জর্ডানের একটি শরণার্থীশিবিরে জন্ম নেওয়া ফিলিস্তিনি বিজ্ঞানী ওমর এম ইয়াঘি এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। ‘মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক’ (MOF) নামে একধরনের আণবিক কাঠামো আবিষ্কারের জন্য তিনি জাপানের সুসুমু কিতাগাওয়া ও অস্ট্রেলিয়ার রিচার্ড রবসনের সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কারে ভূষিত হন।
নোবেল কমিটির মতে, এই গবেষণা পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, পানির সংকট মোকাবিলা এবং কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে যুগান্তকারী সম্ভাবনা তৈরি করেছে। ইয়াঘি বলেন, “বিজ্ঞান এমন এক ক্ষেত্র, যা সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করে।”
১৯৬৫ সালে জর্ডানের রাজধানী আম্মানের একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণ করেন ইয়াঘি। শৈশব কাটে একটি ছোট ঘরে, যেখানে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গবাদিপশুও থাকত। ১৫ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। ইংরেজি না জেনে শুরু করেন হাডসন ভ্যালি কমিউনিটি কলেজে, পরে ইউনিভার্সিটি অ্যাট অ্যালবানি থেকে স্নাতক এবং ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
বর্তমানে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং বিশ্ববিখ্যাত রেটিকুলার কেমিস্ট্রির জনক হিসেবে পরিচিত। তার উদ্ভাবিত MOF প্রযুক্তি দিয়ে মরুভূমির বাতাস থেকে পানি আহরণ, শিল্প কার্বন আটকানো এবং হাইড্রোজেন সংরক্ষণের মতো কাজ সম্ভব হয়েছে।
নোবেল জয়ের খবর শুনে ইয়াঘি বলেন, “আমি বিস্মিত, আনন্দিত এবং অভিভূত।” তিনি আরো বলেন, “সুন্দর জিনিস তৈরি করতে এবং জটিল সমস্যার সমাধানে কাজ করাই আমার লক্ষ্য।”
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ দ্বিতীয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ইয়াঘিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখেন, “জর্ডানের বিজ্ঞানী অধ্যাপক ওমর ইয়াঘির নোবেল জয় আমাদের জন্য গর্বের।”
ফিলিস্তিনি সাংবাদিক মোহাম্মদ শেহাদ ইয়াঘির শৈশবের দুঃখ-কষ্টের কথা স্মরণ করে বলেন, “ইসরায়েল গাজায় শত শত শিক্ষাবিদকে হত্যা করেছে, কিন্তু ইয়াঘির মতো মানুষ দেখিয়ে দেন, প্রতিকূলতা পেরিয়ে কীভাবে বিশ্বজয় করা যায়।”
৬০ বছর বয়সী ইয়াঘি সম্ভবত জর্ডানে জন্ম নেওয়া প্রথম নোবেল বিজয়ী। তার জীবনগাথা শুধু বিজ্ঞান নয়, মানবিকতা ও সম্ভাবনার এক অনন্য উদাহরণ।
তথ্যসূত্র: নোবেল প্রাইজ ওয়েবসাইট
logo-1-1740906910.png)