অভিবাসী ধরপাকড়ে স্থবির যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ জুন ২০২৫, ০৯:০৫

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া অবস্থান শ্রমবাজারে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্লেষকরা। এতে করে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোয় কর্মী সংকট তৈরি হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং ব্যবসার স্থিতিশীলতার ওপর।
মারিল্যান্ডভিত্তিক ১ হাজার ২০০ কর্মীর পরিচ্ছন্নতা কোম্পানি ‘টোটাল কোয়ালিটি’-এর প্রধান নির্বাহী ভিক্টর মোরান জানান, ইতোমধ্যে তার প্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ জন কর্মী চলে গেছেন। কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন ভেনেজুয়েলা ও নিকারাগুয়ার অভিবাসীদের দেওয়া সাময়িক সুরক্ষা প্রত্যাহার করেছে। মোরানের আশঙ্কা, এই নীতি সম্প্রসারিত হলে আরো শত শত কর্মী হারাতে পারেন তিনি, যাদের বিকল্প পাওয়া সহজ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ১৮ শতাংশ শ্রমিকই অভিবাসী, যা ১৯৯৪ সালে ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। এই অভিবাসী শ্রমিকরাই যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাণ, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি এবং গৃহস্থালী সেবা খাতে প্রধান চালিকাশক্তি।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এখন কেবল অবৈধ অভিবাসীদেরই নয়, বরং শিক্ষার্থী ভিসাধারী, শরণার্থী এবং সাময়িক কর্মপারমিটধারীদেরও টার্গেট করছে। এর ফলে বৈধ অভিবাসীরাও আতঙ্কে ভুগছেন।
এল সালভাদর থেকে আসা ৭৩ বছর বয়সী জাস্টিনো গোমেজ জানান, তিনি গত ৩০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন এবং টিপিএস (অস্থায়ী সুরক্ষিত অবস্থা) প্রোগ্রামের আওতায় বৈধভাবে কাজ করছেন। কিন্তু সম্প্রতি হাইতি ও ভেনেজুয়েলার পিপিএস বাতিল হওয়ায় তিনি আতঙ্কে আছেন।
টেক্সাসের ‘কেমব্রিজ কেয়ারগিভারস’ এবং ‘ম্যানচেস্টার কেয়ার হোমস’-এর সিইও অ্যাডাম ল্যামপার্ট বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে ৮০ শতাংশ কর্মীই অভিবাসী। তিনি বলেন, আমি বিশেষভাবে বিদেশিদের নিয়োগ দিই না। তবে আবেদনকারীদের বেশির ভাগই অভিবাসী।
ট্রাম্পের পদক্ষেপের কারণে তিনি ইতোমধ্যেই কয়েকজন কর্মী হারিয়েছেন। একই সঙ্গে পরিবারগুলো যেসব অবৈধ অভিবাসী দিয়ে সেবা করাত, তাদের সরে যাওয়ায় এখন তার প্রতিষ্ঠানের ওপর চাহিদা বাড়ছে। ফলে তাকে মজুরি বাড়াতে হচ্ছে, যার পরিণতিতে সেবার মূল্যও বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের নীতির কারণে অভিবাসীরা গা-ঢাকা দিচ্ছেন, নতুনরা আসতে ভয় পাচ্ছেন। এতে শ্রমবাজার সংকুচিত হচ্ছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক জিওভানি পেরি বলেন, ‘এই নীতি দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি গতিশীল অর্থনীতি থেকে ধীরগতির, স্থবির অর্থনীতিতে পরিণত করতে পারে।’
নির্মাণ খাতেও এমন প্রভাব পড়েছে। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব হোমবিল্ডার্স জানায়, অনেক জায়গায় হঠাৎ করে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এতে করে নির্মাণ ব্যয় এবং সময় দুটিই বাড়ছে।
ট্রাম্প সাম্প্রতিক সময়ে কৃষি ও হসপিটালিটি খাত থেকে সাময়িকভাবে রেইড স্থগিত করেছেন। তবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি জানিয়েছে, ‘ওয়ার্কপ্লেস রেইড আমাদের অভিবাসন নীতির মূল স্তম্ভ।’ তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কঠোর এই নীতি অব্যাহত থাকলে তার মূল্য দেবে গোটা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি।
তথ্যসূত্র: চ্যানেল টোয়েন্টিফোর