ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে অচল মধ্যপ্রাচ্য, বিমানবন্দরে আটকে হাজারো যাত্রী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ০০:৫৫

ইরান-ইসরায়েলের মধ্যকার সাম্প্রতিক সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে আকাশসীমা বন্ধ হয়ে গেছে। উড়োজাহাজ চলাচল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এতে অসংখ্য যাত্রী বিভিন্ন বিমানবন্দর ও শহরে আটকা পড়েছেন। যুদ্ধের ভয়াবহতা এড়াতে যাত্রীরা মরিয়া হয়ে নিজ নিজ দেশে ফেরার চেষ্টা করছেন। কিন্তু রুট নেই, বিমান নেই, এমনকি গাড়িও নেই। খবর এপি।
১৩ জুন ইসরায়েল একটি নজিরবিহীন হামলায় ইরানের কোম শহরের পারমাণবিক স্থাপনাসহ একাধিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। নিহত হন ইরানের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও পরমাণু কর্মীরা। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইরান শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইসরায়েলের দিকে। এর ফলে পুরো অঞ্চলে আকাশপথে বিশৃঙ্খলা শুরু হয়, যা এখনো চলমান।
তেহরানে আটকে পড়া ৫৫ বছর বয়সী আফগান ব্যবসায়ী আইমাল হুসেইন বলেন, ‘উড়োজাহাজ নেই, বাজার বন্ধ; সব কিছু থমকে গেছে। আমি তেহরানে এসেছি, কিন্তু এখন কেউ সীমান্ত পর্যন্ত নিতে রাজি না। ট্যাক্সিও নেই।’
এই সংঘাতের পরপরই ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তিনটি বড় ইসরায়েলি বিমান সংস্থার উড়োজাহাজ সরিয়ে নেয়া হয়েছে সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দরে। নিউ ইয়র্ক থেকে ইসরায়েলগামী এল আল বিমানের এক যাত্রী জিভিকা বার্গ বলেন, ‘পাইলট মাঝপথে ঘোষণা দেন, আমাদের লারনাকায় নামতে হবে। তখনই বুঝি, পরিস্থিতি কতটা গুরুতর।’
একইভাবে বার্লিন, টরন্টোসহ বহু শহর থেকে আসা যাত্রীরা তেল আবিবের বদলে বিভিন্ন বিকল্প বিমানবন্দরে নামতে বাধ্য হচ্ছেন।
টরন্টো থেকে ইসরায়েল আসা কানাডীয় নাগরিক মাহালা ফিঙ্কেলম্যান বর্তমানে তেল আবিবের একটি হোটেলের ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে অবস্থান করছেন। তার এয়ার কানাডা ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিবার বিস্ফোরণ হলে নিচে কাঁপুনি ধরে যায়। আমরা জানি না কখন ফিরে যেতে পারব।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতি শুধু মধ্যপ্রাচ্যের নয়, আন্তর্জাতিক উড়োজাহাজ শিল্পের জন্যও বড় ধাক্কা। অবসরপ্রাপ্ত পাইলট ও বিমান নিরাপত্তা বিশ্লেষক জন কক্স বলেন, ‘এখানে ডোমিনো প্রভাবটা ভয়াবহ। বিমান, ক্রু, যাত্রী; কেউই এখন তাদের নির্ধারিত জায়গায় নেই। এর আর্থিক ক্ষতিও বিশাল।’
ভারত, আফগানিস্তান, ইরাক, নাইজেরিয়া, লেবাননসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আগত শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা ইরান ও আশপাশের দেশে আটকে আছেন। ভারতের মেডিকেল ছাত্র আর্সালান আহমেদ জানান, ‘আমরা হোস্টেলেই লুকিয়ে আছি। প্রতিদিন বোমা, ড্রোন আর টিভিতে যা দেখছি, সবকিছুই আতঙ্কজনক।'
ইরাকের সব বিমানবন্দর বন্ধ। জর্ডান ও লেবাননের আকাশসীমা আংশিক খোলা থাকলেও অনেক ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত। সিরিয়ার বিমানবন্দরগুলোতে সম্প্রতি সংস্কার শেষ হলেও আবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একমাত্র তুরস্কের সীমান্ত দিয়ে সড়কপথে যাতায়াত এখনো কিছুটা খোলা আছে। যদিও তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও অনিরাপদ।
বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আরো গভীর সংকটে পড়বে। আর তার প্রথম প্রভাব পড়বে আকাশপথে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীদের ওপর, যারা এখন যুদ্ধ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে আটকা পড়ে জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করছেন।
তথ্যসূত্র: দৈনিক বণিক বার্তা