মাফি ইসলাম, মতামত, ২য় পর্ব
জার্মানিতে নার্সিং ও কেয়ার গিভারের চাহিদা আকাশচুম্বী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:৩৯

মাফি ইসলাম; একজন মিডিয়া গবেষক, সাংবাদিক এবং বর্তমানে জার্মানির ডার্মস্টাড ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপলায়েড সায়েন্সেসের ডক্টরাল সেন্টার ফর সাসটেইনেবিলিটির অধীনে পিএইচডি গবেষণায় নিয়োজিত। মাফি ২০২৪ সালে জার্মানির ডার্মস্টাড ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপলায়েড সায়েন্সেস থেকে মিডিয়া, প্রযুক্তি ও সমাজ বিষয়ে এবং ২০২১ সালে সুইডেনের ইউনিভার্সিটি অব গোথেনবার্গ থেকে রাজনৈতিক যোগাযোগ বিষয়ে দুটি মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। গণমাধ্যমে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের একাত্তর টেলিভিশনে, যেখানে তিনি পাঁচ বছর সংবাদ উপস্থাপক ও রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৯ সালে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশে ইউরোপে যাওয়ার পর তিনি পড়াশোনা ও গবেষণার পাশাপাশি নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক, ইতালি, পর্তুগাল, ফ্রান্স, স্পেন এবং চেক প্রজাতন্ত্রসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেছেন। মাইগ্রেশন কনসার্নের সাথে তিনি কথা বলেছেন জার্মানিতে স্টুডেন্ট ভিসা, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জার্মানি যাওয়ার সুযোগ ও সম্ভাবনা, দেশটিতে থাকার সুযোগ-সুবিধা, দেশটিতে ইমিগ্রেশনের সম্ভাবনা, অপরচুনিটি কার্ডসহ নানা বিষয় নিয়ে। মাইগ্রেশন কনসার্নের পক্ষ থেকে তার সাথে কথা বলেছেন মাহবুব স্মারক। তিন পর্বের ধারাবাহিকের আজ দ্বিতীয় পর্ব।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: তাহলে চাকরি পেতে গেলে জার্মান ভাষার লেভেল কোন পর্যায় পর্যন্ত করতে পারলে ভালো হয়?
মাফি ইসলাম: জার্মানিতে চাকরি পেতে গেলে বি টু লেভেল পর্যন্ত ভালো হয়। বি টু লেভেল যথেষ্ট। এই লেভেলের জার্মান ভাষা শিখতে গেলে একদমই কষ্ট করতে হবে না। আমার অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে পারি। দেখেন আপনার যদি জার্মান লেঙ্গুয়েজ জানা থাকে, আপনি যদি বেসিক কমিউনিকেশন করতে পারেন, তাহলে আপনার চাকরি পেতে একদমই বেগ পেতে হবে না। কারণ জার্মানিতে চাকরির অভাব নাই। মোট কথা, সব সেক্টরেই চাকরি আছে। কিন্তু দেখা যায় অফিসিয়াল জবে ইংরেজি লেঙ্গুয়েজও অনেক ক্ষেত্রে দেখে। কিন্তু তারপরও তারা চায়, আপনি ডয়েচ জানবেন বা জেনে যাবেন দেশটিতে। ব্যক্তিগত পর্যায়ের যে কমিউনিকেশনগুলো তারা ডয়েচ প্রেফার করে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: সায়েন্স ও টেকনোলজি ছাড়া কি ভেরিয়াস সাবজেক্টে পড়ার সুযোগ আছে? বা পড়তে যেতে পারবে আমাদের শিক্ষার্থীরা?
