যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির কড়াকড়িতে সংকটে বৃদ্ধ নিবাস

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ জুলাই ২০২৫, ০০:১৩

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির কড়াকড়ি বৃদ্ধ নিবাস ও দীর্ঘমেয়াদি সেবা খাতকে গভীর সংকটে ফেলেছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অবৈধ ও অস্থায়ী অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় বিদেশে-জন্ম কর্মীদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, যা বৃদ্ধদের সেবায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে।
এ. জি. রোডেজের সিইও ডেক ক্যাটো জানান, আটজন কর্মী সাময়িক নিরাপত্তা মর্যাদা (টিপিএস) হারিয়ে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। টিপিএসের মাধ্যমে অভিবাসীরা যুদ্ধ বা দুর্যোগপীড়িত দেশ থেকে এসে বৈধভাবে কাজ করতে পারেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এই সুবিধা বাতিল করছে। ক্যাটো বলেন, “আজ আটজন, কাল হয়তো আরো বেশি”- এই অনিশ্চয়তা বৃদ্ধ নিবাসগুলোকে বিপর্যস্ত করছে।
লিডিং এইজের সিইও কেটি স্মিথ স্লোন বলেন, “আমরা যেন ঘুষি খাচ্ছি”। কারণ অনেক কর্মী আইসের ভয়ে কাজে আসছেন না, সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না, এমনকি আবেদনকারীর সংখ্যাও কমে গেছে।
পিএইচআইর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে ৪ মিলিয়নের বেশি সরাসরি সেবাকর্মীর মধ্যে ২৫ শতাংশের বেশি বিদেশি-জন্ম। এই কর্মীরা নিম্ন মজুরিতে কঠিন কাজ করেন, যেমন নিরাপত্তাহীন বৃদ্ধদের সেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, খাবার পরিবেশন ইত্যাদি।
বোকা র্যাটনের সিনাই রেসিডেন্সের সিইও র্যাচেল ব্লামবার্গ ইতোমধ্যে ১০ জন কর্মী হারিয়েছেন এবং আরো ৩০ জন হাইতিয়ান কর্মী টিপিএস হারিয়ে চাকরি হারাতে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, “এটা বরফের চূড়া মাত্র।" কারণ পরোক্ষভাবে কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের বহিষ্কারও কর্মী সংকট বাড়াচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যসেবা খাতে অভিবাসীদের ভূমিকা অপরিহার্য, বিশেষ করে বৃদ্ধদের যত্নে। কিন্তু ভিসা প্রক্রিয়া বিলম্বিত, TPS বাতিল এবং শরণার্থী গ্রহণ বন্ধের ফলে নতুন কর্মী আসা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান এখন কানাডা বা জার্মানিতে কর্মী পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে, কারণ সেসব দেশ অভিবাসীদের স্বাগত জানাচ্ছে।
সেবা খাতে কর্মী সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, মানবিক সংকটও। ন্যাশনাল ডমেস্টিক ওয়ার্কার্স অ্যালায়েন্সের প্রেসিডেন্ট আই-জেন পু বলেন, “এই নীতিগুলো শুধু কর্মী সংকট নয়, ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। মানুষ সেবা পাচ্ছে না, পরিবারকে কাজ ছেড়ে সেবা দিতে হচ্ছে এবং সেবাকেন্দ্রগুলো ভেঙে পড়ছে।”
পিএইচআইর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২১-২০৩১ সময়কালে ৯.৩ মিলিয়ন সরাসরি সেবাকর্মীর পদ পূরণ করতে হবে। কিন্তু অভিবাসন নীতির কড়াকড়ি এই চাহিদা পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
এই সংকটের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী বাড়ছে এবং সেবা খাতের ওপর চাপ বাড়ছে। অভিবাসন নীতির পরিবর্তন না হলে সেবার মান, ব্যয় ও প্রবেশাধিকারে ভয়াবহ সংকট দেখা দিতে পারে।
তথ্যসূত্র: এপি