
করোনা মহামারির পর ইউরোপের অর্থনীতিতে নতুন গতি এনেছে অভিবাসীদের কর্মক্ষেত্রে সক্রিয় অংশগ্রহণ। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের (ইসিবি) প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দ সম্প্রতি এক সম্মেলনে বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার ক্ষেত্রে অভিবাসীদের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ফেডারেল অর্থনীতিবিদদের আয়োজিত সম্মেলনে তিনি জানান, ইউরোপের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ‘অভিবাসীদের সংখ্যা এবং অংশগ্রহণের হার’ একটি মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে। জার্মানির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, অভিবাসীদের অংশগ্রহণ না থাকলে দেশটির জিডিপি ২০১৯ সালের তুলনায় ছয় শতাংশ কম হতে পারত। স্পেনের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। মহামারির পর দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বিদেশি শ্রমিকদের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য।
অর্থনীতিবিদদের মতে, অভিবাসী শ্রমিকদের আগমন শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছে। তারা শ্রমঘাটতি পূরণ করে উৎপাদন চক্রকে সচল রেখেছেন, যা সরাসরি প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করেছে।
ইসিবি প্রধান আরো জানান, ২০২২ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মোট শ্রমশক্তির ৯ শতাংশ ছিল অভিবাসী। কিন্তু গত তিন বছরে শ্রমবাজারে প্রবৃদ্ধির অর্ধেকই এসেছে অভিবাসীদের মাধ্যমে। একই সময়ে প্রবীণদের কর্মসংস্থানে অংশগ্রহণও বেড়েছে। এই দুটি প্রবণতা না থাকলে ইউরোজোনভুক্ত ২০টি দেশে বেকারত্বের হার ৬.৬ শতাংশে পৌঁছাত, যা বর্তমানে ৬.৩ শতাংশে স্থিতিশীল রয়েছে।
তবে অভিবাসীদের অর্থনৈতিক অবদান সত্ত্বেও ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন এখন রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত বিষয় হয়ে উঠেছে। স্থানীয় জনসংখ্যায় প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ায় শ্রমিকের ঘাটতি পূরণে অভিবাসীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, কিন্তু রাজনৈতিক চাপের কারণে অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন লাগার্দ।
ইইউর জনসংখ্যা বর্তমানে ৪৫ কোটি ছাড়িয়েছে। এই জনসংখ্যার কাঠামোতে অভিবাসীদের অংশগ্রহণ অর্থনীতিকে গতিশীল রাখার পাশাপাশি সামাজিক ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তাই অভিবাসীদের অবদান শুধু শ্রম নয়, ইউরোপের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য।
তথ্যসূত্র: ইনফো মাইগ্র্যান্টস