনের প্রক্রিয়া মানে সময় সেটাও খুব কম। সময়ে কাজ শুরু হয়। স্টুডেন্ট হিসেবে আবেদন করলে, দুই-আড়াই বছর অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু অপরচুনিটি কার্ডের জন‍্য অ্যাপ্লাই করলে সেটা অনেক কম। আর ডকুমেন্ট চেক লিস্টও কিন্তু খুব বেশি না। ডিগ্রি সার্টিফিকেট, অল্প কিছু ডকুমেন্ট বা মোটিভেশনাল লেটার, আর এখনকার হিসাব অনুযায়ী এক হাজার ২৭ ইউরো করে পার মাসে আপনার খরচ। সেই হিসাবে বছরে ১৩ বা ১৪ লাখ টাকা বা বেশি হলে হয়তো ১৫ লাখ টাকা, যা আপনাকে ব্যাংকে ব্লক করে রাখতে হবে। মানে টাকাটা জমা রাখতে হবে ওদের কোনো একটা ব্যাংকে। এই টাকাটা কিন্তু আপনারই টাকা। জার্মানিতে আপনি যখন যাবেন, তখন এই টাকাটা আপনাকে ফেরত দেবে আপনারই খরচের জন‍্য। তার মানে বাড়তি কোনো খরচ হচ্ছে না, আপনার টাকাই আপনাকে ফেরত দেবে। দেশটিতে যাওয়ার পরে আপনি কিন্তু সরকারি কাজ করতে পারছেন না। যতক্ষণ আপনি আসল জবটা না পাচ্ছেন। তখন কিন্তু আপনি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টার কাজ করতে পারবেন। কারণ তখন ট্রায়াল পিরিয়ডে আছেন। পরে যখনই আপনি কাজের কন্ট্রাক্ট পেয়ে যাবেন, তখন সব কিছু সলভ্ হয়ে যাবে। এটা একটা দারুণ সুযোগ।

মাইগ্রেশন কনসার্ন: সে ক্ষেত্রে জার্মানি যাওয়ার আগে বা পরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনগুলো। 

মাফি ইসলাম: সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভাষা জানা। কারণ ভাষাটা কেউ শিখতে চায় না। দুটো অপশনের কথা বললাম অপরচুনিটি কার্ড ও ভাষা নিয়ে। আমার অনেক পরিচিত জন আছেন, যারা মনে করেন, এখন নতুন একটা ভাষা শিখবো কেন? ইংরেজিটা শিখতে চায় না। বাংলাদেশিদের অনেকে ডয়েচটা শিখতে চায় না। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে কিন্তু জার্মানরা যে জিনিসটা প্রথম দেখে, সেটা হলো ডয়েচ কার কতখানি ভালো। কিন্তু এখানেই বাংলাদেশিদের দুবর্লতা যে তারা ভাষাটা শিখতে চায় না। তখন যদি আপনি এক বছরের জন‍্য অপরচুনিটি কার্ডের জন‍্য এপ্লাই করেন, পরে গিয়ে দেখা যাবে যে এই ভাষা না শেখার কারণে সেখানে গিয়ে ভাষা শিখতে সময় লাগে, তা আপনি দিতে পারবেন না। ফলে মানসিকভাবে অশান্তিতে থাকবেন। ওখানে গিয়ে আপনি ভাষাটা শিখতে পারবেন না। ভাষা যদি আপনি শিখে যান, আপনি যদি দক্ষ কর্মী নাও হন, আপনি কাজ পেয়ে যাবেন। হোটেলের কথাও যদি ধরি, আপনি রিসেপসনিষ্ট হিসেবে কাজ চান, ভাষা না জানলে তো চাকরি পাবেন না। 

আরেকটা হলো কোনো ধরনের টেকনিক্যাল নলেজ না নিয়ে বিদেশ যাওয়া। যেমন ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকা ও ড্রাইভিং জানা এটাও একটা বড় স্কিল। জার্মানি দেখবেন অফিস, ইন্ডাস্ট্রি শহর থেকে দূরে। ওখানে গাড়ি চালিয়েই আপনাকে যেতে হবে। ওরা চায় যেন আপনি গাড়ি চালিয়েই সেখানে যান। স্কিল থাকলে প্রয়োজনে আপনাকে গাড়ি দেবে। বাংলাদেশিদের অনেকে এটা মাথায় নেয় না। কারণ জার্মানিতে ড্রাইভিং শেখা, লাইসেন্স পাওয়া খুব কঠিন, সময় লাগে। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন: তাহলে সে ক্ষেত্রে কী করা উচিত?