মাফি ইসলাম: অবশ্যই, এর বাইরে নানা বিষয়ে উচ্চতর বা অনার্সে তারা শিক্ষা নিতে যেতে পারবে। এখন ডিপেন্ড করবে যে সে কী করতে চায়। শিক্ষার্থী কি কর্পোরেট সেক্টরে কাজ করতে চায়, সেকি আইসিটি সেক্টরে কাজ করতে চায়, টেকনিক্যাল কোন ব্যাকগ্রাউন্ডে কাজ করতে চায়, মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরে… আমি বলছি, আইসিটি সেক্টরে অনেক ডিমান্ড। তার মানে এই না যে অন্যান্য সেক্টরের যে ডিসিপ্লিন আছে, সেগুলোর ডিমান্ড একেবারে কম। আমি বলি একদমই কম না। আমি যদি রেঙ্ক করি, তবে আইসিটি এক নম্বরে থাকবে, দুই তিনে থাকবে ধরেন মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং।
আর যদি কেউ সোশ্যাল সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের হন বা হিউম্যানিটিস ব্যাকগ্রাউন্ডের হন, তাও কোনো সমস্যা নাই। আপনি যদি চিন্তা করেন, আপনি একজন রিসার্চার হবেন বা পিএইচডি করবেন, সে ক্ষেত্রে আপনার হিউজ অপরচুনিটি তো আছে। প্রচুর ফান্ডিং হচ্ছে জার্মানিতে, প্রতিটি স্টেটেই। স্টেটের আলাদা ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা থাকে। ফেডারেল গভর্নমেন্ট থেকেও থাকে। আর জার্মানিতে পিএইচডি মানে একটা জব। তার মানে আপনি শুধু স্টুডেন্ট না, আপনাকে কিন্তু জব কন্টাক্ট দেবে। জার্মানিতে কর্পোরেট জব করে যে অর্থ আপনি আয় করবেন, দেখা যায় অনেক বেশি অর্থ পাওয়া যাচ্ছে পিএইচডি করতে গিয়ে। তার মানে হলো আপনি পড়াশোনা করবেন, সে জন্য কিন্তু আপনি টাকা পাবেন। সেই টাকা কিন্তু স্ট্রাইপেন না বা স্কলারশিপ অ্যামাউন্ট না। এটা একটা পূর্ণাঙ্গ জব। পাশাপাশি যদি আপনি ইউনিভার্সিটির আন্ডারে পিএইচডি করেন, তাহলে বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকে। আপনি যদি প্রফেসরের আন্ডারে কাজ করেন, রিসার্চের কাজ করেন; প্লাস আপনি যদি লেকচার দেন মাস্টার্স বা ব্যাচেলর লেভেলে, সেখান থেকেও আপনার আয় হতে পারে। সুতরাং চাকরির পাশাপাশি গবেষণারও সুযোগ আছে। এটা যে কেবল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ব্যাকগ্রাউন্ডের জন্য, তেমনটা নয়। যারা সোশ্যাল সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের তাদের জন্যও বটে। তাছাড়া হিউম্যানিটিস, সোশ্যাল সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। স্পেশালি ধরেন সাইকোলজিস্ট বা বিহেভিয়ারাল সায়েন্স, ইকোলজি ডিসিপ্লিন এসবের কিন্তু অনেক চাহিদা। বিশেষত রিসার্চ সেক্টরে। কর্পোরেট সেক্টরেও কিন্তু বিহেভিয়ারাল সায়েন্সের ওপর অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ কাস্টমারদের বিহেভিয়ার, মার্কেট অ্যানালাইসিসের ক্ষেত্রে কাস্টমারের বিহেভিয়ার প্যাটার্ন জানা, বোঝা এবং এখানে এক্সপার্টিজ থাকাটা ওরা অনেক গুরুত্বপর্ণ মনে করে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: জার্মানিতে অনেক শ্রমিক সংকট আমরা দেখছি। ভবিষ্যতে সংকট আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই সংকট কাটাতে বিদেশ থেকে কর্মী নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সেটা কতখানি প্রকট? বাংলাদেশের কোন ধরনের পেশাজীবীরা জার্মানিতে যেতে পারেন বা ভাবতে পারেন?
