
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের রেকর্ডসংখ্যক ধনকুবের সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইমুখী হচ্ছেন। আয়করহীন পরিবেশ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ব্যবসাবান্ধব নীতি এবং বিলাসী জীবনযাপনের সহজলভ্যতা; সব মিলিয়ে দুবাই এখন ধনীদের জন্য আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালে ৯ হাজার ৮০০ ধনকুবের আমিরাতে চলে যাবেন, যা বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় সর্বোচ্চ। পশ্চিমা দেশগুলো থেকে ধনীদের আগমন বাড়ছে, বিশেষ করে কর ও নজরদারির চাপ থেকে মুক্তির আশায়।
দুবাইয়ের ‘গোল্ডেন ভিসা’ প্রকল্পে ধনী ও দক্ষ বিদেশিরা ১০ বছরের আবাসিক অনুমতি পাচ্ছেন। স্কাইবাউন্ড ওয়েলথ ম্যানেজমেন্টের প্রধান মাইক কোডি জানান, অনেক ধনী ব্যক্তি মনে করেন, নিজ দেশে তাদের সাফল্য এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দুবাইয়ে তারা মুক্তভাবে সম্পদ উপভোগ করতে পারেন।
সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের প্রিয় গন্তব্য হিসেবে দুবাইয়ের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। স্কি সুবিধাসম্পন্ন বিশাল মল, বিশ্বের সর্বোচ্চ ভবন এবং পাম দ্বীপের পাঁচতারা হোটেল; সব মিলিয়ে এটি বিলাসিতার প্রতীক।
তবে এই উত্থান নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। অতি স্বল্পমজুরির অভিবাসী শ্রমিকদের শ্রমেই গড়ে উঠেছে এই অর্থনীতি। ২০২২ সালে স্বচ্ছতার ঘাটতির কারণে আমিরাতকে ধূসর তালিকায় রাখা হলেও পরবর্তী সময়ে মানি লন্ডারিংবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে তারা তালিকা থেকে বেরিয়ে আসে।
দুবাইমুখী ধনীদের বড় অংশ ৩০-৪০ বছর বয়সী পেশাজীবী, যেমন টেক উদ্যোক্তা, ফান্ড ম্যানেজার ও ব্যবসায়ী উত্তরসূরি। ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে আসা ধনীরা করের ভয়ে ইউএইতে চলে যাচ্ছেন। নরওয়েজিয়ান ধনকুবের জন ফ্রেডরিকসেন বলেন, “ব্রিটেন শেষ হয়ে গেছে, তাই আমি ইউএইতে যাচ্ছি।”
দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেট বাজারও ধনীদের আকর্ষণ করছে। ২০২৪ সালে ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি দামের ৪৩৫টি বাড়ি বিক্রি হয়েছে, যা নিউ ইয়র্ক ও লন্ডনের সম্মিলিত সংখ্যার চেয়েও বেশি। গবেষক ফয়সাল দুররানি জানান, মোনাকো বা সুইজারল্যান্ডের তুলনায় দুবাইয়ে বিলাসবহুল সম্পত্তি অনেক সস্তা, ১০০ মিলিয়ন ডলারে এখানে পুরো ভবন কেনা সম্ভব।
বিশ্বের শীর্ষ ২০ ধনী শহরের তালিকায় এখন রয়েছে দুবাই, যেখানে ৮১ হাজার ২০০ মিলিয়নিয়ার ও ২০ বিলিয়নিয়ার বসবাস করছেন। বিশ্লেষকদের মতে, কম আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় দুবাই ধনীদের জন্য এক নতুন স্বর্গে পরিণত হয়েছে।
তথ্যসূত্র: দৈনিক কালের কণ্ঠ