যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থী ভিসার নতুন নির্দেশনা ঘিরে বিতর্ক

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ জুন ২০২৫, ০৯:১৭

যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন এক নির্দেশনা ঘিরে দেশ-বিদেশে চলছে তীব্র বিতর্ক। ২৬ জুন ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ঘোষণা দেয়, এখন থেকে F, M ও J ক্যাটাগরির শিক্ষার্থী ও বিনিময় ভিসার আবেদনকারীদের নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রোফাইল ‘পাবলিক’ রাখতে হবে, যাতে মার্কিন কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই সহজে করতে পারে।
এই নির্দেশনায় বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা প্রদান একটি জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত এবং অনলাইন উপস্থিতি হলো প্রার্থীর উদ্দেশ্য, ব্যক্তিত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাইয়ের অংশ। আর এ কারণেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গোপনীয়তা সীমিত করে ‘পাবলিক’ রাখা এখন বাধ্যতামূলক।
আবেদনকারীদের প্রতিক্রিয়া ও উদ্বেগ
এই ঘোষণার পরপরই বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও অধিকারকর্মীদের মধ্যে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। অনেকেই এটিকে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার লঙ্ঘন বলে অভিহিত করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী অরিণ আহমেদ বলেন, “ভিসার ফর্মে সোশ্যাল মিডিয়ার ঘর ছিল, তবে আমি তা পূরণ করিনি। আমার প্রোফাইল উন্মুক্ত, কিন্তু তবুও দুশ্চিন্তা ছিল, যদি সেটি কেন্দ্র করে প্রশ্ন ওঠে।” তিনি জানান, তার সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি।
কী বলছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ?
ডয়েচে ভেলের অনুসন্ধানে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এক ই-মেইলে জানায়, “শিক্ষার্থী ভিসা কোনো অধিকার নয়; এটি একটি সুযোগ। প্রতিটি ভিসা অনুমোদন একটি জাতীয় নিরাপত্তা সিদ্ধান্ত। যাদের যাচাই সম্ভব নয়, তারা ভিসা পাবে না।”
তারা আরো ব্যাখ্যা করে, নতুন নীতির আওতায় আবেদনকারীদের অনলাইন কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে তাদের মানসিকতা ও উদ্দেশ্য মূল্যায়ন করা হবে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী এই নির্দেশনাকে "বাকস্বাধীনতার সম্পূর্ণ পরিপন্থি" আখ্যা দিয়ে বলেন, “যে যুক্তরাষ্ট্র একসময় বাকস্বাধীনতার প্রতীক ছিল, ট্রাম্প প্রশাসনের পর সেখানে বহু কিছু পাল্টে গেছে।”
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমেদ বলেন, “ওরাই এখন বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রক। আমাদের বিকল্পও নেই, চাইলে তাদের শর্ত মানতে হবে।”
তবে ভিন্নমতও রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, “বাকি অনেক দেশ যেখানে গোপনে নজরদারি চালায়, যুক্তরাষ্ট্র অন্তত খোলাখুলিভাবে বলছে। আপনি যেতে চাইলে শর্ত মানবেন, না চাইলে স্বাধীনতা আপনার।”
সামাজিক মাধ্যমেও প্রতিক্রিয়া
মার্কিন দূতাবাসের ফেসবুক পোস্টের নিচে বহু মন্তব্য জমেছে। কেউ লিখেছেন, “আমার ফেসবুক উন্মুক্ত, তবে এটি আমার স্বাধীনতা বিক্রি করার মতোই।” অন্যজন মন্তব্য করেছেন, “এটাই বুঝি আমেরিকায় বাকস্বাধীনতা!”
এই বিতর্ক শুধু প্রযুক্তি বনাম গোপনীয়তা নয়; বরং ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক অভিবাসন নীতির রূপরেখা হয়ে উঠতে পারে। এর মাধ্যমে একটি প্রশ্ন আরো তীব্র হয়ে উঠেছে- ব্যক্তিগত স্বাধীনতা কি নিরাপত্তার নামে সীমিত করা উচিত? নাকি এটি শর্তসাপেক্ষ ‘স্বেচ্ছা’ সমঝোতা?
তথ্যসূত্র: ডয়েচে ভেলে