মাফি ইসলাম: আপনি যদি জার্মানির পপুলেশন ইনডেক্স চিন্তা করেন, তাহলে দেখবেন, তাদের গড় বয়স ৪০-এর ওপরে। নেটিভ মানুষ একটু এইজড্। বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। সাধারণত আমরা জানি তরুণ, নবীনরা দেশের সম্পদ। তরুণ, নবীনদের সংখ্যা তাদের দেশে একেবারেই কমে গেছে। জার্মানির প্রতিটি স্টেটে যদি যান, দেখবেন সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মী একটু বেশি বয়স্ক। তাদের অনেকেই রিটায়ার্ডমেন্টে চলে যাবে আগামী ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। তো এখন যে কর্মী সংকট, সেটা আরো প্রকট হবে সামনের দিনগুলোতে। এই চিত্র প্রতিটি সেক্টরে।
সে ক্ষেত্রে আমি বলব, যারা দেশটিতে পড়াশোনা করতে চায় না; কেবল কর্মী হিসেবে জার্মানি যেতে চায়, তাদের সবচেয়ে বড় সুযোগ আছে কেয়ার গিভারের চাকরিতে। এছাড়া নার্সিংয়েরও প্রচুর সুযোগ আছে বিশেষত ওল্ড হোমগুলোতে। তো এই দিকে যদি একটু ফোকাস করা যায়, তাহলে খুব ভালো হবে। দেশে যদি একটা ট্রেনিং বা ডিগ্রি নিতে পারে। আর যদি ভাষা শিখে ফেলা যায়, তাহলে অনেক ভালো হবে। কারণ যাদের সেবা দেয়া হবে তাদের ভাষা তো হবে মেক্সিমাম ক্ষেত্রে ডয়েচ। আপনি অফিসে কিন্তু ইংরেজি কথা বলতে পারবেন কিন্তু হোমে বা কেয়ার হোমে, বাসাবাড়ি ডয়েচ ভাষা লাগবে। কারণ তারা ডয়েচ প্রেফার করে। তাহলে আপনি যদি ডয়েচের বেসিকটা জানেন, অন্তত বি ওয়ান বা বিটু হলে তো চমৎকার হয় । পাশাপাশি কেয়ার গিভারের জন্য যদি স্কিলগুলো থাকে, আপনার ট্রেনিং থাকে, সার্টিফিকেট কোর্স করা থাকে, তাহলে তার অ্যাপ্লিকেশন হাইলি রিকমেন্ডেট হবে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: তাহলে স্টুডেন্টরা কীভাবে যোগাযোগ করবে চাকরির জন্য? স্পেসিফিক কোনো ওয়ে আছে?
মাফি ইসলাম: আছে। ইউরোপে, খুব স্পেসিফিক যদি বলি জার্মানির কথা, সেখানে জব বোর্ড আছে। বাংলাদেশে যেমন বিডি জবস, তেমনই। সেখানে আছে গ্লাসডোর, স্টেপস্টোন ও লিংকড্ ইন। লিংকড ইন কিন্তু জবের যোগাযোগের অনেক বড় একটা জনপ্রিয় মাধ্যম। সেখানে জব পোস্ট করা হয়। এটার মাধ্যমে যে কারো জব অ্যাপ্লিকেশন করা সম্ভব। এছাড়া ইনডিড.ডিই। এসব জব বোর্ডে অনেক জবের অ্যাডভারটাইজমেন্ট থাকে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন: সে ক্ষেত্রে এসব সাইট থেকেই অ্যাপ্লাই করা সম্ভব?
মাফি ইসলাম: বাংলাদেশ থেকে এসব সাইটে অ্যাপ্লাই করতে পারবেন যে কেউ, যদি তিনি মনে করেন তিনি দক্ষ ও যোগ্য।
চলবে…