ওয়াশিংটন পোস্টের বিশ্লেষণ
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অভিবাসন নীতিতে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে পরিবার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৪

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির নামে পরিবার বিচ্ছিন্ন করার যে ভয়ংকর অধ্যায় শুরু হয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসনের সময়, তার প্রভাব এখনো কাটেনি। ওয়াশিংটন পোস্টের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ২০১৮ সালে চালু হওয়া “জিরো টলারেন্স” নীতির আওতায় হাজার হাজার অভিবাসী শিশুকে তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে আলাদা করা হয়েছিল। অনেক শিশুই এখনো পরিবারে ফিরতে পারেনি।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই নীতির ফলে প্রায় ৫ হাজার ৫০০ শিশু পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়। তাদের মধ্যে অনেকেই এখনো মানসিক ট্রমায় ভুগছে। কেউ কেউ এখনো জানে না, তাদের বাবা-মা কোথায়। অনেক শিশুকে এমন পরিবারে পাঠানো হয়েছিল, যারা তাদের ভাষা বা সংস্কৃতি বোঝে না। ফলে তারা বেড়ে উঠেছে এক ধরনের নিঃসঙ্গতা ও বিভ্রান্তির মধ্যে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এই নীতিকে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বরাবরই “নিষ্ঠুর” এবং “অমানবিক” বলে অভিহিত করেছে। যদিও প্রশাসনের দাবি ছিল, এটি অবৈধ অভিবাসন রোধে একটি “প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা”। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেছে, শিশুদের আলাদা করে রাখার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে।
বর্তমান প্রশাসন ক্ষতিপূরণ ও পুনর্মিলনের উদ্যোগ নিলেও অনেক পরিবার এখনো বিচ্ছিন্ন। কিছু শিশুকে তাদের অভিভাবকের সঙ্গে পুনরায় মিলিত করা সম্ভব হয়নি, কারণ তাদের বাবা-মাকে হয়তো দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, অথবা খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এই নীতির বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত নিরাপত্তা সংস্থাগুলোও সমালোচনার মুখে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নথিপত্র ঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় শিশুরা হারিয়ে গেছে বা ভুলভাবে অন্য পরিবারে স্থানান্তরিত হয়েছে।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, “এই নীতি শুধু অভিবাসন নয়, এটি শিশু অধিকার লঙ্ঘনের একটি জ্বলন্ত উদাহরণ”। তারা আরো দাবি করছেন, ভবিষ্যতে যেন এমন নীতি আর কখনো না আসে, তার জন্য আইনি ও নীতিগত সংস্কার জরুরি।
এই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির মানবিক দিক নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। পরিবার বিচ্ছিন্নতার এই অধ্যায় শুধু অভিবাসীদের নয়, গোটা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে।
তথ্যসূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট