মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে এখন বাংলাদেশিরাই শীর্ষে। একসময় ইন্দোনেশীয় শ্রমিকরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে নির্মাণ, শিল্প, কৃষি ও পরিষেবা খাতে সর্বাধিক শ্রমিক বাংলাদেশ থেকে গেছেন। দেশটির শ্রমবাজারে বিদেশি শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ৩৭ শতাংশই বাংলাদেশি।
দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় বৈধ নথিপত্রধারী শ্রমিকের সংখ্যা ৮ লাখের বেশি হলেও বাস্তবে এর দ্বিগুণ বাংলাদেশি সেখানে কাজ করছেন বলে ধারণা করা হয়। অনেকেই শিক্ষা বা ভ্রমণ ভিসায় গিয়ে আর ফেরেননি। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ মানুষ মালয়েশিয়ায় গিয়ে আর দেশে ফেরেননি, এর মধ্যে ৩৮ শতাংশ বাংলাদেশি।
দেশটির অভিবাসন বিভাগের অভিযানে প্রায়ই বাংলাদেশিদের আটক করা হচ্ছে। নভেম্বরে ১৮২ জন এবং সেপ্টেম্বরে ৩৭৭ জন বাংলাদেশি ধরা পড়েন। তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এতে বৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যেও আতঙ্ক ও অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। অনেকেই বলছেন, প্রশিক্ষণ দিয়ে বৈধভাবে শ্রমিক পাঠানো গেলে প্রবাসী আয় আরো বাড়ানো সম্ভব।
কুয়ালালামপুরে দেখা পাওয়া শ্রমিকরা জানিয়েছেন, দালালের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করে এসেছেন, কিন্তু এখনো কাজ পাননি। রাজধানীর বাইরে কারখানায় কাজের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে টাইমস স্কয়ারে কর্মরত চুয়াডাঙ্গার মমিনুল ইসলাম জানান, দেশে জুতার দোকানে কাজ করে সংসার চালানো কঠিন ছিল। মালয়েশিয়ায় এসে মাসে ২ হাজার ২০০ রিঙ্গিত (৬৬ হাজার টাকা) আয় করছেন এবং পরিবারকে নিয়মিত অর্থ পাঠাচ্ছেন।
বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক রপ্তানি শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৫১ হাজার শ্রমিক গিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে শ্রমবাজার বন্ধ হলেও পরে শর্তসাপেক্ষে আবার চালু হয়। প্রবাসী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মালয়েশিয়া থেকে দেশে প্রবাসী আয়ও বাড়ছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আয় ছিল ২৮০ কোটি মার্কিন ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে ২৬ কোটি এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বরে ২৭ কোটি ডলার করে এসেছে।
মালয়েশিয়ার আবাসন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিতীয় নিবাস গড়ার সুযোগ দেওয়া কর্মসূচিতে বাংলাদেশিরা চতুর্থ স্থানে রয়েছেন। ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩ হাজার ৬০৪ জন বাংলাদেশি এতে অংশ নিয়েছেন। এতে আবাসন ব্যবসা আরো চাঙা হয়েছে।
logo-1-1740906910.png)