কাতারের ইতিহাসে ৩ সেপ্টেম্বর একটি ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭১ সালের এদিন দেশটি ব্রিটিশ প্রটেক্টরেট থেকে মুক্ত হয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতার আগে কাতার ছিল ব্রিটিশ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি উপসাগরীয় অঞ্চল। ১৯৭১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কাতার সরকার ব্রিটিশদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করে এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
স্বাধীনতার পরপরই কাতার আবিষ্কার করে তার প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামের বিশাল মজুত, যা দেশটির অর্থনীতিকে দ্রুত বদলে দেয়। এই সম্পদের ভিত্তিতে কাতার হয়ে ওঠে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানিকারক এবং মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ।
স্বাধীনতার পর কাতার গড়ে তোলে একটি আধা-সাংবিধানিক রাজতন্ত্র, যেখানে আমির ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান। ধাপে ধাপে গড়ে ওঠে প্রশাসনিক কাঠামো, বিচারব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভিত্তি। কাতার জাতিসংঘ, ওআইসি এবং আরব লিগের সদস্যপদ লাভ করে, যা তার কূটনৈতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করে।
স্বাধীনতার পর কাতার সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করে। প্রতিষ্ঠিত হয় কাতার ইউনিভার্সিটি, আধুনিক হাসপাতাল এবং বিশ্বমানের বিমানবন্দর। ২০০০-এর দশকে কাতার ফাউন্ডেশন ও আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করে দেশটি জ্ঞান ও তথ্যের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পায়।
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে কাতার শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে শুরু করে। মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিরসনে মধ্যস্থতা, বিশ্বকাপ আয়োজন, এবং মানবিক সহায়তায় কাতারের ভূমিকা তাকে একটি আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
আজকের কাতার একটি আধুনিক, সমৃদ্ধ এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র, যার ভিত্তি গড়ে উঠেছে ১৯৭১ সালের সেই ঐতিহাসিক স্বাধীনতার দিনে।
তথ্যসূত্র: বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর
logo-1-1740906910.png)