দুবাইয়ে স্বর্ণের দাম আকাশচুম্বী
লাভের আশায় স্বর্ণ বিক্রি করছেন দুবাইয়ের বাসিন্দারা

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১৬

গত সপ্তাহে দুবাইয়ে স্বর্ণের দাম নতুন সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে, প্রতি গ্রাম স্বর্ণের দাম ৪০০ দিরহাম ছাড়িয়ে গেছে। এই সময় অনেক বাসিন্দা স্বর্ণ কিনতে নয়, বরং বিক্রি করতে ছুটছেন দুবাইয়ের গোল্ড শপে। কারণ রেকর্ড দামে এখন পুরোনো স্বর্ণ বিক্রি করে লাভবান হওয়া যাচ্ছে।
কেউ কেউ এই অর্থ ব্যবহার করছেন জরুরি প্রয়োজন মেটাতে, আবার কেউ এটি দেখছেন দীর্ঘমেয়াদি স্মার্ট বিনিয়োগের সুফল হিসেবে। আল জাদ্দাফে বসবাসকারী আবসার আহমেদ দীর্ঘদিনের এক দুবাইপ্রবাসী একটি মহৎ উদ্দেশ্যে স্বর্ণ বিক্রি করেছেন। তিনি এ বছর হজ পালনের পরিকল্পনা করছেন এবং তার খরচের বড় একটি অংশ আসবে আগে থেকে জমানো স্বর্ণ বিক্রি করে।
“প্রতি ছয় মাসে আমি একটি করে তোলা সোনার বার কিনতাম। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ আমার কাছে মোট ৮টি বার জমা হয়েছিল, যার প্রতিটির গড় মূল্য ছিল প্রায় ২,৭৫০ দিরহাম। এখন সেই বারগুলো বিক্রি হচ্ছে ৪,৬৬৮ দিরহামে। আমি একাই প্রায় ১৫,০০০ দিরহাম লাভ করেছি।”
তার স্ত্রী ও সন্তানরাও বছরের পর বছর তাদের ঈদ ও পকেট মানির স্বর্ণ কয়েন জমিয়ে রেখেছিলেন। মোট মিলিয়ে তাদের সংগ্রহের মূল্য এখন ৫০ হাজার দিরহামের বেশি। "আমরা কখনো কল্পনাও করিনি এতটা বাড়বে। তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই অর্থ একটি অর্থবহ কাজে ব্যয় করব, আমাদের হজযাত্রায়।”
একই রকম অভিজ্ঞতা রয়েছে গুজরাটের ২৭ বছর বয়সী ভারতীয় প্রবাসী অমিতের। দীর্ঘ এক দশক ধরে স্বর্ণ জমিয়ে এখন তিনি তার বিয়ের খরচ মেটাতে এই লাভ কাজে লাগাচ্ছেন। তিনি বলেন, "প্রতি দিওয়ালিতে এবং বাড়তি কিছু সঞ্চয় হলে স্বর্ণের কয়েন কিনতাম।" ১০ বছরে তিনি মোট ১৫৪ গ্রাম স্বর্ণ জমিয়েছেন, যার পেছনে খরচ হয়েছিল প্রায় ২২ হাজার দিরহাম। এখন প্রতি গ্রামে ৪০০ দিরহাম হিসাবে এই স্বর্ণের মূল্য দাঁড়িয়েছে ৬১,৬০০ দিরহামের বেশি। "আমি প্রায় ৩৯ হাজার দিরহাম লাভ করছি, যা আমার বিয়ের অনেক খরচ মিটিয়ে দেবে।"
অন্যদিকে, কিছু বাসিন্দা সম্প্রতি স্বর্ণ কেনা শুরু করেছেন। পাকিস্তানি প্রবাসী মোমিনা আজম, যিনি আল নাহদায় থাকেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে স্বর্ণে বিনিয়োগ শুরু করেন। তিনি বলেন, “চার বছর আগে আমি মাঝে মাঝে বাড়তি টাকা পেলে স্বর্ণের কয়েন কিনতাম। সব মিলিয়ে ৬৯ গ্রাম জমেছিল। এখন এগুলো বিক্রি করে প্রতি গ্রামে প্রায় ৪০০ দিরহাম পাচ্ছি, যা আমার বিনিয়োগের দ্বিগুণেরও বেশি।” আজম বলেন, এই অর্থ তার আর্থিক স্থিতিশীলতা আনবে। “আমি আমার ক্রেডিট কার্ডের ঋণ শোধ করব এবং বাকিটা সঞ্চয়ে রাখব।”
বিক্রেতারা বলছেন, এটি শুধু সাময়িক প্রবণতা নয়। দুবাই গোল্ড সুকের দীর্ঘদিনের স্বর্ণ ব্যবসায়ী আফফান সাদা জানান, অনেক বাসিন্দা এখন তাদের গোপনে জমানো স্বর্ণ বিক্রি করছেন। আফফান বলেন, “স্বর্ণ ইতিহাসের সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছে এবং যারা গত কয়েক বছর ধরে একটু একটু করে স্বর্ণ কিনে জমাচ্ছিলেন, তারা এখন বিক্রি করে দারুণ লাভ করছেন। অনেকেই হজ, ছুটি, বিয়ে অথবা ঋণ শোধের জন্য স্বর্ণ বিক্রি করছেন। এটা তাদের জন্য বহু প্রতীক্ষিত মুহূর্ত।
তিনি আরো বলেন, “মহামারির সময় মানুষ স্বর্ণকে শুধু অলঙ্কার নয়, বরং একটি সম্পদ হিসেবে দেখতে শুরু করেছে। উৎসব-অনুষ্ঠানে ছোট ছোট কয়েন বা বার কিনে রাখতেন, যা এখন তাদের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তথ্যসূত্র: খালিজ টাইমস