অভিবাসন নীতির কড়াকড়িতে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:২৫

ক্যালিফোর্নিয়ার সেন্ট্রাল ভ্যালিতে টমেটো মৌসুম চলছে। সেখানে কাজ করছেন লিডিয়া, যিনি ২৩ বছর আগে কিশোরী বয়সে যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধভাবে এসেছিলেন। এখন তার সবচেয়ে বড় ভয়- ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা তাকে গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র চাইতে পারেন। তিনি বলেন, “আমাদের কাজ করতে হয়, পরিবার চালাতে হয়, ভাড়া দিতে হয়।"
লেবার ডে উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে শ্রমিকদের অবদান উদযাপন করা হলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের জীবন এখন অনিশ্চয়তায় ভরা। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত ১২ লাখের বেশি অভিবাসী শ্রমবাজার থেকে হারিয়ে গেছেন; আইনি ও অবৈধ উভয় ধরনের অভিবাসী।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের মোট শ্রমশক্তির প্রায় ২০ শতাংশ অভিবাসী। কৃষি, মাছ ধরা ও বনজ কাজে ৪৫ শতাংশ, নির্মাণে ৩০ শতাংশ এবং সেবামূলক খাতে ২৪ শতাংশ কর্মী অভিবাসী। কিন্তু আইসিইর (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) অভিযান ও গ্রেপ্তারের ফলে অনেকেই কাজ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বা গোপনে জীবনযাপন করছেন।
টেক্সাসের ম্যাকঅ্যালেন অঞ্চলে ফসল ঘরে তোলার সময় শ্রমিক সংকটে ভুগছে কৃষকরা। “আমাদের তরমুজ আর বাঙ্গির মৌসুমে অনেক ফসল নষ্ট হয়ে গেছে,” বলেন এলিজাবেথ রদ্রিগেজ, একজন কৃষিশ্রমিক অধিকারকর্মী।
ক্যালিফোর্নিয়ার ভেনচুরা কাউন্টিতে লিসা টেটের খামারে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। “লোকজনকে রাস্তায়, লন্ড্রিতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে,” বলেন তিনি। আতঙ্কে অনেক শ্রমিক কাজেই আসছেন না।
নির্মাণ খাতেও একই চিত্র। যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক শহরে নির্মাণ কাজ কমে গেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার রিভারসাইড অঞ্চলে ৭ হাজার ২০০ এবং লস অ্যাঞ্জেলেসে ৬ হাজার ২০০ চাকরি হারিয়েছে। “আমরা আরো লোক নিয়োগ দিতে পারতাম, যদি অভিবাসন নীতির কারণে শ্রমিক সংকট না হতো,” বলেন অর্থনীতিবিদ কেন সাইমনসন।
স্বাস্থ্যসেবাতেও অভিবাসীদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। পিউর তথ্য অনুযায়ী, হোম কেয়ার সহায়তাকারীদের ৪৩ শতাংশ অভিবাসী। ক্যালিফোর্নিয়ার SEIU 2015 ইউনিয়নের অর্ধেক সদস্যই অভিবাসী। “যদি অভিবাসীরা না থাকেন, তাহলে কে আমাদের হাসপাতাল, নার্সিং হোম আর কৃষিক্ষেত্রে কাজ করবে?” প্রশ্ন তোলেন ইউনিয়ন নেতা আর্নুলফো ডে লা ক্রুজ।
এই বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে অভিবাসন নীতির প্রভাব দিন দিন গভীর হচ্ছে। যেখানে আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা আর শ্রমিক সংকট একসাথে বেড়ে চলেছে।
তথ্যসূত্র: এপি