
গাজার সকাল এখন আর সূর্যোদয়ের প্রতীক নয়, এটি যেন প্রতিদিনের মৃত্যুর আজান। দখলদার বাহিনীর লাগাতার হামলা, খাদ্য সংকট এবং মানবিক সহায়তার অভাবে গাজা এখন এক ভয়াবহ মানবেতর বাস্তবতার নাম। প্রতিদিনের মতো আজও খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বহু মানুষ। চিকিৎসকরা বলছেন, “এটি যেন কেয়ামতের দৃশ্য; এক ঘণ্টার মধ্যে ১০০ থেকে ১৫০ জন আহত বা মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন।”
গত ২৭ মে থেকে ২ জুলাই পর্যন্ত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য সংগ্রহের সময় এক হামলায় অন্তত ৬৪০ জন নিহত এবং ৪ হাজার ৫০০ জন আহত হয়েছেন। অধিকাংশ হামলা হয়েছে GHF (Gaza Humanitarian Foundation) পরিচালিত বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে, যেগুলো যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে। এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোকে “মৃত্যুর ফাঁদ” বলে অভিহিত করেছে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
গাজার হাসপাতালগুলো এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত ও জনাকীর্ণ। চিকিৎসকরা বলছেন, “আমরা রোগীদের মেঝেতে চিকিৎসা দিচ্ছি। অধিকাংশের শরীরে গুলির আঘাত, কেউ কেউ হাত-পা হারিয়েছেন।” রেড ক্রসের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে তাদের রাফাহ ফিল্ড হাসপাতালে ২,২০০ জন অস্ত্রে আহত রোগী ভর্তি হয়েছেন এবং ২০০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এই সহিংসতার পেছনে রয়েছে বিতর্কিত GHF বিতরণ ব্যবস্থা, যা UN ও NGO চ্যানেলকে বাইপাস করে পরিচালিত হচ্ছে। GHF-এর চারটি বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ খাদ্যের আশায় জড়ো হন। কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে হয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকা পেরিয়ে, যা অনেক সময় প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বলেছে, “এই হামলাগুলো আন্তর্জাতিক আইনে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে”। সেভ দ্য চিলড্রেন জানিয়েছে, খাদ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহতদের মধ্যে অর্ধেকই শিশু ও কিশোর।
গাজা এখন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মানবতার পরীক্ষাগার, যেখানে প্রতিদিন মানুষ ক্ষুধা, গুলি ও নীরবতার বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। এই বাস্তবতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীরবতা ও বিভক্তি আরো গভীর সংকটের জন্ম দিচ্ছে।
মাইগ্রেশন কনসার্ন রিপোর্ট