কাতারে অবস্থানরত বেকার অভিবাসী শ্রমিকদের রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি ও মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে এসব শ্রমিককে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীতে পাঠানো হচ্ছে বলে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো জানিয়েছে।  

বিজনেস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস রিসার্স সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারে কর্মসংস্থান হারানো অনেক শ্রমিককে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে যোগদানের প্রলোভন দেখানো হচ্ছে। তাদের বলা হচ্ছে, সেনাবাহিনীতে যোগ দিলে স্থায়ী চাকরি, ভালো বেতন এবং অন্যান্য সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে বাস্তবে অনেক শ্রমিক প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।  

অভিযোগ রয়েছে, এসব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের অর্থ আদায় করা হচ্ছে। অনেক সময় তাদের ভুয়া চুক্তি দেখানো হয় এবং প্রতিশ্রুত সুবিধা দেওয়া হয় না। ফলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি জীবন ঝুঁকিতেও পড়ছেন।  

মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এ ধরনের নিয়োগ আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। অভিবাসী শ্রমিকরা সাধারণত অর্থনৈতিক কারণে বিদেশে যান। কিন্তু তাদের সামরিক কাজে যুক্ত করা হলে তা তাদের মৌলিক অধিকার হরণের শামিল।  

রাশিয়ার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়া নতুন সৈন্য সংগ্রহে চাপের মুখে রয়েছে। এ কারণে বিদেশে থাকা অভিবাসী শ্রমিকদের লক্ষ্য করা হচ্ছে।  

কাতারে অবস্থানরত শ্রমিকদের অনেকেই দক্ষিণ এশিয়া ও আফ্রিকার দরিদ্র দেশ থেকে এসেছেন। তারা চাকরি হারিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। এই সুযোগে দালালরা তাদের রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে পাঠানোর চেষ্টা করছে।  

মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এ ধরনের নিয়োগ শ্রমিকদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হলে জীবনহানির ঝুঁকি বাড়বে। একই সঙ্গে পরিবারগুলোও আর্থিক ও সামাজিক সংকটে পড়বে।  

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষ করে কাতার সরকারকে শ্রমিকদের সুরক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া শ্রমিক প্রেরণকারী দেশগুলোকে তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।  

সব মিলিয়ে বলা যায়, কাতারে বেকার অভিবাসী শ্রমিকদের রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে নিয়োগের অভিযোগ উদ্বেগজনক। এটি শুধু শ্রমিকদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে না, বরং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও শ্রম আইনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করছে।