Logo
×

Follow Us

মধ্যপ্রাচ্য

সৌদির শ্রমবাজারে বাংলাদেশের নতুন কৌশল

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ১০:১৩

সৌদির শ্রমবাজারে বাংলাদেশের নতুন কৌশল

বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে শ্রম সম্পর্কের নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে ৬ অক্টোবর ২০২৫, যখন দুই দেশের মানবসম্পদ ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীরা একটি ঐতিহাসিক শ্রমচুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তির মাধ্যমে সাধারণ শ্রমিক নিয়োগে একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি হয়েছে, যা শ্রমিকদের অধিকার, কল্যাণ ও চুক্তিভিত্তিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবে। 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদ সংস্থায় ইউরেশিয়া রিভিউ বলছে, সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। ১৯৭৩ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত প্রায় ৪.৭৫ মিলিয়ন বাংলাদেশি শ্রমিক সৌদি আরবে কাজ করেছেন। বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ বাংলাদেশি সেখানে কর্মরত, যাদের অধিকাংশ নির্মাণ, পরিষ্কার, উৎপাদন ও গৃহকর্মে নিয়োজিত। ২০২২ সালে সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৪.৫৪ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়ায় ৩.৭৭ বিলিয়ন এবং ২০২৪ সালে আরে কমে ২.৭৪ বিলিয়নে।

সৌদি সরকারের ‘ভিশন ২০৩০’ প্রকল্পের আওতায় NEOM, The Line, Trojena-এর মতো মেগা প্রকল্পে বিপুল শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। বাংলাদেশ এই চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তবে এর জন্য প্রয়োজন দক্ষতা উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ কাঠামো শক্তিশালীকরণ এবং সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বিত কূটনৈতিক উদ্যোগ।

নতুন চুক্তির মাধ্যমে শ্রমিকদের জন্য মানসম্পন্ন চুক্তি, নিয়োগে স্বচ্ছতা, যৌথ পর্যবেক্ষণ ও নিয়োগকারীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। এতে বাংলাদেশ একটি দক্ষ শ্রম সরবরাহকারী দেশ হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে আরো গ্রহণযোগ্যতা পাবে।

তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। অনেক দক্ষ শ্রমিকের নেই আনুষ্ঠানিক সনদ, নেই একটি পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেস। ভিসা ব্যবসা, উচ্চ নিয়োগ খরচ, দালাল সিন্ডিকেট এবং ইকামা নবায়ন ফি শ্রমিকদের জন্য বড় বোঝা। এছাড়া অপ্রত্যাশিতভাবে দেশে ফিরে আসা, স্বাস্থ্যসেবা সংকট এবং কর্মস্থলে মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক।

বিশ্বকাপ ও এশিয়ান গেমসের মতো বড় আয়োজন সামনে রেখে সৌদি আরবকে শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। কাতারের বিশ্বকাপে শ্রমিক মৃত্যুর ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

বাংলাদেশকেও তার দূতাবাসের ভূমিকা জোরদার করতে হবে; চিকিৎসা ও আইনি সহায়তা, ইকামা ফি কমানোর উদ্যোগ এবং সৌদি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে। একটি চাহিদাভিত্তিক শ্রম রপ্তানি নীতি প্রণয়ন করে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো, রেমিট্যান্স বাড়ানো এবং শ্রমিক নির্যাতন কমানো সম্ভব।

এই চুক্তি শুধু শ্রম রপ্তানি নয়, বরং একটি কৌশলগত অংশীদারিত্বের সূচনা; যেখানে উন্নয়ন, মর্যাদা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি একসঙ্গে এগিয়ে যাবে।

Logo