
আরব উপসাগরের ছোট কিন্তু ঐতিহাসিক দ্বীপরাষ্ট্র বাহরাইন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণের প্রাচীন এক সাক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায়ই এই অঞ্চলে ইসলামের বিস্তার ঘটেছিল, যা মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব।
৬২৯ খ্রিস্টাব্দে নবী মুহাম্মদ (সা.) তার প্রতিনিধি আল-আলা আল-হাদরামিকে পাঠান বাহরাইনের শাসক মুনজির ইবনে সাওয়া আল–তামিমির কাছে। ঐতিহাসিক সূত্র বলছে, এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করে শাসক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন এবং তার অনুসারীরাও মুসলিম হন। এরপর থেকে বাহরাইন হয়ে ওঠে ইসলামি সাংস্কৃতিক বিকাশের একটি প্রাণকেন্দ্র।
পরবর্তী শতকে শিয়া ইসলামের সূচনা ঘটে এই দ্বীপে। খলিফা আলী (রা.)–এর সময়কালেই কিছু গোত্র শিয়া মতবাদে আকৃষ্ট হয়, বিশেষত বনি আবদুল কায়স। ৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে কারমাতি সম্প্রদায় বাহরাইনকে তাদের প্রধান ঘাঁটিতে পরিণত করে এবং মক্কা আক্রমণসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালায়। তাদের হাত ধরেই বিখ্যাত কালো পাথর কাবা থেকে সরিয়ে বাহরাইনে নিয়ে আসা হয়, যা প্রায় ২০ বছর সেখানেই ছিল।
১৩শ শতকে “বাহরাইন স্কুল” নামে দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক কেন্দ্র গড়ে ওঠে। এখানেই শিক্ষা ও গবেষণায় অবদান রাখেন মাইথাম আল-বাহরানি, যিনি শিয়া মতবাদের জ্ঞানচর্চাকে এক নতুন মাত্রায় নিয়ে যান।
আজকের বাহরাইন জুড়ে ইসলাম ধর্মের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে নানা স্থাপত্য, উৎসব ও সমাজচর্চায়। প্রাচীন আল-খামিস মসজিদ কিংবা আধুনিক আল-ফাতেহ গ্র্যান্ড মসজিদ; সবই বহন করে সেই ঐতিহ্য।
তবে বাহরাইনে ইসলাম শুধু ধর্ম নয়, বরং এটি রাজনীতি, শিক্ষা, আইন ও সামাজিক কাঠামোতেও প্রভাব রেখেছে। সুন্নি-শিয়া সম্প্রদায়ের সহাবস্থান বাহরাইনকে করেছে আরো বৈচিত্র্যময়। যদিও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সম্পর্ক কখনো টানাপোড়েনের মধ্যেও পড়ে।
ইসলাম বাহরাইনের মাটিতে শুধু প্রবেশ করেনি, বরং এখানকার সংস্কৃতি ও চিন্তায় গভীরভাবে জড়িয়ে গেছে।
তথ্যসূত্র: Fanack Chronicle: Bahrain – Islam since 629 AD