মাফি ইসলাম: বাংলাদেশ থেকে ড্রাইভিং শিখে যাওয়া উচিত। অনেক জরুরি। ওখানে গিয়ে একটা পরীক্ষা দিয়ে কনভার্ট করে নিতে পারবেন। কিন্তু আপনাকে ড্রাইভিং লাইসেন্সটা নিতে হবে। এটা একটা সহজ প্রক্রিয়া। আপনার ড্রাইভিং স্কিল যদি একফোঁটাও না থাকে, তাহলে অনেক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। প্রক্রিয়াটা লম্বা। অনেক ক্লাস করতে হয়। একেকটা ক্লাস ৭৫ ইউরো দিতে হয়। অনেক টাকা খরচ লাগে। পাস করাও কঠিন। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন: আর কোন সেক্টরের কথা আপনি বলতে পারেন?

মাফি ইসলাম: কেয়ার গিভার সেক্টর, নার্সিং সেক্টর; এসব স্কিল যদি হয়, তাহলে সব অনেক ইজি হয়। কারণ এই নার্সিং কেয়ার গিভারের অনেক কর্মীর সংকট। হোটেল ম্যানেজমেন্টের ওপর যদি স্কিল থাকে, সেটাও আপনার কাজে আসবে। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন: বাংলাদেশিরা ওখানে ভালো করছে কিনা?

মাফি ইসলাম: বাংলাদেশি কমিউনিটি খুবই ভাইব্রেন্ট। দুর্দান্ত। ইউরোপের অন‍্যান‍্য দেশে কাজ, নাগরিকত্ব পেতে যতটা জটিলতা পোহাতে হয়, জার্মানি সে ক্ষেত্রে অনেক কম ও সিস্টেমেটিক। প্রথম প্রথম একটু চ্যালেঞ্জিং মনে হবে কিন্তু আল্টিমেটলি ধৈর্যটা আপনাকে একটা জায়গায় নিয়ে পৌঁছাবে। যেটা আসলে আপনি চাচ্ছিলেন। বাংলাদেশিরা খুব ভালো করছে। বিশেষ করে যারা স্টুডেন্ট হিসেবে গিয়েছে, তারা সবাই ভালো করছে। তারা যারা যে প্রফেশনে কাজ করতে চেয়েছে, তারা তা করতে পেরেছে। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন: জার্মানিতে যারা যেতে চায়, তাদের আপনি সবশেষ কী পরামর্শ দেবেন?

মাফি ইসলাম: বলব, একটু গবেষণা করতে। আমি যা বললাম, তা মিলিয়ে নেয়া। দেখা যে কোন সেক্টরে লোক বেশি দরকার। নিজের যোগ্যতা আর নিজের ইন্টারেস্ট দেখে শুনে বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া। বাংলাদেশে থেকেই সেই সেক্টরে কোর্স করা, দক্ষতা অর্জন করা। প্রয়োজনে অনলাইনে কোর্স করা। স্টুডেন্ট হিসেবে যেতে চাইলে যে ডিসিপ্লিনে পড়াশোনা করুন, সেটা ইংলিশে হবে কিন্তু আমি জোর দেব, যেন ডয়েচটা শিখে নেন। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন: আপনাকে অশেষ ধন‍্যবাদ মাইগ্রেশন কনসার্নকে সময় দেয়ার জন‍্য। 

মাফি ইসলাম: আপনাকেও ধন‍্যবাদ।

Logo