
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা তীব্রভাবে বেড়েছে৷ সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, হাজার হাজার আবেদন এখনো নিষ্পত্তির অপেক্ষায়।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জানিয়েছেন, যেসব আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার হারিয়েছেন, তাদের তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে৷ তাই প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাজ্যের বাইরে তৈরি করা কোনো ‘রিটার্ন সেন্টার’ বা প্রত্যাবাসন কেন্দ্রে রাখার জন্য কিছু দেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হয়েছে৷
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যুক্তরাজ্যে আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে৷ ২০২৪ সালে ৮৪ হাজার ২০০টি আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে৷ সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্যে গড়ে ২৭ হাজার ৫০০ আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছিল৷
২০২২ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতি ১০ হাজার জনে আশ্রয় চেয়ে আবেদন করেছেন ১৩ জন৷ আর ইউরোপীয় ইউনিয়নে সংখ্যাটি ছিল প্রতি ১০ হাজারে ২৫ জন৷
২০২৩ সালে যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের প্রায় ১১ শতাংশ আশ্রয়প্রার্থী বা শরণার্থী ছিলেন৷ ২০১৯ সালে যা ছিল মাত্র ছয় শতাংশ৷
২০২৪ সালে প্রাথমিক আশ্রয় আবেদনে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল ৫৩ শতাংশ৷ ২০০৪ সালে সেই হার ছিল ৮৮ শতাংশ এবং ২০২২ সালে ছিল ২৪ শতাংশ৷
২০০৪ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে প্রাথমিক আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর অন্তত চার ভাগের তিন ভাগ আশ্রয়প্রার্থী ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন৷ আপিলের পর এক-তৃতীয়াংশ আশ্রয়প্রার্থী সফল হয়েছিলেন৷
২০২৪ সালে ৯ হাজারের বেশি বেশি প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীকে ফেরত পাঠানো হয়েছে৷ সংখ্যাটি ২০২৩ সালের।
সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে আশ্রয় আবেদন সম্পর্কিত ২ লাখ ২৪ হাজার ৭০০ আবেদন নিয়ে কাজ করছিল দেশটির অভিবাসন কর্তৃপক্ষ৷ এর মধ্যে ৮৭ হাজার ২০০ আশ্রয় আবেদন ছিল প্রাথমিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়৷ আর এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ ছিল প্রাথমিক আবেদন প্রত্যাখ্যানের পর আপিল আবেদন সম্পর্কিত৷
২০২২ সালের তুলনায় সংখ্যাটি কিছুটা কমেছে৷ কিন্তু ২০১৪ সালের তুলনায় এখনো চার গুণ বেশি৷ এর কারণ হলো, প্রাথমিক সিদ্ধান্তের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে আশ্রয়প্রার্থীদের এবং একই সঙ্গে যুক্তরাজ্য ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত পাচ্ছেন বেশির ভাগ মানুষ৷
ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যাও নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না৷ সম্প্রতি চ্যানেল পেরিয়ে আসা অভিবাসীর সংখ্যাও তীব্রভাবে বেড়েছে৷
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এক লাখ ৪৮ হাজার অভিবাসী তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যের উপকূলে পৌঁছেছেন৷
চলতি বছর শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অন্তত ১৩ হাজার অভিবাসী চ্যানেল পার হয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন এবং সংখ্যাটি ২০২৪ সালের একই সময়ের চেয়ে বেশি৷
২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী এসেছেন পাকিস্তান থেকে৷ এরপরই আছে পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানের নাগরিকরা৷ আগের বছরগুলোতে সিরিয়া এবং ইরান থেকেই বেশিসংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী যুক্তরাজ্যে এসেছিলেন৷
তথ্যসূত্র: ইনফো মাইগ্রেন্টস