Logo
×

Follow Us

মধ্যপ্রাচ্য

দুবাইয়ে ভ্রমণ বিশৃঙ্খলা

Icon

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫, ১৮:০৮

দুবাইয়ে ভ্রমণ বিশৃঙ্খলা

সংবাদের অডিও শুনতে ক্লিক করুন

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সাম্প্রতিক যুদ্ধের কারণে দুবাইয়ে ভ্রমণ বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঘুরতে আসা অনেক ভারতীয় ও পাকিস্তানি পর্যটক এক থেকে দুই সপ্তাহ বেশি থাকতে বাধ্য হয়েছেন। অনেকে ছুটি বাড়িয়ে আমিরাতে থাকাটা নিরাপদ মনে করছেন। আবার যুদ্ধের সময়ে ফ্লাইট বাতিলের কারণেও অনেকে বিপাকে পড়েছেন।  

আমিরাতের বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্ট নিশ্চিত করেছে, ভারত ও পাকিস্তানের দিকের যাত্রীদের ভ্রমণ বাতিল হলেও যারা সংঘাতের সময় ইতোমধ্যেই ইউএইতে অবস্থান করছিলেন, তারা পরিস্থিতি সম্পূর্ণভাবে শান্ত না হওয়া পর্যন্ত দেশটিতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাদের এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূলত ভ্রমণজনিত বাধা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে তুলনামূলকভাবে ‘বেশি নিরাপদ’ থাকার অনুভূতি কাজ করেছে।

স্মার্টস ট্রাভেলসের জেনারেল ম্যানেজার সাফির মাহমুদ জানান, এসব পর্যটক সাধারণত আমিরাতে নিয়মিত যাতায়াত করেন। তিনি বলেন, “অনেক পর্যটক যারা ট্যুরিস্ট ভিসার এক মাসের এক্সটেনশন নিয়েছেন, তারা মূলত VFR (বন্ধু ও আত্মীয়দের ভিজিট) পর্যটক। এদের বেশির ভাগই উত্তর ভারত থেকে এসেছেন, যেখানে গত সপ্তাহে অনেক ফ্লাইট বাতিল হয়েছিল।”

মাহমুদ বলেন, “এই ভ্রমণকারীরা মে মাসের মাঝামাঝি ভারত ও পাকিস্তানে ফেরার পরিকল্পনা করছেন, যখন ভাড়া এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা কিছুটা কমবে বলে তারা মনে করছেন।”

পর্যটক থেকে বাসিন্দা:

কিছু পর্যটক তাদের ভিজিট ভিসা পরিবর্তন করে রেসিডেন্সি ভিসায় রূপান্তর করতে চান, বিশেষ করে যারা আমিরাতে সম্পত্তি কিনেছেন।

প্লুটো ট্রাভেলসের মার্কেটিং ও পাবলিক রিলেশন্স প্রধান, স্বপ্না আইদাসানি বলেন, “সংকটময় পরিস্থিতির কারণে অনেক উচ্চবিত্ত পর্যটক সংযুক্ত আরব আমিরাতে সম্পত্তি কিনে রেসিডেন্সি ভিসা নিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।”

তিনি আরো বলেন, “অনেকে আবার শুধু দীর্ঘ ছুটি উপভোগ করছেন। কিছু পর্যটককে ভিসা পরিবর্তনের জন্য দেশ ছাড়তে হয়েছে। তারা জর্জিয়ার মতো নিকটবর্তী দেশে গেছেন, যেখানে ভিসা পাওয়া সহজ। সেখানে কিছুদিন অবস্থান করে আবার নতুন ভিসায় ইউএইতে ফিরেছেন।”

বিমান ভাড়া কি বেড়েছে?

সোমবার সকালে ভারতের এয়ারপোর্টস অথরিটি (AAI) একটি NOTAM (নোটিশ টু এয়ারমেন) প্রত্যাহার করে নেয়, যা মে ১৫ পর্যন্ত ৩২টি বিমানবন্দরে বেসামরিক ফ্লাইট স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর অমৃতসর, বিকানের, চণ্ডীগড়, জয়সালমের, জম্মু, শ্রীনগরসহ অন্যান্য বিমানবন্দরে পুনরায় বাণিজ্যিক ফ্লাইট চালু হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত আসে চার দিনের তীব্র সংঘাতের পর ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসার পর।

এই বিষয়ে স্মার্ট ট্রাভেলসের চেয়ারম্যান আফি আহমেদ বলেন, উত্তর ভারতগামী ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এয়ারফেয়ারে কিছুটা বৃদ্ধি দেখা গেছে। পাকিস্তানের আকাশসীমার ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা থাকলেও ভারতীয় এয়ারলাইন্সগুলোকে দীর্ঘ রুট নিতে হচ্ছে, যার কারণে ভাড়ায় সমতা এসেছে।

দুই এজেন্টই যুদ্ধবিরতির পর থেকে বুকিং ও টিকিটের খোঁজখবর করার প্রবণতা বাড়তে দেখেছেন। আহমেদ ধারণা করছেন, ভিজিট ভিসায় থাকা ও যাত্রা বিঘ্নিত যাত্রীদের কারণে চাহিদা ১০-১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, “ভাড়ার হার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে, যার পেছনে জ্বালানি খরচ একটি বড় বিষয়। উত্তর ভারতগামী ফ্লাইটগুলোর ভাড়া এখন প্রায় ৮০০ থেকে ৯০০ দিরহাম এবং ওয়ান-ওয়ে টিকিটের দাম ১২০০ দিরহাম পর্যন্ত পৌঁছেছে।”

সাম্প্রতিক সংঘাতের প্রেক্ষাপট:

২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়। এর মধ্যে ছিল কূটনীতিকদের বহিষ্কার ও ইন্দাস পানি চুক্তি স্থগিত করা।

পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ৭ মে, যখন ভারত “অপারেশন সিন্দুর” চালায় এবং পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে কথিত সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। পাকিস্তান পাল্টা হামলা করে এবং তীব্র সীমান্ত সংঘর্ষে উভয় পক্ষের হতাহতের ঘটনা ঘটে।

চার দিনের তীব্র সামরিক লড়াইয়ের পর আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার মাধ্যমে ১০ মে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়।

সূত্র: গালফ নিউজ 

Logo