ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে বিশ্বকে?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ১৬:০৪

আবারো যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে ইরান-ইসরায়েল। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে অনেক দেশ যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানাচ্ছে। কিন্তু কেউ যদি কথা না শোনে, তাহলে এই যুদ্ধের পরিণতি কী হতে পারে? এই যুদ্ধের আওতা কি বাড়তে পারে? তাতে মধ্যপ্রাচ্যে থাকা প্রবাসীরা কি এই যুদ্ধের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবেন?
এক প্রতিবেদনে বিবিসি কিছু সম্ভাবনা আর সবচেয়ে খারাপ আর কী কী পারে তার অনুমান তুলে ধরেছে।
যেমন দৃশ্যপট ১: জড়িয়ে পড়তে পারে আমেরিকা
আমেরিকা যুদ্ধে যুক্ত হয়ে যেতে পারে। ট্রাম্পের আমেরিকা যদিও বলছে, এই যুদ্ধে তারা কোনো কিছু করছে না তবুও ইরান বিশ্বাস করে, ইসরায়েলের পেছন থেকে খেলছে আমেরিকা। ধারণা করা হচ্ছে, ইরান বা তার প্রক্সি যোদ্ধারা মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কৌশলগত অবস্থান, তাদের নেভাল বেইজ, মিলিটারি বেইজ, দূতাবাসগুলোতে হামলা চালাতে পারে। মার্কিন স্থাপনায় হামলা না করার বিষয়ে এরই মধ্যে ইরানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছে আমেরিকা। কিন্তু হামলা হলে কি বসে থাকবেন ট্রাম্প? যেখানে দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ময়দানে ট্রাম্পের আমেরিকাকে নামাতে চাইছেন নেতানিয়াহু। মিলিটারি বিশ্লেষকদের ধারণা, ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক কেন্দ্র, বাঙ্কার গুঁড়িয়ে দেয়ার সক্ষমতা কেবল রয়েছে মার্কিনিদেরই। আর যদি কোনোভাবে এই যুদ্ধে আমেরিকা জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তার প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি ও মারাত্মক।
দৃশ্যপট ২: যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশ
চলমান যুদ্ধে ইরান যদি ইসরায়েলের বড় ধরনের ক্ষতি করে তাদের পরাস্ত করতে না পারে, তাহলে এমনও হতে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের মিত্রদেশগুলোর দিকে হামলা করে বসতে পারে। যেমন ২০১৯ সালে ইরান সৌদি আরবের তেলখনিতে হামলা করে বসেছিল। ২০২২ সালে ইরানের প্রক্সি যোদ্ধারা আরব আমিরাতের নানা স্থাপনায় হামলা করেছিল। মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি আছে। তাতে ইরান হামলা চালালে বদলে যেতে পারে এই যুদ্ধের চেহারা।
দৃশ্যপট ৩: ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে ব্যর্থ হলে
যদি ইসরায়েলের হামলা ব্যর্থ হয়, তাহলে কী হবে? যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো খুবই গভীরে, খুবই সুরক্ষিত হয়? যদি ৬০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের ৪০০ কেজি, যা পুরোপুরি অস্ত্রমান ইউরেনিয়ামে রূপান্তরের একেবারেই কাছাকাছি এবং যা প্রায় দশটি বোমা তৈরির জন্য যথেষ্ট- ধ্বংস না হয়?
ধারণা করা হয়, এটি গোপন খনিগুলোর গভীরে লুকিয়ে রাখা হতে পারে। ইসরায়েল হয়তো কিছু পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে, কিন্তু কোনো বোমাই ইরানের জ্ঞান ও দক্ষতা ধ্বংস করতে পারবে না। তাহলে কী হবে? যদি ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেই ফেলে, তাহলে হয়তো অঞ্চলটি ধারাবাহিক হামলা ও পাল্টা হামলার চক্রে আটকে যেতে পারে।
দৃশ্যপট ৪: বিশ্ব অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব পড়বে
নতুন করে এই যুদ্ধের কারণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এই যুদ্ধের কারণে যদি ইরান জ্বালানি তেল পরিবহনের রুট হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়? অন্যদিকে ইরানে প্রক্সিগ্রুপ হুতিরা লোহিত সাগরে তেলের জাহাজে হামলা চালাতে শুরু করে?
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে দুনিয়ার সব দেশের মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। ইরান- ইসরায়েল যুদ্ধে এই জ্বালানি তেলের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটলে মূল্য দিতে হবে সাধারণ মানুষকেই। সংকটে পড়বে বিশ্ব অর্থনীতি।
দৃশ্যপট ৫: ইরানে সরকার পরিবর্তন হতে পারে
ইসরায়েলের লক্ষ্য ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করা। কিন্তু নেতানিয়াহু পরিষ্কার করেছেন, দেশটির আসল লক্ষ্য ইরানের সরকার ফেলে দেয়া। সে ক্ষেত্রে ইরানে সরকার পতন হলে যে শূন্যতা তৈরি হবে, তার প্রতিক্রিয়া কেমন হবে? যে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে, তা কি কোনো দেশ সামাল দিতে পারবে? ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের পতন বা লিবিয়ার গাদ্দাফির পতনের পর কি দেশটিতে এখনো শান্তি ফিরেছে?
মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে আছেন দেড় কোটি প্রবাসী বাংলাদেশি। এসবের কোনো একটি দেশে যুদ্ধ লেগে কী ঘটতে পারে তাদের ভাগ্যে? ইরাক ও কুয়েতে যুদ্ধের সময়টায় কিন্তু দেশটিতে কাজ করা হাজারো বাংলাদেশিদের ফিরে আসতে হয়েছিল নিজ দেশে, খালি হাতে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি