যুক্তরাষ্ট্রে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে হিমশিম খাচ্ছেন প্রবাসীরা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৬:৫৭

যুক্তরাষ্ট্রে চলমান মূল্যস্ফীতির ঢেউ এখন শুধু স্থানীয়দেরই নয়, চরম চাপে ফেলেছে লাখো প্রবাসীকে। বিশেষ করে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীরা, যারা যুক্তরাষ্ট্রের শহর ও শহরতলির রেস্টুরেন্ট, নির্মাণ, পরিবহন এবং খুচরা পণ্যের ব্যবসায় শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন, তারা পড়েছেন নতুন আর্থিক সংকটে।
২০২৫ সালের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমদানি পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে, যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে খাদ্যদ্রব্য, গৃহস্থালী সামগ্রী, পোশাক এবং ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনেক প্রবাসীর মাসিক খরচ গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ ডলার পর্যন্ত বেড়েছে। ফলমূল, চিজ, বাদাম ও কফির মতো প্রতিদিনের খাদ্যপণ্যের দাম ১৪.৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বাসা ভাড়া, শিশুদের স্কুল ফি এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যয়ও এই সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশেষ করে যেসব অভিবাসী নতুন এসেছেন এবং এখনো স্থায়ী আয় বা কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা পাননি, তাদের জন্য জীবনযাত্রার খরচ সামাল দেওয়া হয়ে উঠেছে একটি কঠিন সংগ্রাম। উচ্চ ব্যয়ের বিপরীতে আয় স্থবির থাকায় বহু প্রবাসী নিরুপায় হয়ে দিনে ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এই সংকট শুধু আর্থিক নয়; সামাজিক এবং মানসিক স্তরেও তার অভিঘাত প্রকট। অভিবাসীদের মধ্যে অনেকে পরিবার থেকে দূরে থাকায় একা জীবনযাপনের চাপে ভুগছেন। আবার মিশ্র-পরিবারে (যেখানে কেউ নাগরিক, কেউ অভিবাসী) দেখা যাচ্ছে আর্থিক উদ্বেগকে কেন্দ্র করে পারিবারিক অশান্তি। কড়াকড়ি অভিবাসন নীতির ফলে যেসব অভিবাসী কাজের অনুমতি ছাড়াই অবস্থান করছেন, তারা যাচ্ছেন আত্মগোপনে, যার ফলে মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
যদিও কিছু প্রবাসী এখন কমিউনিটি ফুড ব্যাংক, স্থানীয় কৃষকের বাজার এবং দ্বিতীয় হাতের পণ্যের দোকানের ওপর নির্ভর করে খরচ কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছেন, তবুও সংগতিপূর্ণ জীবনধারা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে বাধ্য হচ্ছেন দেশে ডলার পাঠানো কমিয়ে দিতে, যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে।
বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই মূল্যবৃদ্ধি শুধু অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির বিষয় নয়, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্যনীতির প্রতিফলন। প্রবাসীদের জন্য দরকার নীতিগত সহায়তা, কমিউনিটি পর্যায়ের উদ্যোগ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার সহায়তা, যেন তারা পুনরায় স্থিতিশীল জীবনযাত্রায় ফিরতে পারেন।
তথ্যসূত্র: অক্সফোর্ড ইকোনমিকস