ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফর: কতখানি অর্থনৈতিক, কতখানি রাজনৈতিক?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৫, ১০:০৩

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম আন্তর্জাতিক সফরে সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফর করছেন। এই সফরের মূল লক্ষ্য হলো উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সম্পর্ক জোরদার করা এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত প্রভাব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
সৌদি আরব: বিনিয়োগ ও পারমাণবিক চুক্তি
ট্রাম্পের সফরের প্রথম গন্তব্য সৌদি আরব, যেখানে তিনি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এই সফরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে, যা সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে সীমিত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধির অনুমতি দেবে। এছাড়া সৌদি আরবের ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনার আওতায় প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে উন্নয়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সৌদি আরব ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা ১ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানোর আলোচনা চলছে।
কাতার: মধ্যস্থতা ও বাণিজ্য
কাতার সফরের সময় ট্রাম্প কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সঙ্গে বৈঠক করবেন। কাতার ইসরায়েল-হামাস সংঘাতে মধ্যস্থতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং এই সফরে একটি বড় বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে পারে, যার আওতায় কাতার যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১০০টি বোয়িং বিমান কিনবে। এছাড়া কাতার ট্রাম্পকে একটি বিলাসবহুল বিমান উপহার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও প্রযুক্তি
আবুধাবিতে ট্রাম্প ইউএই প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। ইউএই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও আধুনিক প্রযুক্তিতে বিশ্বনেতৃত্বের লক্ষ্যে কাজ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে আগামী ১০ বছরে ১ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ইউএই যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত প্রযুক্তি, বিশেষ করে এনভিডিয়া চিপস অর্জনের চেষ্টা করছে।
ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
এই সফরটি এমন সময়ে হচ্ছে, যখন গাজায় ইসরায়েলি অভিযান ও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সৌদি আরব স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না।
ট্রাম্প পরিবারের বাণিজ্যিক আগ্রহ
এই সফরের পাশাপাশি ট্রাম্প পরিবারের সদস্যরা উপসাগরীয় অঞ্চলে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রকল্পে জড়িত রয়েছেন। এরিক ট্রাম্প দুবাইয়ে একটি বিলিয়ন ডলারের ট্রাম্প রেসিডেন্সিয়াল টাওয়ার প্রকল্প ঘোষণা করেছেন এবং দোহায় একটি গলফ রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। এই বাণিজ্যিক আগ্রহগুলো রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে সংঘাত সৃষ্টি করতে পারে বলে সমালোচকরা মনে করছেন।
এই সফরের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক আরো গভীর করতে চায়, যদিও গাজা ও ইরান ইস্যুতে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন