
গুরুত্বপূর্ণ দেশ কুয়েত সাম্প্রতিক সময়ে তার বিমান পরিবহন খাতে এক গভীর সংকটে পড়েছে। কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একে একে সরে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সগুলো। সর্বশেষ তথ্যমতে, ২০১৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৪টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স কুয়েত ছেড়ে গেছে, যার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি কোম্পানি।
কুয়েতের আকাশে শূন্যতা বাড়ছে
একসময় যেখানে ৫২টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স কুয়েত থেকে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করত, বর্তমানে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৪৫টিতে। দীর্ঘমেয়াদে ফ্লাইট পরিচালনাকারী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, কেএলএম, লুফথানসার মতো বিখ্যাত এয়ারলাইন্সগুলো কুয়েত ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কেন এই সংকট?
১. অতিরিক্ত খরচ:
কুয়েতে বিমান চালানোর খরচ আশপাশের দেশগুলোর তুলনায় অনেক বেশি। ফুয়েল চার্জ, বিমানবন্দর ফি, গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং খরচ সব মিলিয়ে লাভজনক ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়ছে এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য।
২. সরকারের অনাগ্রহ:
অন্যান্য দেশ যেখানে আন্তর্জাতিক রুট বাড়াতে এয়ারলাইন্সগুলোকে প্রণোদনা দিয়ে থাকে, কুয়েতে সে রকম কার্যকর উদ্যোগ নেই।
৩. অব্যবস্থাপনা ও দুর্বল অবকাঠামো:
টার্মিনাল ১-এ শৌচাগার, বসার জায়গা ও সাধারণ পরিষেবা ব্যবস্থার মান নিয়ে যাত্রীদের দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে। এতে করে কুয়েতের বিমানবন্দরের প্রতিচ্ছবি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
৪. প্রশাসনিক জটিলতা:
নতুন রুট চালু, অনুমোদন পাওয়া কিংবা অপারেশন সম্প্রসারণে যে ধরনের স্বচ্ছ ও দ্রুততর প্রক্রিয়া প্রয়োজন, তা কুয়েতে অনুপস্থিত।
যাত্রী ও অর্থনীতির ওপর প্রতিক্রিয়া
এই সংকটের প্রভাব সরাসরি গিয়ে পড়েছে সাধারণ যাত্রীদের ওপর। অনেক জনপ্রিয় রুট এখন সরাসরি চালু নেই, ফলে যাত্রীদের বিকল্প রুটে বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে বিমান ভাড়া বেড়ে গেছে, বিশেষ করে ইউরোপমুখী ফ্লাইটে।
অর্থনৈতিক দিক থেকেও বিষয়টি গুরুতর। আন্তর্জাতিক সংযোগ কমে যাওয়ায় বিদেশি বিনিয়োগ, চিকিৎসা ভ্রমণ, উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ভোগান্তি বাড়ছে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
কুয়েত সরকার টার্মিনাল ২ নির্মাণ করছে, যা বছরে ২৫ মিলিয়ন যাত্রী পরিবহনে সক্ষম হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ চালু হওয়ার কথা। তবে বিশ্লেষকদের মতে, অবকাঠামো থাকলেও যদি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স ধরে রাখতে না পারে, তাহলে নতুন টার্মিনালও পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাবে না।
কী করা উচিত?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুয়েতকে দ্রুত নিচের পদক্ষেপ নিতে হবে-
- অপারেশনাল খরচ হ্রাস
- প্রণোদনা প্যাকেজ চালু
- পরিষেবা মানোন্নয়ন
- প্রশাসনিক সহজীকরণ
কুয়েত এখন এক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু পরিকাঠামো নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিতে হবে, যা আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স ও যাত্রী উভয়ের আস্থা ফেরাতে সক্ষম হবে।
তথ্যসূত্র: গালফ নিউজ