Logo
×

Follow Us

মতামত

মোহাম্মদ আবুল বশির, মতামত, শেষ পর্ব

কাজ জানা দক্ষ কর্মীদের চাকরির অভাব নেই সৌদি আরবে

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৫৩

কাজ জানা দক্ষ কর্মীদের চাকরির অভাব নেই সৌদি আরবে
মোহাম্মদ আবুল বশির; বাংলাদেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভির সৌদি ব্যুরো চিফ। সৌদি আরবের প্রবাসী সাংবাদিক ফোরামের সাবেক সভাপতি। সৌদি আরবের রিয়াদে সাংবাদিকতা করেন প্রায় ৩৫ বছর ধরে। আবুল বশির ১৯৯১ সালে সৌদি আরব যান। সেখানে তিনি দৈনিক খবর পত্রিকার ব্যুরো চিফ হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। মাইগ্রেশন কনসার্নের পক্ষ থেকে মাহবুব স্মারক কথা বলেন তার সাথে। তিনি কথা বলেছেন সৌদিতে বাংলাদেশের কর্মীদের ইকামার সংকট, বেকারত্ব, দেশের কর্মীদের দক্ষতা, সুনাম, সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে। আজ থাকছে শেষ পর্ব। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন: আপনি বলছেন, সৌদি আরবে অনেকে বেকার হচ্ছেন। কিন্তু কারা ভালো আছেন? কাদের কাজ নিয়ে কোনো সমস‍্যা হচ্ছে না?

মোহাম্মদ আবুল বশির: হ্যাঁ, যারা কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে সৌদি আরবে আসছেন, তারা কিন্তু কেউই বেকার নন। তাদের কাজের কোনো অভাব নেই। তারা এসেই ভালো কাজ পাচ্ছেন এবং প্রতিষ্ঠিত হতে পারছেন। তাদের কাজের জন্য ঘুরতে হয় না বা চিন্তা করতে হয় না। আর যাদের কারিগরি জ্ঞান নেই, তারা ভীষণ অসুবিধায় পড়ছেন। শুধু সৌদি আরব নয়, আপনি মধ্যপ্রাচ্যের যে কোনো দেশেই যান না কেন, কারিগরি জ্ঞান থাকলে কোথাও কাজের  অভাব হবে না; প্রতিষ্ঠান পেতে কোনো সমস্যা হবে না।

মাইগ্রেশন কনসার্ন: আপনি বলছিলেন, দক্ষ শ্রমিকরা কেউ বেকার থাকছে না। এ বিষয়টি একটু সুনির্দিষ্টভাবে বলবেন, কোন কোন খাতে দক্ষতা অর্জন করলে বাংলাদেশের শ্রমিকরা ভালো কাজের নিশ্চয়তা পাবে, কোন ধরনের কাজের বেশি চাহিদা আছে বর্তমানে সৌদি আরবে?

মোহাম্মদ আবুল বশির: সুনির্দিষ্টভাবে বললে এখানে ইলেক্ট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, কার্পেন্টার, ওয়েল্ডিং, কম্পিউটার অপারেটর, নার্সসহ বেশ কয়েকটি পেশায় দক্ষ শ্রমিকের কাজের অভাব নেই। ফলে যারাই সৌদি আরবে আসতে চান, এই বিষয়গুলোতে উপযুক্ষ কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে আসুন, সৌদি আরবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে।

মাইগ্রেশন কনসার্ন: এর পাশাপাশি আরবি ভাষা জানা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন আপনি?

মোহাম্মদ আবুল বশির: আমাদের বাংলাদেশে ইংরেজি জানা দক্ষ লোক পাওয়া যায় না। এখানে সৌদি আরবে ভারত, ফিলিপাইন থেকে কর্মীরা আসে। তারা ভালো ইংরেজি জানে। ফলে ভালো ভালো কাজ পেয়ে যায়। আমাদের কর্মীরা দক্ষতা নিয়েও আসে না, ইংরেজিটাও ভালো জানে না। অনেকে আরবি জানে না। কেউ যদি কাজের পাশাপাশি ইংরেজিটা, আরবিটা ভালো জানে, সৌদি আরবে ভালো অর্থ উপার্জন তার জন্য কোনো সমস্যা নয়। 

মাইগ্রেশন কনসার্ন: আবুল বশির, নতুন অভিবাসী কর্মীদের এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটা বলে মনে করেন?

মোহাম্মদ আবুল বশির: এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তিন মাসের ইকামা। সৌদি আরবের আইন যথেষ্ট কড়া এবং এই মুহূর্তে তারা কঠোরভাবে সবার কার্যক্রম মনিটর করছে। ফলে অবৈধ হয়ে সৌদি আরবে কোনো কাজ করতে পারা রীতিমতো অসম্ভব। তাই যারাই সৌদি আরবে আসতে চান, অবশ্যই দীর্ঘমেয়াদি ইকামা নিয়ে আসবেন, কাজের নিশ্চয়তা নিয়ে আসবেন এবং অবশ্যই প্রশিক্ষণ নিয়ে দক্ষ হয়ে আসবেন।

মাইগ্রেশন কনসার্ন: আমাদের দক্ষতার বিষয়ে আলাপ করছিলাম, সৌদি আরবে থাকা অন্য দেশগুলোর তুলনায় আমাদের কর্মীরা কি একটু কম দক্ষ?

