বন্ডাই বিচ হত্যাকাণ্ড: চাপে অস্ট্রেলিয়ায় মুসলিম প্রবাসীরা
অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৮
অস্ট্রেলিয়ার বন্ডাই বিচে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের পর দেশটির মুসলিম প্রবাসীরা নতুন এক সামাজিক ও রাজনৈতিক সংকটে পড়তে শুরু করেছেন। হামলায় অন্তত ১১ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়। স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোতে এ ঘটনাকে “অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জনসমাগমে হামলা” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও হামলার সঙ্গে সাধারণ মুসলিম জনগোষ্ঠীর কোনো সম্পর্ক নেই, তবুও তারাই এখন সামাজিক অবিশ্বাস, রাজনৈতিক চাপ এবং রাষ্ট্রীয় নজরদারির মুখে পড়ছেন।
বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসী হামলার পর প্রায়ই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সন্দেহের চোখে দেখা হয়। অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বন্ডাই বিচ হত্যাযজ্ঞের পর স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বিশ্লেষকরা বলছেন, “এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হলেও মুসলিম সম্প্রদায়কে আবারও ব্যাখ্যা দিতে হচ্ছে যে তারা সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে যুক্ত নয়।” ফেসবুক ও টুইটারে মুসলিম প্রবাসীরা লিখেছেন, “আমরা হামলার সঙ্গে জড়িত নই, কিন্তু এখন আমাদের দিকে আঙুল তোলা হবে।”
অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম পরিবারগুলো আতঙ্কে আছেন যে তাদের সন্তানরা স্কুলে বৈষম্যের শিকার হতে পারে। মুসলিম নারীরা হিজাব পরে বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন। স্থানীয় দৈনিক সিডনি মর্নিং হেরাল্ড জানিয়েছে, হামলার পর মুসলিম কমিউনিটির অনেকেই সামাজিক অনুষ্ঠানে যেতে সংকোচবোধ করছেন। তারা মনে করছেন, সাধারণ মানুষ তাদের প্রতি অবিশ্বাসী হয়ে উঠছে।
অস্ট্রেলিয়ার রাজনৈতিক মহলে হামলার পর মুসলিম সম্প্রদায়কে ঘিরে বিতর্ক শুরু হয়েছে। ডানপন্থী রাজনীতিবিদরা অভিবাসন নীতি কঠোর করার দাবি তুলেছেন। অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকা লিখেছে, “বন্ডাই বিচ হত্যাযজ্ঞের পর অভিবাসন নীতি নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। মুসলিম অভিবাসীদের ওপর নজরদারি বাড়ানো হতে পারে।” এ ধরনের বক্তব্য মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়াচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা ইতোমধ্যেই মুসলিম সংগঠনগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ শুরু করেছে। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বিশ্লেষকরা বলছেন, মুসলিম সংগঠনগুলোকে এখন আরো বেশি স্বচ্ছতা দেখাতে হবে। এসবিএস নিউজ জানিয়েছে, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইমামস কাউন্সিল হামলার নিন্দা জানিয়েছে এবং বলেছে, “আমরা ভুক্তভোগীদের পাশে আছি।” তবুও মুসলিম সংগঠনগুলোকে প্রমাণ করতে হচ্ছে, তারা সহিংসতার সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নয়।
এখানেই মূল দ্বন্দ্ব। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সাধারণ মুসলিমদের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা শান্তিপ্রিয় নাগরিক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার সমাজে অবদান রাখছেন। কিন্তু প্রতিবারই কোনো হামলার পর তাদেরই ব্যাখ্যা দিতে হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক মুসলিম লিখেছেন, “আমরা বারবার প্রমাণ করতে ক্লান্ত যে আমরা অপরাধী নই।” এই অবস্থাকে তারা মানসিক চাপ হিসেবে দেখছেন।
অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম কমিউনিটি নেতারা শান্তি ও সংহতির আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, “একজনের অপরাধের দায় গোটা সম্প্রদায়ের ওপর চাপানো উচিত নয়।” স্থানীয় ফেসবুক গ্রুপগুলোতে মুসলিমরা লিখেছেন, “আমরা অস্ট্রেলিয়ার অংশ, আমরা এই দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছি। আমাদের সন্দেহের চোখে দেখা বন্ধ করুন।”
আলজাজিরা ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হামলাটি ইহুদি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে করা হয়েছিল। কিন্তু এর প্রভাব পড়ছে মুসলিমদের ওপরও। কারণ পশ্চিমা সমাজে সন্ত্রাসী হামলার পর মুসলিমদের প্রতি অবিশ্বাস বাড়ে। ফলে তারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
বন্ডাই বিচ হত্যাযজ্ঞের পর অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম প্রবাসীরা দ্বিমুখী চাপের মুখে পড়েছেন। একদিকে তারা হামলার নিন্দা জানাচ্ছেন, অন্যদিকে তাদেরই সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। এটি একটি বৈপরীত্য, যেখানে অপরাধীর দায় সাধারণ মুসলিমদের ওপর চাপানো হচ্ছে। বাস্তবে তারা সন্ত্রাসবাদের শিকার, কারণ প্রতিবারই তাদের সামাজিক অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়ে।
logo-1-1740906910.png)