
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যখন নবম দিনে গড়িয়েছে, তখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে হরমুজ প্রণালি। পারস্য উপসাগর ও ওমান উপসাগরের সংযোগকারী এই সংকীর্ণ জলপথ দিয়ে প্রতিদিন বিশ্বের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ তেল পরিবাহিত হয়। ফলে এই প্রণালীতে যে কোনো ধরনের বিঘ্ন বিশ্ব অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
ইরান বহুদিন ধরেই হুমকি দিয়ে আসছিল, যদি তাদের স্বার্থে আঘাত আসে, তবে তারা হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেবে। যদিও চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত ইরান সরাসরি এই প্রণালিতে কোনো সামরিক তৎপরতা দেখায়নি। তবে ২১ জুন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর এই হুমকি বাস্তব রূপ নেওয়ার আশঙ্কা বেড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিশ্ববাজারে তেলের দাম হঠাৎ করে আকাশচুম্বী হয়ে উঠতে পারে। এতে শুধু পরিবহন খরচই বাড়বে না, বরং মুদ্রাস্ফীতি, মন্দা এবং সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো এশীয় দেশগুলো, যারা এই প্রণালির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, তারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য সংস্থা ইআইএ হরমুজ প্রণালিকে “বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহন চেকপয়েন্ট” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ও গ্যাস এই পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। কাতারের মতো এলএনজি রপ্তানিকারক দেশও এই প্রণালির ওপর নির্ভরশীল।
বর্তমানে সরাসরি কোনো বাণিজ্যিক জাহাজে হামলার খবর না থাকলেও জাহাজ মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ নিরাপত্তা বাড়িয়েছে, কেউ আবার বিকল্প রুট খুঁজছে। ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্ব এশিয়ায় জ্বালানি পরিবহনের খরচ ২০ শতাংশ এবং পূর্ব আফ্রিকার ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
ইরান যদি সত্যিই প্রণালি বন্ধ করে দেয়, তবে তা মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ ডেকে আনতে পারে। এই অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন পঞ্চম নৌবহর ইতোমধ্যে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। একই সঙ্গে ইরান নিজেও এই প্রণালি ব্যবহার করে তেল রপ্তানি করে, ফলে এটি বন্ধ করা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হরমুজ প্রণালি ইরানের জন্য এক ধরনের কৌশলগত “ট্রাম্প কার্ড”, যা তারা প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে। তবে এর পরিণতি হবে বহুমাত্রিক। সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত ইতোমধ্যে বিকল্প পাইপলাইন তৈরি করেছে, তবে তা দিয়ে দৈনিক মাত্র ২৬ লাখ ব্যারেল তেল পরিবহন সম্ভব, যা মোট চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর