Logo
×

Follow Us

উত্তর আমেরিকা

কাবেরী মৈত্রেয়, নিউইয়র্ক থেকে

যুক্তরাষ্ট্রে ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৪২

যুক্তরাষ্ট্রে ৫ হাজার শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল, বেশির ভাগই ভারতীয়

যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ছাত্রদের বিরুদ্ধে, বিশেষ করে ভারতীয় ছাত্রদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমেরিকান ইমিগ্রেশন লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রতিবেদন অনুসারে সংগঠনটি সম্প্রতি রেকর্ড করা ৩২৭টি ভিসা বাতিলের ঘটনার প্রায় অর্ধেকই ভারতীয় ছাত্রদের বিরুদ্ধে।

‘আন্তর্জাতিক ছাত্রদের বিরুদ্ধে অভিবাসন প্রয়োগের পদক্ষেপের সুযোগ’ শীর্ষক রিপোর্টের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, যেসব ছাত্রের ভিসা বাতিল করা হয়েছে, তাদের ৫০ শতাংশ ভারত থেকে ও ১৪ শতাংশ চীন থেকে। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল এবং কিছু  বাংলাদেশের ছাত্রও এই তালিকায় রয়েছে।

চার মাস ধরে ইউএস পররাষ্ট্র দপ্তর এবং ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট বিদেশি ছাত্রদের ডাটা, কার্যকলাপ এবং সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, এই পর্যবেক্ষণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে করা হচ্ছে। ফলস্বরূপ, কোনো অপরাধমূলক ইতিহাস না থাকলেও বা ক্যাম্পাস বিক্ষোভে জড়িত না থাকলেও শিক্ষার্থীদের ভুল শনাক্ত করার ঝুঁকি রয়েছে।

গত মার্চ মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও "ক্যাচ অ্যান্ড রিভোক" ‘ধরা এবং বাতিল’ নামে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন, যা ছাত্র ভিসাধারীদের নজরদারি ও শনাক্ত করবে। রুবিও বলেন, এই ছাত্রদের সোশ্যাল মিডিয়া কার্যকলাপও পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদি "ইহুদি-বিদ্বেষ" বা ফিলিস্তিন ও হামাসের প্রতি সমর্থনের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ইউএস হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (DHS) স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর ইনফরমেশন সিস্টেম (SEVIS) পোর্টালের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ছাত্র এবং এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের দর্শনার্থীদের ট্র্যাক করে।

ICE-এর একটি নোটিশ অনুসারে, SEVIS সিস্টেমের মাধ্যমে ৪,৭৩৬ জন আন্তর্জাতিক ছাত্রের ভিসা স্ট্যাটাস বাতিল করা হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই F1 ভিসাধারী।

ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়াটিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। মাত্র ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ভিসা বাতিলের নোটিশ পেয়েছে। তারা ই-মেইলের মাধ্যমে তা পেয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুজন শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক বিক্ষোভে জড়িত থাকার প্রমাণ ছিল। এছাড়া নোটিশ জারি করার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি। অনেক শিক্ষার্থী সরকারের কাছ থেকে কোনো নোটিশ পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের অবহিত করেছে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের কোনো প্রমাণ বা ব্যাখ্যাও দেওয়া হয় না, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ তো বহু দূরের কথা।

AILA এই প্রশাসনিক পদক্ষেপকে নজিরবিহীন বলে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, সরকারের এই ধরনের পদক্ষেপ বেশ কিছু আইনি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে এবং আইনি লড়াইয়ের প্রয়োজন হতে পারে।

এই ভিসা বাতিলের প্রভাব খুবই তাৎপর্যপূর্ণ; কারণ ৩২৭টি মামলার ৫০ শতাংশই ঐচ্ছিক ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ (OPT) ধারক। OPT আন্তর্জাতিক F1 ভিসাধারীদের ১২ মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার অনুমতি দেয়। এই শিক্ষার্থীরা স্নাতক হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে কোনো না কোনো কাজে জড়িত। তাদের ভিসা বাতিলের ফলে এই শিক্ষার্থীরা আর কাজ করতে পারবে না। ভিসা বাতিলের ফলে যেসব রাজ্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে; এর মধ্যে রয়েছে-টেক্সাস, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, মিশিগান ও অ্যারিজোনা।

কিন্তু উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবৃতি এবং স্কুল কর্মকর্তাদের সাথে চিঠিপত্রের পর্যালোচনা অনুসারে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) দেখেছে, মার্চের শেষের দিক থেকে মার্কিন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থায় প্রায় ১ হাজার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে অথবা তাদের আইনি মর্যাদা বাতিল করা হয়েছে।


Logo