
চার দিনব্যাপী বাংলা বইমেলার পর্দা নামল ২৬ মে রাতে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের জ্যামাইকা পারফর্মিং আর্টস সেন্টারে (১৫৩-১০ জ্যামাইকা এভিনিউ) ৩৪তম আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলায় বিপুলসংখ্যক বইপ্রেমী, লেখক ও প্রকাশকের মিলনমেলা ঘটেছিল। এ বছরও বইমেলার আয়োজন করে নিউ ইয়র্ক মুক্তধারা ফাউন্ডেশন।
২৩ মে শুরু হওয়া এই উৎসবে ২৫টিরও বেশি প্রকাশনা সংস্থা অংশগ্রহণ করে এবং তিন সহস্রাধিক নতুন ও পুরাতন বই প্রদর্শিত হয়।
বইমেলায় লেখক আড্ডা, কবিতা পাঠ, আলোচনা সভা, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাসহ নানা কর্মসূচি ছিল। বাংলা সাহিত্যের খ্যাতনামা লেখকরা উপস্থিত ছিলেন এবং পাঠকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
বইমেলার উদ্বোধন করেন জনপ্রিয় লেখক সাদাত হোসাইন। উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন মার্কিন বন্ধু ফিলিস টেইলর।
অনুষ্ঠানে আরো ছিলেন বীরপ্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.) ডা. সিতারা বেগম। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রেহমান সোবহান, ভাষাতাত্ত্বিক ও অধ্যাপক গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক অধ্যাপক রওনক জাহানসহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া উপস্থিত দর্শনার্থীদের মধ্যে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত সাহিত্যপ্রেমীরা। মেলার চতুর্থ দিনে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে।
আয়োজকরা জানান, আগামী বছর বইমেলাকে আরো বৃহৎ পরিসরে আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।
মেলার তৃতীয় দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে ছিল আয়োজক কর্তৃক একাধিক পুরস্কার ঘোষণার খবর। মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫, মুক্তধারা আজীবন সম্মাননা ২০২৫ এবং চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশনা পুরস্কার ২০২৫- এই তিনটি পুরস্কার ঘোষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় আগত বাঙালির মুখচ্ছবি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
এ বছর নিউ ইয়র্ক মুক্তধারা-জিএফবি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৫ পেয়েছেন অধ্যাপক ড. পবিত্র সরকার। পবিত্র সরকার একজন ভারতীয় বাঙালি, ভাষাতাত্ত্বিক পণ্ডিত, সাহিত্যিক, নাট্যসমালোচক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক।
পুরস্কারের অর্থমূল্য ছিল তিন হাজার ডলার। গত বছর এই পুরস্কার পেয়েছিলেন কথাসাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, আমেরিকার নিউজার্সিভিত্তিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান জিএফবি পুরস্কারের অনুদান প্রদান করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট গোলাম ফারুক ভূঁইয়া মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের অন্যতম উপদেষ্টা।
নিউ ইয়র্ক মুক্তধারা আজীবন সম্মাননা ২০২৫ পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক ড. আবদুন নূর। এই কথাসাহিত্যিক ১৯৫৬ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালে সংবাদপত্রে লিখেছেন প্রচুর গল্প এবং উপন্যাস। তিনি একাধিক উপন্যাস লিখেছেন। অন্যদিকে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকদের উৎসাহিত করতে নগদ এক হাজার ডলারের ‘চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশনা পুরস্কার’ জিতেছে কবি প্রকাশনী।
বইমেলার আহ্বায়ক ও ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রাক্তন প্রধান রোকেয়া হায়দার, মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ সাহা, ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন ডা. জিয়াউদ্দীন আহমেদ তৃতীয় দিনে পুরস্কারগুলো ঘোষণা এবং কৃতী ব্যক্তিদের হাতে প্রদান করে মেলাকে সাফল্যের চূড়ায় উন্নীত করেন।
ছুটির দিন রোববার এবং শেষ দিন বইমেলায় তিল ধারণের জায়গা ছিল না। নতুন বইয়ের অনুষ্ঠান ছাড়াও বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পীদের গান শ্রোতাদের গভীর রাত পর্যন্ত মুগ্ধ করে রাখে।
উল্লেখ্য, গত রোববার নিউ ইয়র্ক টাইমসে বইমেলা নিয়ে ‘এ ফেস্টিবাল অব ওয়ার্ডস’ শিরোনামে নিউজ প্রকাশিত হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বইমেলায় শত শত মানুষের সমাবেশকে পত্রিকাটি আনন্দ-উৎসব হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সাহিত্যের প্রতি মানুষের উৎসাহকে অভিবাদন জানিয়েছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