গত কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে একটি সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে যে, সৌদি আরব অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশটি বহুল আলোচিত ও সমালোচিত ‘কাফালা’ ব্যবস্থা বাতিল করেছে, যা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল। ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে লক্ষ লক্ষ অভিবাসী নতুন অধিকার পাচ্ছেন এবং কর্মক্ষেত্রে স্বাধীনতা বাড়ছে।
‘কাফালা’ ব্যবস্থায় একজন বিদেশি শ্রমিককে তার নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া চাকরি পরিবর্তন, দেশত্যাগ বা বাসস্থান পরিবর্তনের সুযোগ ছিল না। ফলে অনেক সময় শ্রমিকরা শোষণের শিকার হতেন, এমনকি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটত। নিয়োগকর্তার হাতে পাসপোর্ট আটকে রাখার মতো অনৈতিক চর্চাও ছিল এই ব্যবস্থার অংশ।
সৌদি সরকারের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে অভিবাসী শ্রমিকরা নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই চাকরি পরিবর্তন করতে পারবেন, দেশত্যাগ করতে পারবেন এবং নিজস্ব সিদ্ধান্তে বাসস্থান পরিবর্তন করতে পারবেন। এই পরিবর্তন শ্রমিকদের আত্মমর্যাদা, স্বাধীনতা এবং কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কাফালা ব্যবস্থা বাতিলের ফলে প্রবাসী শ্রমিকদের মানসিক চাপ কমবে, কাজের পরিবেশ উন্নত হবে এবং শোষণ ও নির্যাতনের ঝুঁকি কমবে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার লক্ষ লক্ষ শ্রমিক যারা সৌদি আরবে কাজ করেন, তাদের জন্য এটি একটি বড় স্বস্তির খবর।
বাংলাদেশি অভিবাসন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তের ফলে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকবে এবং সৌদি আরবের শ্রমবাজারে আরো স্বচ্ছতা আসবে। একই সাথে বাংলাদেশ সরকারের উচিত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য নতুন কৌশল গ্রহণ করা।
তবে বাস্তবায়ন পর্যায়ে নজরদারি ও শ্রমিকদের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি। অনেক শ্রমিক এখনো কাফালা ব্যবস্থার নিয়ম জানেন না বা পরিবর্তনের সুযোগ সম্পর্কে অবগত নন। তাই দূতাবাস, এনজিও এবং গণমাধ্যমের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই পরিবর্তনের সুফল পৌঁছে দিতে হবে মাঠ পর্যায়ে।
logo-1-1740906910.png)