Logo
×

Follow Us

মধ্যপ্রাচ্য

বাহরাইনের ভিসা খুলতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চান প্রবাসীরা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ১২:৩৪

বাহরাইনের ভিসা খুলতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চান প্রবাসীরা

পারস্য উপসাগরের দ্বীপদেশ বাহরাইনে সাত বছর ধরে বাংলাদেশিদের জন্য বন্ধ থাকা শ্রমবাজার আবার চালুর সুযোগ তৈরি হয়েছে। গত ১ জুন বাহরাইনের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী প্রিন্স সালমান বিন হামাদ আল খলিফার সঙ্গে রিফা প্রাসাদে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাহরাইনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রইস হাসান সরোয়ার। ওই বৈঠকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে জানান, বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা আবার খুলে দিতে দেশটির প্রধানমন্ত্রী সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। তাছাড়া বৈঠকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী তার মন্ত্রিসভার এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে এই কাজের দায়িত্বও দেন। বাহরাইনের প্রধানমন্ত্রীর এমন ইতিবাচক মনোভাবের কারণে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীরা আশার আলো দেখছেন।

দেশটিতে কত কর্মী বর্তমানে কাজ করছেন? 

বাহরাইনে বসবাস করছেন ১ লাখ ৪০ হাজার প্রবাসী কর্মী। জীবন-জীবিকার তাগিদে তারা যুক্ত হয়েছেন নানা পেশায়। কেউ নির্মাণকর্মী, কেউ কাজ করছেন দোকান বা রেস্টুরেন্টে। আছেন নানা পেশাজীবী। জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১৪ বছরে বাংলাদেশ থেকে ৩ লাখ ১৩ হাজার ৬১০ জন শ্রমিক বাহরাইনে যান। এর মধ্যে নারী শ্রমিক ছিলেন ৩ হাজার ১৭২ জন। সর্বশেষ ২০১৮ সালে ৮১১ জন বাংলাদেশি কর্মী দেশটিতে যান। এর আগে ২০১৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চার বছরে দেশটিতে কর্মী যাওয়ার সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮৩ জন।

কী পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন তারা?

যারা এখনো আছেন দেশটিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তারা রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। নিয়মিত রেমিট্যান্স পাঠিয়ে শীর্ষ দশ রেমিট্যান্স প্রেরণকারী দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন বাহরাইন প্রবাসীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত বাহরাইন থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৬৩৯ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসেছে ৫৫৪ দশমিক ৯৫ মিলিয়ন ডলার, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এসেছে ৫২৮ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৬৬ দশমিক ৬১ মিলিয়ন ডলার।

কেন বন্ধ বাহরাইনের শ্রমবাজার?

২০১৮ সালে বাহরাইনের ইমাম আবদুল জলিল হামদকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন বাংলাদেশি মুয়াজ্জিন কামাল উদ্দিন। এ ঘটনার পর বাংলাদেশের শ্রমবাজার বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় দেশটির সরকার। আঁধার নেমে আসে বাংলাদেশিদের জন্য অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এই শ্রমবাজারটিতে। এরপর ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়া হয় বাহরাইনের সব ধরনের ভিসা। দেশটির প্রবাসী বাংলাদেশিরা  বলছেন, এতদিনে বেশ কয়েকজন রাষ্ট্রদূত বদল হয়েছেন। হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিটিং ও আলোচনা। ২০২২ সালে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় ফরেন অফিস কনসালটেশনও। তারপরও ভিসা খোলার বিষয়ে এখনো কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। সাত বছর ধরে ভিসা বন্ধ থাকায়, প্রবাসীরা দেশ থেকে না পারছেন নতুন কর্মী আনতে, না পারছেন পরিবারের সদস্যদের আনতে। আর এ কারণে তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। 

বাহরাইন প্রবাসী সাদ উদ্দিন ব্যবসা করেন মানামায়। তিনি অভিযোগের সুরে বলেন, ভিসা বন্ধ থাকায় দেশ থেকে কর্মী আনতে পারছেন না। ফলে একাই সামলাতে হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্য। পারিবারিক ভিসা বন্ধ থাকায় পরিবারের সদস্যদেরও নিতে পারছেন না। বিষয়টি অমানবিক হিসেবেও দেখছেন অনেক প্রবাসী।  

বাহরাইন প্রবাসীরা জানাচ্ছেন, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস অতীতে তিনবার বাহরাইন এসেছেন। দেশটির রাজার থেকে সর্বোচ্চ পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। প্রধান উপদেষ্টার উৎসাহেই দেশটি উদ্বোধন করেছিল ফ্যামিলি ব্যাংক বাহরাইন। বাহরাইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের যথেষ্ট সুনামও রয়েছে। তাই বাহরাইনের শ্রমবাজার খুলতে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন প্রবাসীরা। 

প্রবাসীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বাহরাইনে কর্মী প্রেরণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় শুধু শ্রমিক নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ী এবং পারিবারিক ভিসা প্রত্যাশীরাও। বাহরাইন প্রবাসীরা মনে করেন, দেশটির সরকার এখন প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। ভিসা খুলে দেওয়ার ব্যাপারেও আগের যে কোনো বারের চেয়ে বেশি আন্তরিক।  

এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি প্রবাসীদের আবেদন, দুই দেশের সর্বোচ্চ স্তরে আলোচনার মাধ্যমে যেন দ্রুত বাহরাইনের শ্রমবাজার আবার চালুর ব্যবস্থা করা হয়।

রিপোর্ট: মাইগ্রেশন কনসার্ন। 

Logo