কুয়েতে আড়াই হাজার টাকার ভিসা বিক্রি হয় আট লাখ টাকা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ জুলাই ২০২৫, ০৮:৩৭

চাঁদপুরের দেলোয়ার হোসেন পাটোয়ারী পাঁচ বছর কাটিয়েছেন সৌদি আরবে। দেশে ফিরে মুদি দোকান দিয়ে সুবিধা করতে না পেরে চলতি বছর মে মাসের শেষ দিকে পাড়ি জমান কুয়েতে।
কিন্তু কুয়েত যেতে যে পয়সা খরচ হওয়ার কথা, তার চেয়ে অনেক বেশি, প্রায় সাত লাখ টাকা গুনতে হয় তাকে।
একই ধরনের অভিজ্ঞতা শোনালেন জুন মাসে কুয়েতে পা রাখা কুমিল্লার ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, “দালালের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ টাকা খরচ করে আসতে হয়েছে। টাকা জোগাড় করতে স্থানীয় একটি সমবায় সমিতি থেকে দুই লাখ টাকা ঋণও নিয়েছি।"
মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতে ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে বেশ জটিল ছিল। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্যানুযায়ী, ২০০৭ সালে কুয়েতের ভিসা দেওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
সে বছর বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৪ হাজার ২১২ জন কুয়েতে পাড়ি জমান। এরপর ২০০৮ সালে ৩১৯ জন, ২০০৯ সালে ১০ জন, ২০১০ সালে ৪৮ জন, ২০১১ সালে ২৯ জন, ২০১২ সালে দুজন এবং ২০১৩ সালে ছয়জন কুয়েতে যান।
এরপর দেশটিতে ভিসা কার্যক্রম কিছুটা শিথিল হলে ধীরে ধীরে অল্পবিস্তর বাংলাদেশি সেখানে যাওয়া শুরু করেন। আর এ জটিলতা ঘিরেই সে দেশে ভিসা দালালরা খরচ কয়েক গুণ বাড়িয়ে নেন।
সবশেষ ২০২৪ সালে ৩৩ হাজার ৩১ জন বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে যান। আর এ বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাড়ি দিয়েছেন ৪ হাজার ৯৬২ জন।
জয়পুরহাট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোশাররফ হোসেন জানান, পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো, যেমন সৌদি আরব, কাতার, ওমান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েত— এ ছয় দেশে শ্রমিক ভিসায় যাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা।
সাধারণত এটি রিক্রুটিং এজেন্সির ফি, ভিসা প্রসেসিং ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও উড়োজাহাজ ভাড়ার মতো বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে।
কুয়েত প্রবাসী সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট আব্দুস সালেহ বলেন, কুয়েতের ভিসা পেতে ‘প্রসেস খরচ’ হচ্ছে স্থানীয় মুদ্রায় তিন দিনার এবং দূতাবাসে সত্যায়নে খরচ হচ্ছে তিন দিনার। অর্থাৎ কুয়েতের শ্রমিক ভিসা হাতে আসা পর্যন্ত মোট খরচ হচ্ছে ছয় কুয়েতি দিনার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আড়াই হাজার টাকারও কম।
তবে শ্রমিক ভিসায় বিদেশে আসার পর নিয়োগকর্তা আড়াইশ দিনারের মতো আরো খরচ করে থাকেন ওয়ার্ক পারমিট বা কাজের অনুমতিপত্রের জন্য।
সালেহর ভাষ্য, “এই ছয় দিনারের ভিসা দালালদের হাত বদলের মাধ্যমে দুই হাজার দিনারে গিয়েও ঠেকে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় আট লাখ টাকা।”
কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার (শ্রম) মোহাম্মদ আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৪৫০টি ভিসা সত্যায়িত করার আবেদন পাচ্ছে বাংলাদেশ দূতাবাস।
দালাল চক্রের বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং ও এনফোর্সমেন্ট অনুবিভাগের যুগ্ম সচিব এ জেড এম নুরুল হক বলেন, “আমরা সাধারণভাবে জানি, আমাদের যেটা নির্ধারিত আছে অভিবাসন খরচ, সেটা বিভিন্ন দেশের জন্য বিভিন্ন রকম। সাধারণত আমরা যেটা অভিযোগ পাই যে, বেশি নিয়েছে।
তিনি বলেন, “সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আমাকে জানালে আমি ব্যবস্থা নিতে পারব আশা করি। কে নিয়েছে, কার কাছ থেকে নিয়েছে, কখন নিয়েছে, কত টাকা নিয়েছে এসব তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বা প্রতিকার মিলবে।”
এ বিষয়ে কথা বলতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে একাধিকবার ফোন করা হলেও সাড়া দেননি।
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ ২৪