১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর; বাহরাইনের স্বাধীনতা দিবসের প্রেক্ষাপট
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৫২
পারস্য উপসাগরের ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র বাহরাইন প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বরকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করে। যদিও দেশটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট, তবে জাতীয় দিবস পালিত হয় ১৬ ডিসেম্বর। এর কারণ হলো, ওই দিনই আমির ঈসা বিন সালমান আল খলিফা সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। স্বাধীনতা ও শাসকের অভিষেককে একত্রে জাতীয় দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে বাহরাইন।
বাহরাইন ও ব্রিটেনের সম্পর্ক শুরু হয় ১৯ শতকের গোড়ায়। প্রথমে সমুদ্র দস্যু দমন ও নিরাপত্তা চুক্তি হলেও ধীরে ধীরে ব্রিটিশরা দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রভাব বিস্তার করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশরা পারস্য উপসাগরে তাদের সামরিক উপস্থিতি বাড়ায়। তবে ১৯৬০-এর দশকে তারা ঘোষণা দেয়, সুয়েজের পূর্বাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার করবে। এর ফলে বাহরাইনসহ উপসাগরীয় দেশগুলো স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যায়।
১৯৭১ সালে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এক জরিপে বাহরাইনের জনগণ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশের পক্ষে মত দেয়। এরপর ১৫ আগস্ট ১৯৭১ সালে বাহরাইন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং ব্রিটেনের সঙ্গে বন্ধুত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করে।
যদিও স্বাধীনতার প্রকৃত তারিখ ১৫ আগস্ট, তবে বাহরাইন সরকার ১৬ ডিসেম্বরকে জাতীয় দিবস হিসেবে নির্ধারণ করে। কারণ ওই দিন আমির ঈসা বিন সালমান আল খলিফা সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। স্বাধীনতার আনন্দ ও নতুন শাসকের অভিষেককে একত্রে জাতীয় দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটি। ফলে প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বাহরাইনের স্বাধীনতা ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠে।
বাহরাইনে জাতীয় দিবস সবচেয়ে বড় উৎসব। রাজধানী মানামা ও অন্যান্য শহরে আতশবাজি, কনসার্ট, প্যারেড, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। সরকারি ভবন ও রাস্তাঘাটে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্কুল, অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। অনেক সময় উদযাপন দুই দিন ধরে চলে ১৬ ও ১৭ ডিসেম্বর।
বাহরাইনের জাতীয় দিবস শুধু স্বাধীনতার স্মৃতি নয়, বরং দেশের আধুনিক ইতিহাসের প্রতীক। স্বাধীনতার পর বাহরাইন দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়। তেল ও গ্যাসের পাশাপাশি ব্যাংকিং, পর্যটন ও শিল্প খাত গড়ে ওঠে। জাতীয় দিবস তাই বাহরাইনের জনগণের কাছে স্বাধীনতা, ঐক্য ও অগ্রগতির প্রতীক।
স্বাধীনতার পাঁচ দশক পর বাহরাইন এখন উপসাগরীয় অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র। দেশটি আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা রাখছে। জাতীয় দিবস উদযাপন তাই শুধু অতীতের স্মৃতি নয়, বরং ভবিষ্যতের পথচলার প্রতীকও বটে।
logo-1-1740906910.png)