১৬ ডিসেম্বর: দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দিবসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৫১
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বরকে জাতীয় দিবস হিসেবে পালন করে। দিনটির নাম "Day of Reconciliation" বা পুনর্মিলন দিবস। ১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো এটি জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, বর্ণবৈষম্যের দীর্ঘ ইতিহাস থেকে বেরিয়ে এসে কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করা।
১৬ ডিসেম্বরের গুরুত্ব আফ্রিকানদের কাছে আসে ১৮৩৮ সালের Battle of Blood River থেকে। ওই দিন ভুরট্রেকাররা জুলু সেনাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে। পরবর্তী সময়ে তারা দিনটিকে "Dingane’s Day" এবং পরে "Day of the Covenant" নামে পালন করতে থাকে। এটি আফ্রিকানদের জাতীয়তাবাদের প্রতীক হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর কাছে ১৬ ডিসেম্বরের ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। ১৯৬১ সালে আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস (ANC) তাদের সশস্ত্র শাখা গঠনের ঘোষণা দেয় এই দিনে। উদ্দেশ্য ছিল শ্বেতাঙ্গ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু করা। ফলে দিনটি কৃষ্ণাঙ্গদের কাছে প্রতিরোধ ও স্বাধীনতার প্রতীক হয়ে ওঠে।
১৯৯৪ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর সরকার দিনটিকে নতুন অর্থ দেয়। ১৬ ডিসেম্বরকে ঘোষণা করা হয় Day of Reconciliation। এর লক্ষ্য ছিল অতীতের বিভাজন ভুলে গিয়ে কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীকে একত্রে আনা। দিনটি এখন জাতীয় ঐক্য, শান্তি ও পুনর্মিলনের প্রতীক।
আজকের দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৬ ডিসেম্বর নানা কর্মসূচির মাধ্যমে পালিত হয়। রাজধানী প্রিটোরিয়া ও অন্যান্য শহরে প্যারেড, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঐতিহাসিক স্মৃতিচারণ, কনসার্ট ও জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। মানুষ অতীতের বিভাজন স্মরণ করে এবং নতুন প্রজন্মকে ঐক্যের বার্তা দেয়।
দিনটি দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে দ্বিমুখী প্রতীক বহন করে। একদিকে এটি আফ্রিকানারদের ধর্মীয় ও জাতীয়তাবাদী ঐতিহ্যের অংশ, অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনাদিবস। গণতন্ত্রের পর এটিকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক বানানো হয়, যাতে অতীতের বিভাজনকে মুছে ফেলা যায়।
logo-1-1740906910.png)