মোহাম্মদ আবুল বশির: একটা জিনিস আপনাকে বলি, সৌদি আরবে যেমন অদক্ষ শ্রমিক আসছে, তেমনি বাংলাদেশি অনেক দক্ষ উদ্যোক্তাও সৌদি আরবে ভীষণ প্রতিষ্ঠিত। তারা সৌদি আরবে বিনিয়োগ করছে, ব্যবসায়িকভাবে সফল, অনেক সম্মানজনক জীবনযাপন করছে। আমি অনেককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ না করে সৌদি আরবে কেন বিনিয়োগ করছেন? তিনি বলেছেন, সুশাসনের কথা। তিনি জানেন, সৌদি সরকার তাকে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিচ্ছে, ব্যবসায়িক নিরাপত্তা দিচ্ছে। বাংলাদেশে এগুলোর অভাব আছে বলে মনে করছেন তারা। ফলে এটিও রেমিট্যান্স কম যাওয়ার একটি কারণ বলে মনে করা হয়।

মাইগ্রেশন কনসার্ন: আপনি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে আছেন। সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা বাংলাদেশ সম্পর্কে কী ধারণা পোষণ করে, তারা বাংলাদেশকে কীভাবে দেখে?

মোহাম্মদ আবুল বশির: ধন্যবাদ, আমি আজ প্রায় ৩৫ বছর এ দেশে আছি। এখানকার সবাই বাংলাদেশ সম্পর্কে অত্যন্ত উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। তারা বলেন, বাংলাদেশিরা অনেক পরিশ্রমী, কর্মঠ। তারা বাংলাদেশিদের ভালোবাসেন। তবে হ্যাঁ, কিছু বাংলাদেশি আছেন, যারা অপরাধের সাথে যুক্ত। গুটিকয়েক বাংলাদেশির জন্য পুরো বাংলাদেশি কমিউনিটিরই সম্মানহানি হচ্ছে। এখানে সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যেই আইন অমান্য করছে, তাৎক্ষণিক শাস্তি পাচ্ছে। তাই সব প্রবাসী বাংলাদেশিকেই আমি অনুরোধ করব, আইন মেনে চলে সৌদি আরবে বসবাসের জন্য। তারা এ কথাটি যেন মনে রাখে। আমাদের বাংলাদেশি ভাইরা এখানে ব্যবসা করছেন, বিনিয়োগ করছেন। তারা আবার কর্মসংস্থান তৈরি করছেন, আরো বাংলাদেশি কর্মীরা আসছেন। এ পুরো কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়বে যদি আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না হই।

মাইগ্রেশন কনসার্ন: আমাদের জনশক্তি বাজারের প্রায় ৭০ ভাগই একদেশমুখী অর্থাৎ সৌদি আরবকেন্দ্রিক। কোনো কারণে যদি দেশটির জনশক্তির বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ে, তখন আমাদের উপায় কী হবে?

মোহাম্মদ আবুল বশির:  আমি এর কোনো আশঙ্কাই দেখছি না। কারণ সৌদি আরবে দক্ষ শ্রমিকের কাজের কোনো অভাব নেই। আমরা যদি দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে পারি, সৌদি আরবে চাকরির কোনো সমস্যা হবে বলে মনে করি না। তাই সিদ্ধান্ত আমাদের- আমরা কি দক্ষ শ্রমিক পাঠানোর দিকে আরো মনোযোগী হবো না বাজার হারানোর শঙ্কায় থাকব? সৌদি আরবের সরকার ও জনগণ প্রবাসীদের প্রতি যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। তাদের সহযোগিতা ও সহানুভূতি না পেলে আমাদের এ দেশে কাজ করাটা সমস্যার হতো। তাই আমি কৃতজ্ঞতা জানাই এ দেশের সরকার ও জনগণকে। আমি আমাদের দেশের প্রবাসীদের বলব, আমাদের শ্রমে-ঘামেই আমাদের পরিবারের স্বাচ্ছন্দ্য। ফলে এমন কোনো কাজ আমাদের করা উচিত হবে না, যে কাজ আমাকে ও আমার দেশ এবং জনগণকে বিপদে ফেলে। এ জিনিসটি প্রত্যেক প্রবাসীরই চিন্তা করতে হবে।

মাইগ্রেশন কনসার্ন: আপনাকে অশেষ ধন‍্যবাদ মাইগ্রেশন কনসার্নকে সময় দেয়ার জন‍্য।

মোহাম্মদ আবুল বশির: আপনাকেও ধন‍্যবাদ।

Logo